দেশের সেরা অলরাউন্ডার তিনি। তবু জাতীয় দল থেকে কয়েকশো মাইল দূরে।
গত মরসুমেও রঞ্জিতে দেড়শো আছে। আছে রঞ্জির এক দিনের টুর্নামেন্টের ফাইনালে সেঞ্চুরি ও চার-চারটে উইকেট। সে দিন স্রেফ তাঁর কাছেই হেরে গিয়েছিল মুম্বই। কিন্তু ধোনির টিমে জায়গায় পাওয়া দূরের ব্যাপার, ভারত ‘এ’-তেও জায়গা হয়নি। বরং বাদ পড়েছিলেন দেওধর ট্রফি থেকে।
বুধবার সন্ধের লক্ষ্মীরতন শুক্ল তাই আলো-আঁধারিতে ভুগছেন। এক দিকে জীবনে প্রথম পাওয়া বোর্ডের স্বীকৃতি। যা তাঁকে তুলে দিচ্ছে আত্মবিশ্বাসের এভারেস্টে। অন্য দিকে, ভেতরে চোরা যন্ত্রণা। প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন, “আর কী করলে জাতীয় দলের পাসওয়ার্ড পাব? একটা ম্যাচ খেলারও কি যোগ্য আমি নই?”
এ দিনই বোর্ডের পক্ষ থেকে লক্ষ্মীর নাম ঘোষণা হয়েছে ঘরোয়া ক্রিকেটে সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে। গত মরসুমে দুর্ধর্ষ পারফরম্যান্সের জন্য। ৪৯ গড় নিয়ে ২৯৪ রান। সঙ্গে বারোটা উইকেট। বাংলা থেকে অশোক দিন্দাও পুরস্কার পাচ্ছেন। গত বছর রঞ্জিতে সবচেয়ে বেশি উইকেট তোলার জন্য। দিন্দা যে পুরস্কার পাচ্ছেন সেটা আন্দাজ করা গিয়েছিল। কিন্তু বাংলার প্রাক্তন অধিনায়কও যে পুরস্কার নিয়ে যাবেন, কেউ ভাবেনি। “এ রকম পুরস্কার পেলে অনেক গরম গরম কথাই বলা যায়। আমি সে সব বলছি না। বর্তমান নির্বাচক কমিটির উপর আমার আস্থা আছে। পারফর্ম করলে, তাঁরা নিশ্চয়ই সেটা খেয়াল করে দেখবেন। কিন্তু গত বার পূর্বাঞ্চল থেকে যিনি নির্বাচক ছিলেন, তিনি তো সব দেখেও আমার নাম প্রস্তাব করলেন না,” বলছিলেন লক্ষ্মীরতন। যিনি মনে করছেন, রঞ্জি অভিযানের দু’দিন আগে এই পুরস্কার বাড়তি আগুনের জোগান দেবে তাঁর ক্রিকেটে। “বোর্ড থেকে স্বীকৃতি এই প্রথম পাচ্ছি। তেতে তো যাবই। তবে আমাকে যত বার ধাক্কা দেওয়া হয়েছে, তত বারই ফিরে এসেছি। গত বার দেওধর থেকে বাদ দেওয়া হল। বিজয় হাজারে ফাইনালে সেঞ্চুরি আর চারটে উইকেট নিয়ে ফিরে এলাম।”
তবে বাংলার সিনিয়র অলরাউন্ডারের জীবনদর্শন বলছে, সাফল্যের আবেগে গা না ভাসাতে। লক্ষ্মীর কথায়, “জীবনে অনেক ওঠাপড়া দেখেছি। জানি, আজ আমি রাজা হলে কাল আবার ফকির হয়ে যেতে পারি। অতীত নিয়ে বাঁচিনি। এই পুরস্কার এখন অতীত। কাল থেকে নতুন যুদ্ধ। বেঁচে থাকার রসদ খুঁজতে নতুন করে নেমে পড়ব বাংলার জার্সিতে।” |