নাগেরবাজারের একটি আবাসনে এক কিশোরীকে গণধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত ফুটবলার জগপ্রীত সিংহ এবং রবি সিংহের ১৪ দিনের জেল হেফাজত হল। তবে পুরো ঘটনার দুই মূল অভিযুক্ত বলে যাঁদের দিকে আঙুল তুলেছে পুলিশ, সেই দুই ফুটবলার বলদীপ সিংহ এবং যশপাল পারমার এখনও ফেরার। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
নিষিদ্ধপল্লিতে বা নিজের ফ্ল্যাটে মহিলা সংক্রান্ত নানা ঘটনায় বহু বার জড়িয়েছেন ময়দানের ফুটবলাররা। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গণ্ডগোল করতেন বিদেশিরাই। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে গড়ফায় নিজেদের ফ্ল্যাটে একই রকম ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছিলেন মহমেডান ও কালীঘাট মিলন সংঘের তিন নাইজিরিয়ান ফুটবলারমাইকেল টায়ো, আদেওলা হাসান, ওয়াহিদ আবদুল্লা। এক যৌনকর্মী-সহ তিন জনকেই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এ বার পঞ্জাবি ব্রিগেডের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় রীতিমতো অস্বস্তিতে বড় ক্লাবের কর্তারা।
তাদের ফুটবলার বলদীপ সিংহকে বুধবার সকালেই সাসপেন্ড করেছে প্রয়াগ ইউনাইটেড। পুণে এফ সি থেকে এ বারই কলকাতায় এসেছেন বলদীপ। ক্লাব সচিব অলোকেশ কুণ্ডু বললেন, “খুব খারাপ ব্যাপার। যত দিন না ও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করছে ততদিন বলদীপ সাসপেন্ড থাকবে।” বলদীপের মতোই পলাতক যশপাল পারমার। কয়েক দিন আগেই তাঁকে রিলিজ করে দিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। লাল-হলুদ কর্তারা পারমার সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁরা পাশে দাঁড়িয়েছেন ধৃত অন্য ফুটবলার জগপ্রীত সিংহের। এ বারই চার্চিল ব্রাদার্স থেকে কলকাতায় এসেছেন পঞ্জাবের এই ফুটবলার। চোট সারিয়ে তিনি মাঠে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার বললেন, “ঘটনা যে সময় ঘটেছে তখন তো জগপ্রীত আমাদের ড্রেসিংরুমে ছিল। পুণে এফ সি-র বিরুদ্ধে বসে খেলাও দেখেছে যুবভারতীতে। মিডিয়ার লোকজনও দেখেছে। কোথাও নিশ্চয়ই কোনও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। প্রশাসনের উপর আমাদের আস্থা আছে। তবে কেউ যদি অপরাধী হয় তার শাস্তি হোক।” নিজেদের বক্তব্য জানিয়ে আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে একটি চিঠিও দিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। ব্যারাকপুরের ডিসিডিডি কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বললেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে। কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে।”
আবাসনের যে ফ্ল্যাটে ঘটনা ঘটেছে সেটি ধৃত জগপ্রীত সিংহের ভাড়া নেওয়া। ২৭ নম্বর বাড়ির তিন তলার ফ্ল্যাটটির মালিক শুভাশিস সাহা। সেখানে বর্তমানে পলাতক দুই ফুটবলারও থাকতেন। বছর ১৪-র যে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ সে ওই আবাসনের অন্য বাড়ির একটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা। এলাকার আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মেয়েটিকে মাঝেমধ্যেই বলদীপ-যশপালদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছেন তাঁরা। ওই কশোরীর বাবা জিতেন্দ্র সিংহ দমদম থানায় মঙ্গলবার অভিযোগ করেছিলেন, সোমবার দুপুরে চার অভিযুক্ত তাঁর মেয়েকে দুপুর বারোটা থেকে চারটে পর্যন্ত গণধর্ষণ করেছে। তাঁর মেয়ে বাড়িতে ফিরে অসুস্থ বোধ করার পর গোটা ঘটনাটি সে পরিবারকে জানায়। অভিযোগ পেয়ে যশোহর রোডের ডায়মন্ড সিটির (নর্থ)-এর আবাসনে যায় পুলিশ। আবাসনের লোকজন ঘিরে রেখেছিলেন ফ্ল্যাটটি। তারাই জগপ্রীত ও রবিকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। অন্য দু’জন অবশ্য আগেই পালিয়ে যায়। এ দিন ধৃতদের ব্যারাকপুরের এসিজেএম ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়ের আদালতে তোলা হলে দু’জনকেই ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারপতি। তবে সরকারি কৌসুলি অনুপস্থিত থাকায় মেয়েটির হয়ে কেউ সওয়াল করেনি। পরে বিচারক জবানবন্দি নেন মেয়েটিরও। |