মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের দেশের মাঠে পাক চ্যালেঞ্জ সামলানোর আগেই মেয়েদের ক্রিকেটে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত করল ভারত। চিনের মাঠে মেয়েদের উদ্বোধনী এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভারত মাত্র ৮১ রানের পুঁজি নিয়েও নাটকীয় ভাবে পাকিস্তানকে তার চেয়েও অনেক কম ৬৩ রানে অলআউট করে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হল।
ভারতীয় মেয়েদের কৃতিত্ব আরও বেশি এই জন্য যে, দলের সেরা ব্যাটসম্যান মিতালি রাজ এবং সেরা বোলার ঝুলন গোস্বামীর সাহায্য ছাড়াই ১৮ রানের অসাধারণ জয় তুলে নিতে পেরেছেন। অধিনায়ক মিতালি এবং বাংলার পেসার ঝুলন, দু’জনেই গোড়ালির চোটের জন্য ফাইনালের বাইরে ছিটকে যান। ভারতীয় মেয়েদের এই জয় ক্রিকেটেমহলে স্মৃতি উস্কে দিচ্ছে, ১৯৮৫-র শারজায় এক দিনের টুর্নামেন্টের ফাইনালে কপিল দেবের ভারতের মাত্র ১২৫ রান করার পরেও জাভেদ মিয়াঁদাদের পাকিস্তানকে ৮৭ রানে অলআউট করে চ্যাম্পিয়ন হওয়াকে। সেই ম্যাচে চারটে ক্যাচ লুফে সুনীল গাওস্কর যেমন জয়ের অন্যতম নায়ক হয়ে উঠেছিলেন, বুধবার ভারতীয় মেয়ে ক্রিকেট দলের উইকেটকিপার সুলক্ষ্মণা নায়েক তেমন ক্যাচ-স্টাম্পড্ মিলিয়ে চারটে শিকার ধরে দলের জয়ের অন্যতম কারিগর। |
এমনিতে সম্প্রতি মেয়েদের ভারত-পাক টি-টোয়েন্টি লড়াই সর্বদা লো-স্কোরিং হচ্ছে, যার জন্য রুদ্ধশ্বাস পরিসমাপ্তিও ঘটছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর বেশিরভাগ ম্যাচের। শ্রীলঙ্কায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তান একশো রানের কমে ইনিংস শেষ করেও ভারতকে এক রানে হারিয়েছিল। চিনে আবার গ্রুপের ম্যাচে পাকিস্তানকে ফের একশো রানের কমে আটকে রেখে ভারত জেতে। কিন্তু এ দিনের ম্যাচের উত্তেজনা আগের সব রেকর্ড ভেঙে দেয়। মিতালির পরিবর্ত অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর টস জিতে আগে ব্যাটিং নিলে তাঁর সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়ে দেখা দেয় ভারতীয় দলের উপর। তিন জন ব্যাটসম্যান শুধু দু’অঙ্কের রানে পৌঁছন। তাঁদের মধ্যে পুনম রাউত (২৫) ও হরমনপ্রীত (২০) কুড়ির ঘরে রান পান। পাক লেগস্পিনার সানা মীরকে (৪ ওভারে ৪-১৩) প্রায় কেউ ঠিকঠাক খেলতে পারেননি। জবাবে অবশ্য পাকিস্তান ইনিংসেও মাত্র তিন জন দু’অঙ্কের রান করতে পেরেছেন। তাদের সর্বোচ্চ রান ওপেনার বিশমা মারুফের ১৮। ভারতের প্রায় সব বোলারই উইকেট তুলেছেন। ১৯.১ ওভার জুড়ে প্রচণ্ড নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন অর্চনা দাস (২-১২), এন নিরঞ্জনা (২-১৫) একতা বিস্ত-রা (১-৯)। মাত্র ২ অতিরিক্ত রান ওঠে পাক ইনিংসে। সতীর্থদের সঙ্গে ট্রফি নিয়ে অধিনায়ক মিতালি বলেছেন, “এমন একটা অসাধারণ জয়ের শরিক চোটের কারণে হতে না পারায় হতাশ লাগছে ঠিকই। কিন্তু আমার দলের মেয়েদের জন্য প্রচণ্ড গর্ব হচ্ছে। এশিয়া কাপ জয়টা ভারতের মেয়েদের ক্রিকেটের পক্ষে একটা দারুণ প্রাপ্তি। যেটা সবচেয়ে স্পেশ্যাল, এই দলটা কয়েক বছর ধরে একটা পরিবারের মতো আছে। প্রত্যেকে ম্যাচে অবদান রাখে। একে অন্যের জন্য কাজ করে। এ দিনের ফাইনালেও যে জন্য ঝুলন বা আমাকে ছাড়াই এই দলটার জিততে অসুবিধে হয়নি।” |