পশ্চিম দিল্লির অশোক বিহারের ভরত নগরের মাঠ ঢেকে গিয়েছে ভোরের কুয়াশায়। হিমেল হাওয়ায় কাঁপিয়ে দিচ্ছে শরীর। ঘড়িতে সময় ক’টা হবে? এই বড় জোর ছ’টা। দূরে একটা গাছের তলায় বেঁটেখাটো দুটি ছায়া মাথা নিচু করে তখন কী যেন আলোচনায় ব্যস্ত। কাছে যেতেই চেনা গেল তাঁদের। গুরু এবং শিষ্য। সঞ্জয় ভরদ্বাজ এবং গৌতম গম্ভীর।
রানে ফেরার চেষ্টায় শুধু রঞ্জি খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়াই নয়, গত এক সপ্তাহ ধরে তাঁর ছোটবেলাকার কোচের কাছে আলাদা করে ট্রেনিং শুরু করেছেন গম্ভীর। বুধবার ছিল সে রকমই একটা দিন। গুরু-শিষ্যের কথা শেষ হওয়ার পর সঞ্জয় আনন্দবাজারকে বলছিলেন, “দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দিল্লি ফিরেই গত এক সপ্তাহ ধরে গম্ভীর আমার নেটে এসে প্র্যাক্টিস করছে। দারুণ ভাবে খাটছে। যে ভাবে পরিশ্রম করছে, তাতে মনে হচ্ছে ও যেন নতুন করে আর একবার ক্রিকেট জীবন আরম্ভ করছে।”
কোচ যখন এ কথা বলছেন, তখন পাশে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন স্বয়ং গম্ভীরও। এবং ভারতের এই বাঁ হাতি ওপেনার যে ভাবে মাথা নাড়িয়ে কোচের কথায় সম্মতি দিলেন, তাতে স্পষ্ট, রান না পাওয়ার হতাশা তাঁকে কতটা ধাক্কা দিচ্ছে। সঞ্জয় বলছিলেন, “গম্ভীরের সব থেকে বড় গুণ হল ও নিজেকে কখনও বড় খেলোয়াড় মনে করে না। নিজেকে সব সময়ই ক্রিকেটের ছাত্র বলে মনে করে।” |
এর পর গম্ভীর ডুবে গেলেন কোচের সঙ্গে ক্রিকেট আলোচনায়। কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক পাশে দাঁড়ানো কোচকে বলছিলেন, “দক্ষিণ আফ্রিকায় আমার ব্যাটিংয়ে কোথায় ভুল হচ্ছিল সেগুলো নিশ্চয়ই আপনি দেখেছেন। সেই দশ বছর বয়স থেকে আপনি আমাকে দেখছেন। তাই আমার ভুলগুলো আপনার থেকে বেশি কেউ ধরিয়ে দিতে পারবে না।”
এর পর ছাত্রকে ডেকে কোচ যে প্রেসক্রিপশন দিলেন, তা এ রকম:
এক) মনে রেখো, তুমি বড় খেলোয়াড়। তুমি নিজেই জানো, তোমার ভুল কেন হচ্ছে। তবে টেকনিকের ভুলের থেকেও তোমার সমস্যাটা মানসিক। সাফল্য পাচ্ছ না বলেই নিজেকে চাপে ফেলে দিচ্ছ। অযথা নিজের দক্ষতাকে সন্দেহ করতে শুরু করে দিয়েছ। তাই বলছি, চাপটাকে ঝেড়ে ফেলে, মাথা ঠান্ডা রেখে তোমার স্বাভাবিক খেলাটা খেল। তা হলেই দেখবে আবার ফর্ম ফিরে পেয়েছ।
দুই) মনে রাখবে তুমি যখন পর পর পাঁচটা টেস্ট সেঞ্চুরি করেছিলে, ভারত তখন টেস্ট বিশ্বে এক নম্বর জায়গায় পৌছে গিয়েছিল। ঠিক তেমনই ২০০৭ ও ২০১১ তুমি ভাল ব্যাট করায় দু’বারই ভারত বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়। তাই তোমার এখন উচিত, সেই ভাল দিনগুলোর কথা মনে রেখে, খোলা মনে খেলে যাওয়া। তোমার ‘ব্যাড প্যাচ’ ঠিক কেটে যাবে। |
কোচের কাছে পেপ-টক পর্ব শেষ হওয়ার পর গম্ভীর নেমে পড়লেন নেটে। সঙ্গী সঞ্জয়ের আর এক ছাত্র উন্মুক্ত চন্দ। চলল ঘণ্টা দু’য়েক নেট প্র্যাক্টিস। কোচের তীক্ষ্ন নজরের সামনে। প্র্যাক্টিস শেষে গাড়িতে ওঠার আগে গম্ভীর বলে গেলেন, “স্যর, বোঝাটা অনেক হাল্কা করে ফেললাম আজ।” গম্ভীরের চলে যাওয়াটা দেখতে দেখতে সঞ্জয় বলছিলেন, “ছেলেটা যে ভাবে খাটছে, দেখবেন খুব তাড়াতাড়ি ও শুধু নিজের ফর্মই ফিরে পাবে না, এই মরসুমে সব থেকে বেশি রানও করবে।”
গাড়ি তখন বেরিয়ে যাচ্ছে ভরত নগরের মাঠ থেকে। গম্ভীরদের গন্তব্য এ বার ফিরোজ শাহ কোটলা। যেখানে আর একটু পরেই শুরু হবে দিল্লি রঞ্জি দলের প্র্যাক্টিস। নিজের ফর্ম ফিরে পাওয়ার জন্য যে বিশ্রাম শব্দটাকে ডিকশনারি থেকে ছেঁটে ফেলে দিয়েছেন গম্ভীর। |