রানের খোঁজে মহারথীরা
নেটে মরিয়া সচিনকে দেখে অবাক সতীর্থরাই
জাহির খানের মারণ হাফভলি উপড়ে দিল তাঁর পিছনের স্টাম্প। খানিকক্ষণ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন সচিন। কতই বা হবে, দশ সেকেন্ড মতো। তার পরেই যে ভাবে ইকবাল আবদুল্লার বল উড়িয়ে দিলেন সোজা সাইটস্ক্রিনের উপর, তাতে নিজের ওপর রাগটাই যেন বেশি ফুটে উঠল। সুনীল গাওস্কর কয়েক দিন আগেই বলেছেন না, বয়সের ভারে সচিনের ফুটওয়ার্ক মন্থর হয়ে গিয়েছে? বুধবার ওয়াংখেড়ের নেটে টানা এক ঘন্টা ধরে সচিনের উপর থেকে একটুও নজর না সরিয়ে এই একটা ঘটনা ছাড়া কিন্তু আর তেমন কিছু দেখতে পাওয়া গেল না। বরং কতটা ক্ষুধার্ত তিনি, তা বোঝা গেল এক চিত্রসাংবাদিকের ক্যামেরার ভিউফাইন্ডারে চোখ রেখে।
ক্যামেরার লেন্সের দৌলতে নেটে থাকা সচিন যখন প্রায় চোখের সামনে, তখন তাঁর অভিব্যক্তিতে ফুটে উঠল সেই চেনা মাস্টার ব্লাস্টারের প্রত্যয়। চোয়াল শক্ত। নজর স্থির। মনেই হচ্ছিল না, এটা নিছক মুম্বই রঞ্জি দলের নেট প্র্যাক্টিস।
এমন সচিনকে আগে বহু বার দেখলেও, তখন তিনি ছিলেন ক্রিকেট দুনিয়ার শীর্ষে। সমস্ত বিতর্কের ঊর্ধ্বে। এখনও তিনিই সেরা, তবে বিতর্ক প্রায়ই তাঁর দিকে ধেয়ে আসছে। তাঁর ব্যাটে রানের জোয়ার কমতেই সারা দেশ বলতে শুরু করেছে, ‘কেন আছো?’ গাওস্করের খুব অপছন্দের সংলাপ ছিল এটা। সে জন্যই ‘কেন যাচ্ছো?’ প্রশ্নটা শুনতে শুনতেই তিনি ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন। হয়তো নেভার আগে কী ভাবে জ্বলে উঠতে হয়, সেটাই সকলকে একবার দেখিয়ে দিয়ে যেতে চান সচিন। হয়তো ওয়াংখেড়েতে চলছে তারই প্রস্তুতি।
দিলীপ বেঙ্গসরকরের কাছে প্রসঙ্গটা তুলতেই বললেন, “অনেক তো হল সচিনকে নিয়ে কথা। এ বার শুধু দেখে যান ও কী করে। এ ছাড়া এখন আর কীই বা করা যাবে?” ইদানীং সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চাইছেন না, তা মুম্বইয়ের সাংবাদিকদের কাছেই শোনা গেল। এ দিনও ক্রিকেট নিয়ে কিছু বললেন না।
এক বর্ষীয়ান সাংবাদিক বলছিলেন, “যে ভাবে ও মরিয়া হয়ে উঠেছে, তাতে ইংল্যান্ড সিরিজে একটা দারুণ কিছু দেখা যেতে পারে।” ৬ নভেম্বর অস্ট্রেলীয় মন্ত্রিসভার সদস্যরা আসছেন তাঁকে সেখানকার সর্বোচ্চ সরকারি সম্মান দিতে। মুকুটে এই নতুন পালক কি সচিনকে উজ্জীবিত করবে? সময়ই বলবে।
গত তিন দিন ধরে ওয়াংখেড়ের নেটে টানা এক ঘণ্টা করে ব্যাট করে চলেছেন তিনি। প্রথম দিন তো আরও বেশিক্ষণ ছিলেন। তার আগে বান্দ্রা-কুরলা কমপ্লেক্সেও নিয়মিত ব্যাট হাতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এক সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেলের চিত্রসাংবাদিক যেমন বললেন, “ওর পিছনে ক্যামেরা নিয়ে আর দৌড়তে পারছি না দাদা। একদিন বাচ্চাদের সঙ্গেও ব্যাট হাতে নেমে পড়ল। মাঠ দেখলেই নেমে পড়ছে। এখনও খেলার কী খিদে!”
তাঁর বহু দিনের সঙ্গী, মুম্বই রঞ্জি দলের অধিনায়ক অজিত আগরকরও অবাক নেটে এই সচিনকে দেখে। বলছিলেন, “সচিন সব সময়ই প্রচণ্ড খাটে। কিন্তু সাত-আট বছর আগের সচিন আর এখনকার সচিনের মধ্যে যে এত মিল পাব, তা সত্যিই অবিশ্বাস্য।” নেটে ব্যাট করার সময় প্রায়ই আগরকরকে কী সব বলছিলেন সচিন। দুর থেকে মনে হল, আরও বেশি করে অফ স্টাম্পে বল রাখতে বলছেন তাঁকে। জাহির খানের সঙ্গে অবশ্য তেমন কথা বলতে দেখা গেল না তাঁকে। জাহিরেরও এখন লড়াইয়ের সময়। তবে তিনিও অবিশ্রান্ত নন। মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিয়ে নিচ্ছিলেন বল করার ফাঁকে। সচিনের যেন কোনও বিশ্রাম নেই।
শেষ এক বছরে সচিন তেন্ডুলকর
৯ টেস্টে ৫৬৮ রান, সর্বোচ্চ ৯৪, গড় ৩৫.৫০
শেষ টেস্ট সেঞ্চুরি ১৪৬ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা (কেপটাউন, জানুয়ারি ২০১১)
নেটে নামলেন, টানা এক ঘন্টা ব্যাট করলেন। বেশির ভাগই ব্যাটের মাঝখান দিয়ে খেললেন। মাঠের বাইরে থেকে সেই আওয়াজও শোনা যাচ্ছিল স্পষ্ট। মাঝে মাঝে ‘লুজ বল’ পেলে উড়িয়ে দিচ্ছিলেন। সচিনের হাতে মার খেয়েও বিন্দুমাত্র দুঃখ নেই কেকেআরের তরুণ স্পিনার আবদুল্লার। বললেন, “সচিন স্যর দলে থাকা মানেই দলের চেহারা পাল্টে যাওয়া। ড্রেসিংরুম একদম অন্য রকম হয়ে যায়। ওর শৃঙ্খলা দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি। অনেক কিছু শেখার আছে সচিন স্যরের কাছ থেকে।” আগরকরের গলাতেও এক সুর, “সচিনের মুম্বই ড্রেসিংরুমে থাকাটা দলের কাছে, বিশেষ করে তরুণদের কাছে সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট। সচিন থাকা মানে পুরো দলটাই চাঙ্গা হয়ে যায়। তবে প্রথম ম্যাচ বাদে রঞ্জির অন্য ম্যাচে তো আর ওকে পাব না।”
তখন সচিন যাবেন যুদ্ধে। ‘কেন আছো?’ এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার যুদ্ধে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.