|
|
|
|
মেটানো হল ভুয়ো বিল, প্রমাণ তদন্তে |
গড়বেতায় জলপ্রকল্পে দুর্নীতি শো-কজ ইঞ্জিনিয়ার, ঠিকাদার |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
প্রকল্পই হয়নি। অথচ বিল জমা পড়েছে, মেটানো হয়েছে টাকাও। গড়বেতা ৩ ব্লকের নলবনা পঞ্চায়েতে জল প্রকল্পের ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটেছে। তদন্তে নেমে প্রশাসনও বুঝেছে, ‘ভুয়ো’ বিল জমা দেওয়া হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারের নামে পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি ‘শো-কজ’ করা হয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারকে।
কিন্তু সেপ্টেম্বরে ঘটনার সাত মাস পেরোলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়নি। কেন? পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত বলেন, “তদন্ত হয়েছে। সব দিকই খতিয়ে দেখা হয়েছে। বিডিও’কে এফআইআর দায়ের করতে বলা হয়েছে।” ঘটনার সময় বিডিও ছিলেন অমৃতা বর্মণ রায়। মাস খানেক আগে তিনি বদলি হন। তাঁর জায়গায় এসেছেন সুশোভন মণ্ডল।
যে এলাকায় এই জলপ্রকল্প, নলবনা পঞ্চায়েতের সেই মহারাজপুরে তৃণমূলেরই প্রভাব বেশি। গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, দুর্নীতিতে শাসকদলের কিছু নেতা-কর্মী জড়িত। স্থানীয় বিধায়ক তথা যুব-তৃণমূলের জেলা সভাপতি শ্রীকান্ত মাহাতো অবশ্য তা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের যোগ নেই। ওই ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ার মিলেই এ কাজ করেছেন।”
সাংসদের এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে মহারাজপুরে এই জলপ্রকল্প হওয়ার কথা ছিল। এলাকাটি ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। সেখানকার সিপিএম সাংসদ পুলিনবিহারী বাস্কে তাঁর এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রকল্পের জন্য ৫ লক্ষ ৬ হাজার ৫৭৭ টাকা বরাদ্দ করেন। তাতে পাইপলাইন, জলাধার প্রভৃতি তৈরি হওয়ার কথা। খাতায়কলমে গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি কাজ শুরু হয়। শেষ হয় এক সপ্তাহের মধ্যেই। এরপর বিল জমা পড়ে। বিল বাবদ ৪ লক্ষ ৩৯ হাজার ৮৭৯ টাকা মেটানোও হয়। পরে গ্রামবাসীদের থেকে অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তদন্ত শুরু করে। কিন্তু তদন্তের সময় জল প্রকল্পের অস্থায়ী পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছিল। দেখানোর চেষ্টা হয়েছিল, প্রকল্পটি রয়েছে। যদিও ওই পরিকাঠামো যে অস্থায়ী, তা বুঝতে সমস্যা হয়নি আধিকারিকদের। এ বিষয়ে পুলিনবিহারীবাবু বলেন, “নতুন করে কী বলব। প্রকল্প জমা দিয়েছিলাম। প্রকল্পের কাজ দেখভাল করে প্রশাসনই। কাজে দুর্নীতি হয়ে থাকলে প্রশাসনই তার তদন্ত করে যথাযথ পদক্ষেপ করবে।” প্রাথমিক তদন্তের পরে গড়বেতা ৩ ব্লকের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সাব-অ্যাসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়র (রুরাল ওয়াটার সাপ্লাই) রামশঙ্কর চক্রবর্তীকে ‘শো-কজ’ করা হয়। তবে ফেব্রুয়ারিতে না হলেও পরে ওই প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে বলে দাবি রামশঙ্করবাবুর। বুধবার তিনি বলেন, “আমি শো-কজের উত্তর দিয়েছি। পরে যে প্রকল্পের কাজ হয়েছে, তা-ও জানিয়েছি।” কিন্তু প্রশাসন মনে করছে, রামশঙ্করবাবু তাঁর নিজের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করলে, এমন ঘটনা ঘটতই না। বড়জোর প্রকল্পের ‘ভুয়ো’ বিল জমা পড়ত। কিন্তু বিল বাবদ অর্থ মেটানো হত না।
এই প্রকল্পে কাজের বরাত পেয়েছিলেন ঠিকাদার কিশোর ঘোষ। বাড়ি নলবনার দাতাল গ্রামে। প্রশাসন এই ঠিকাদার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার দু’জনের নামেই এফআইআর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নলবনা পঞ্চায়েত যেহেতু গোয়ালতোড় থানার অন্তর্গত, তাই সেখানেই অভিযোগ দায়ের হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর। জানা গিয়েছে, অভিযোগ ওঠার পর প্রকল্পের খুঁটিনাটি জানতে চেয়েছিলেন জেলাশাসক। তাঁর নির্দেশেই জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক তদন্তে যান। ফিরে এসে রিপোর্ট জমা দেন। সেই রিপোর্ট পেয়েই বিডিও’কে ওই দু’জনের নামে এফআইআর করার নির্দেশ দেন জেলাশাসক। |
|
|
|
|
|