নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
বার্ড ফ্লু পরবর্তী সময়ে জেলার পিছিয়ে পড়া ব্লকগুলিতে প্রাণিপালনে জোর দিয়েছিল সরকার। এ জন্য অর্থও পেয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুর। কিন্তু চার বছর পেরিয়ে গেলেও সেই টাকা খরচ করতে পারেনি প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর। বরাদ্দ অর্থের প্রায় ৫০ শতাংশই পড়ে রয়েছে।
কেন টাকা খরচ করা যায়নি? সদুত্তর মেলেনি দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর বাণেশ্বর চক্রবর্তীর কাছে। তিনি শুধু বলেন, “যাতে ওই টাকা খরচ করা যায়, সে জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত প্রশাসনিক গাফিলতিতেই এই অর্থ খরচ করা যায়নি। যে টাকা খরচ হয়েছিল, তাতেও অনুন্নত মানের ছাগল ও মুরগির বাচ্চা কেনা হয়েছিল। উপভোক্তাদের দেওয়ার কয়েকদিন পরেই সেগুলি মারা যায়। এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। তারপরই সাময়িক ভাবে ছাগল, শুয়োর, মুরগির বাচ্চা বিলি বন্ধ হয়ে যায়। এখনও সেই টাকা পড়েই রয়েছে।
২০০৮ সালে জেলায় বার্ড ফ্লু ছড়িয়েছিল। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ডেবরা ব্লক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্লকের প্রতিটি মুরগিকে মেরে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়। এক ধাক্কায় কয়েক লক্ষ মুরগি মেরে ফেলায় তখন মাংসের দাম আগুন হয়েছিল। এই সঙ্কট যাতে দীর্ঘস্থায়ী না হয়, সে জন্য জেলার ১০টি পিছিয়ে পড়া ব্লকে প্রাণিপালনে জোর দেওয়া হয়েছিল। বিনপুর ১, ২, নয়াগ্রাম, জামবনি, গড়বেতা ২, শালবনি, সাঁকরাইল, ঝাড়গ্রাম ও গোপীবল্লভপুর ১ ও ২ ব্লক। এ জন্য ২০০৯ সালে ৩ কোটি ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিল সরকার। সেই টাকায় গ্রামের গরিব মানুষদের নিখরচায় ছাগল, শুয়োর ও মুরগি কিনে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অর্ধেকের বেশি দেওয়া যায়নি। প্রশাসনিক পরিসংখ্যান বলছে, ১০টি ব্লকে ৩২৪০ ইউনিট (সাধারণত এক ইউনিটে ৪টি মেয়ে ও ১টি পুরুষ ছাগল থাকে, ইউনিট প্রতি খরচ ধরা হয়েছিল ৪৩৮৬ টাকা) ছাগল দেওয়া কথা ছিল। দেওয়া হয়েছিল মাত্র ১৬৫৮ ইউনিট। ১৫৮২ ইউনিট বিলি করা যায়নি। শুয়োর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ২৬০০ ইউনিট (ইউনিট প্রতি ব্যয় ৪৩১৬ টাকা)। দেওয়া হয়েছে ১৮৩৮ ইউনিট। অর্থাৎ ৭৬২ ইউনিট দেওয়া যায়নি। মুরগি বিলির কথা ছিল ১২ হাজার ইউনিট (ইউনিট প্রতি ১০টি মুরগির ছানা দেওয়ার কথা, ইউনিট প্রতি ব্যয় ৪০৮ টাকা)। দেওয়া হয়েছে ৬০৭৪ ইউনিট। ৫৯২৬ ইউনিট দেওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৫ লক্ষ টাকার মধ্যে খরচ হয়েছে ১ কোটি ৭৬ লক্ষ ৮২ হাজার ৯৮৮ টাকা। বাকি টাকা এখনও পড়ে রয়েছে। প্রতি ইউনিট যদি কোনও এক জনকে দেওয়া হয় তাহলে ৮ হাজারেরও বেশি মানুষ বঞ্চিত হয়েছেন।
শুধু তাই নয়, সেই সময় যে সব প্রাণী বিলি করা হয়েছিল, সেগুলি ছিল নিম্নমানের। ফলে, কিছুদিন পরেই সেগুলি মারা যায়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সংস্থাকে প্রাণিগুলি কেনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা রোগগ্রস্ত ছাগল দিয়েছিল, মুরগির বাচ্চাগুলোও ছিল একেবারে সদ্যোজাত। তাঁদের বাঁচিয়ে রাখা যায়নি। এ নিয়ে বিতর্কের জেরেই প্রাণী বিলি বন্ধ হয়ে যায়। তারপর আর তোড়জোড় হয়নি। ইতিমধ্যে ৪ বছর অতিবাহিত। ফের ওই অর্থ খরচ করা হবে বলে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর জানিয়েছে। এ বার প্রাণিগুলির গুণগত মানের দিকে তীক্ষ্ন নজর রাখা হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। |