দায় সারল পুলিশ, খোঁজ নেই মানসিক প্রতিবন্ধীর
মানসিক প্রতিবন্ধী যুবকটিকে দিনভর মাঠে পড়ে থাকতে দেখে থানায় নিয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয়রা। আর পুলিশ কী করল? ঝামেলা এড়াতে তাঁকে বসিয়ে দিয়ে এল রাতের লোকাল ট্রেনে। সেই ট্রেনে চেপে কোথায় তিনি গিয়েছেন, কেউ জানে না।
আরও মজার ব্যাপার, যে আমতা থানার পুলিশের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ, ওই দিন সকালেই সেখানে গিয়েছিলেন সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায় (২২) নামে ওই যুবকের বাবা। নিখোঁজ ছেলের সন্ধানে ডায়েরি করতে চেয়েছিলেন। ডিউটি অফিসার ডায়েরি না নিয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন আরও ভাল করে খোঁজার। ফলে সেই সৌরভকেই রাতে যখন থানায় নিয়ে আসা হচ্ছে, তখন পুলিশের কাছে মিলিয়ে দেখার মতো কোনও তথ্যই ছিল না। পুলিশ অবশ্য এত সবের
নিখোঁজ সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়।
ধারকাছ দিয়ে যায়নি। উটকো কুকুর-বেড়ালের মতো যুবকটিকে ঝেড়ে ফেলাতেই ছিল যাবতীয় তৎপরতা।
কখনও পার্ক স্ট্রিট বা জগাছায় ধর্ষণ, কখনও আবার বিশরপাড়া বা ইএম বাইপাসের শ্লীলতাহানি পুলিশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে বারবার। সেই অমানবিক মুখের প্রতিফলন এ বার আমতাতেও। বুধবার রাত পর্যন্ত ছেলের খোঁজ পাননি বাবা। মা শোকে শয্যাশায়ী। তবে ঘটনা ঘিরে শোরগোলে কিছুটা নড়ে বসেছে পুলিশমহল। আমতা থানার এক অফিসারকে এ দিন কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে থানার ওসি-র বিরুদ্ধেও।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার, ২৫ অক্টোবর বেলা ১১টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন সৌরভ। তাঁর মৃগী রোগও রয়েছে। আমতা থানার বসন্তপুরের চক্রবর্তীপাড়ায় সৌরভের বাড়ি। তাঁর বাবা রবীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পার্ক স্ট্রিটে বইয়ের দোকান রয়েছে। বড় ছেলে সোমনাথ তাঁকে ব্যবসায় সাহায্য করেন। বাবা ও বড় ছেলে পার্ক সার্কাস এলাকায় থাকেন। সৌরভ তাঁর মা বাণীদেবী এবং বৌদি স্বাতীর সঙ্গে গ্রামের বাড়িতেই থাকেন।
সৌরভের মা জানান, ২৫ তারিখ বিকেল গড়িয়ে অন্ধকার নামার পরেও ছেলে বাড়ি না ফেরায় তিনি পাড়ার লোকজন এবং স্বামীকে খবর দেন। খবর পেয়ে কলকাতা থেকে ফিরে আসেন রবীন্দ্রনাথবাবু। তিনি বলেন, “রাতেই আশপাশের কয়েকটি গ্রামে ছেলের খোঁজ করি। ছেলেকে না পেয়ে মিসিং ডায়েরি করতে ২৬ অক্টোবর, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ যাই আমতা থানায়।” তাঁর অভিযোগ, “ডিউটি অফিসার আমার কথা ভাল করে না শুনেই বললেন, থানা হাজতে কয়েক জন রয়েছে। দেখুন, তার মধ্যে ছেলে রয়েছে কি না। না হলে আরও ভাল করে নিজেরা খুঁজুন। এখন ডায়েরি করতে হবে না।”
আমতা থানার ওসি পার্থসারথি হালদার। —নিজস্ব চিত্র
থানা থেকে বেরিয়ে ফের ছেলের খোঁজে বেড়িয়ে পড়েন বাবা। পেঁড়ো, পুরাশ, মুন্সিরহাট, পাতিহাল, বড়গাছিয়া গ্রামে গিয়ে তিনি জনে জনে ছেলের খোঁজ করতে থাকেন। ছেলের ছবি দিয়ে লোক পাঠান ডোমজুড়েও। পরিশ্রান্ত হয়ে রাতে বাড়ি ফেরেন। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “২৭ অক্টোবর ঈদের সকালে খবর পাই ছেলেকে ব্যাতাই বন্দরের মাঠে দেখা গিয়েছে। সেখানে গিয়ে এলাকার যুবকদের কাছে ছেলের ছবি দেখাই।” ওই যুবকেরা ছবি দেখে তাঁকে জানান, শুক্রবার সকাল থেকে সৌরভ মাঠে বসেছিলেন। কয়েক বার তিনি মৃগীতে আক্রান্ত হন। পাড়ার ছেলেরাই চোখেমুখে জল দিয়ে তাঁকে সুস্থ করায়। এলাকার এক শ্রাদ্ধবাড়িতে তাঁকে খাওয়ানো হয়। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ তাঁরা ট্যাক্সিতে চাপিয়ে সৌরভকে আমতা থানায় পৌঁছে দেন।
তার পর কী করল পুলিশ? হাওড়া গ্রামীণ পুলিশের একাংশের অভিযোগ, পরের দিন ঈদ থাকায় পুলিশি বন্দোবস্তের ব্যস্ততা ছিল। এই অবস্থায় হঠাৎ এসে পড়া মানসিক প্রতিবন্ধীর দায়িত্ব নিতে চাননি থানার কয়েক জন অফিসার। শুক্রবার রাতেই হাওড়াগামী আমতা লোকালে সৌরভকে তুলে দিয়ে আসেন এক অফিসার। অভিযোগ, ওসি তাঁকে নিষেধ করেননি।
রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘শনিবার সকালে থানায় ছেলেকে নিতে গিয়ে শুনি, ছেলে নাকি নিজেই থানা থেকে চলে গিয়েছে! আমি পুলিশকর্তাদের কাছে অভিযোগ করে বলেছি, মানসিক প্রতিবন্ধী বলেই কি এই ভাবে দায় এড়াল থানার পুলিশ? যদি পুলিশ শুক্রবার সকালেই মিসিং ডায়েরি করতে দিত, তা হলে ছেলের ছবি পুলিশের খাতায় থাকত। ওকে ফিরে পেতাম। এখন ও কোথায় কী অবস্থায় আছে কে জানে।”
অভিযোগ স্বীকার করেছেন হাওড়ার পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ভরতলাল মিনা। তিনি বলেছেন, “ওই ঘটনায় প্রাণকৃষ্ণ দাস নামে এক এএসআই-কে বুধবার দুপুরে সাসপেন্ড করা হয়েছে। থানার ওসি পার্থসারথি হালদারের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমতার সার্কেল ইনস্পেক্টরকে অবিলম্বে এ ব্যাপারে সবিস্তার রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।” হাওড়া গ্রামীণ পুলিশ সূত্রের খবর, আমতা থানার ওসিকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ওই যুবককে খুঁজে আনতে নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ সুপার। আমতার ওসি-কে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “কোনও মন্তব্য করব না। যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবেন।” ওসি-কেও কি সাসপেন্ড করা হবে? পুলিশ সুপার বলেন, “বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। রিপোর্ট পেয়ে সিদ্ধান্ত নেব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.