নরেন্দ্র মোদী গুজরাত বিধানসভার নির্বাচনী প্রচার পুরো দমে শুরু করিয়া দিয়াছেন। তাঁহার আশা, তৃতীয় বারের জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রিত্বে অভিষিক্ত হওয়া, যাহা অচিরে এমনকী দেশের প্রধানমন্ত্রিত্বের গদি অভিমুখে তাঁহার দৌড়কেও ত্বরান্বিত করিবে। অন্তত তাঁহার দল বিজেপির অনেকেই অনুরূপ খোয়াব দেখিতেছেন। নির্বাচনী প্রচার পর্বে প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মোদীর কামান-গর্জন তাই অব্যাহত। একের-পর-এক গোলা কখনও সনিয়া গাঁধীর উপর, কখনও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের উপর আছড়াইয়া পড়িতেছে। সর্বশেষ গোলাটি কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সদ্য-শপথ-লওয়া রাষ্ট্রমন্ত্রী শশী তারুর-এর উদ্দেশে নিক্ষেপিত। বস্তুত, ঠিক শশীর বিরুদ্ধেও নয়, তাঁহার স্ত্রী সুনন্দা পুষ্করের বিরুদ্ধে, যিনি কোনও ভাবেই রাজনীতির সহিত যুক্ত নন। তাঁহাকে শশীর ‘৫০ কোটি টাকার বান্ধবী’ আখ্যা দিয়াছেন নরেন্দ্র মোদী। এ ধরনের মন্তব্যই হয়তো তাঁহার ‘গুজরাতহৃদয়সম্রাট’ হওয়ার জাদুমন্ত্র। কিন্তু এই মন্ত্রে ভারতভাগ্যবিধাতা হইয়া ওঠা একটু কঠিন।
মোদীর বিরুদ্ধে বর্ষিত সমবেত ধিক্কার ও ভর্ৎসনায় সেটা স্পষ্ট। নরেন্দ্র মোদী তাঁহার ‘গুজরাতি অস্মিতা’র আস্ফালন করিতে গিয়া এ ক্ষেত্রে আপন রুচিবিকারের পরিচয় দিয়াছেন। সম্পূর্ণ অনাবশ্যক এই ব্যক্তিগত আক্রমণ কার্যত তাঁহার দক্ষ প্রশাসকের ভাবমূর্তিতেই কলঙ্ক লেপন করিল। দেশের অন্যান্য দলের রাজনীতিকরা, বিশেষত মহিলা রাজনীতিকরা মোদীর এই আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদ জানাইয়াছেন। অথচ তাঁহার নিজের দল বিজেপির মহিলা সাংসদ বা নেত্রীরা (লোকসভায় দলের নেত্রী সুষমা স্বরাজও) মহিলাদের প্রতি অবমাননাকর এই মন্তব্যের নিন্দা করেন নাই। উপরন্তু দলের মুসলিম নেতা মুক্তার আব্বাস নাকভি ব্যক্তিগত আক্রমণের পর্দা চড়াইয়াছেন। নাকভি কেন মোদীর সমর্থনে ঝাঁপাইলেন, বুঝা কঠিন। হয়তো তাঁহার হিন্দুত্বের গরিষ্ঠতা-গড্ডলে গা-ভাসাইবার তাগিদ রহিয়াছে, হিন্দুহৃদয়সম্রাট মোদীর সমর্থনেই যাহা পালনের নিশ্চয়তা।
যে বাধ্যতাই তাঁহাদের থাকুক, মোদী কিংবা নাকভির মন্তব্য শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কোনও দেশবাসী অনুমোদন করেন না, করিতে পারেন না। এমন মন্তব্য ও তাহার নিহিত ভাবনায় যে একটি অসুস্থ মানসিকতার ক্রিয়া আছে, তাহা ইতিমধ্যেই নিন্দিত। বিজেপির হিন্দুত্ব নারীর প্রতি এমন অমর্যাদাকর মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি সযত্নে লালন করিলেও বৃহত্তর ভারতীয় সমাজ ইহা মঞ্জুর করে না। বরং যাহারা এ ভাবে আপন পৌরুষের আস্ফালন করে, তাহাদের কাপুরুষ ও নির্বীর্য বলিয়াই গণ্য করে। নরেন্দ্র মোদী নিজে কিংবা তাঁহার দল তাঁহার সম্পর্কে যে উচ্চাশা লইয়া ২০১৪-র নির্বাচনী মহারণের দিকে তাকাইয়া আছেন, তাহা পূরণ করিতে গেলে এ ধরনের বেফাঁস মন্তব্য হইতে নিরস্ত হওয়াই শ্রেয়। তবে সংঘ পরিবারের পাঠশালায় যাঁহারা নারীদের দেখিবার ভঙ্গি আয়ত্ত করিয়াছেন, তাঁহারা আর কত দিন স্বরূপ গোপন রাখিবেন? |