দুর্যোগ চেন্নাই, পুদুচেরিতেও |
শক্তি বাড়িয়ে আছড়ে পড়ল নীলম |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
পথে কিছুটা থমকে ছিল সে। তাতে বেড়েছিল শক্তি। নীলম বুধবার বিকেলে আছড়ে পড়ল তামিলনাড়ুর মামল্লপুরমে ঘূর্ণিঝড় হিসেবে।
ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার গতিবেগের ঝড়ে উপরে গেল গাছ, উড়ে গেল বাড়ির চাল। এমনকী বঙ্গোপসাগরে থাকা জাহাজকে তা ভাসিয়ে নিয়ে এল তীরের কাছে। র্যাফ্টে চেপে তীরের দিকে আসতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গেলেন ছয় জন। ঝড়ের পরে নামল অঝোর ধারায় বৃষ্টি। ঝড়ের ধ্বংসাবশেষ ভাসিয়ে নিয়ে গেল জলস্রোত।
মামল্লপুরম দিয়ে নীলম স্থলভূমিতে ঢুকলেও তার প্রভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত চেন্নাই এবং পুদুচেরিরও। দমকা হাওয়া আর প্রবল বৃষ্টিতে নাজেহাল মানুষ। ঝড় যে মামল্লপুরমের দিকেই এগোচ্ছে তা এ দিন সকালেই বোঝা গিয়েছিল। তাই সেখানকার সমুদ্র তীর থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাজার চারেক মানুষকে।
ঝড়ের পূর্বাভাস পেয়ে মঙ্গলবার চেন্নাই ও তামিলনাড়ুর উপকূলবর্তী জেলাগুলির সব স্কুলে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এ দিনও সেই ছুটি বলবৎ ছিল। আজ চেন্নাইয়ের সরকারি অফিসও ছুটি হয়ে যায় বেলা তিনটেয়। সরকারি এক মুখপাত্র জানান, ঝড়ের পরে উদ্ধার ও ত্রাণের জন্য রাস্তাঘাট ফাঁকা রাখতেই এই ব্যবস্থা। |
|
নীলমের তাণ্ডবে ডাঙায় এসে আটকে গিয়েছে বিশাল এক জাহাজ।
বুধবার চেন্নাইয়ের এলিয়ট সমুদ্র সৈকতে। ছবি: এ এফ পি |
দিল্লির মৌসম ভবন জানাচ্ছে, এ বার নীলমের শক্তি ধীরে ধীরে কমে আসবে। তার পরে তা কোন দিকে যায় তার উপরে নির্ভর করছে নীলমের ভবিষ্যৎ। নীলম তামিলনাড়ু উপকূল দিয়ে স্থলভূমিতে ঢুকে পড়ার পরেই পশ্চিমবঙ্গ উপকূল দিয়ে পরিমণ্ডলে ঢুকতে শুরু করেছে মেঘ। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, বৃহস্পতিবার থেকে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকায় আকাশ থাকবে মেঘলা। রাতের তাপমাত্রা বাড়বে। শীত শীত ভাবটা অনেকটাই কমে যাবে। তবে ঘূর্ণিঝড় স্থলভূমিতে কোন দিকে যাবে তার উপরেই পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন আবহবিদেরা। তবে ঘূর্ণিঝড় শক্তি কমিয়ে নিম্নচাপ হিসেবে ওড়িশার দিকে সরে এলে পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া খারাপ হতে শুরু করবে। না হলে, ওই ঘূর্ণিঝড় থেকে আর কোনও শঙ্কা পশ্চিমবঙ্গের নেই।
মঙ্গলবার যে ভাবে নীলম এগোচ্ছিল তাতে আবহবিদদের মনে হয়েছিল তা এ দিন দুপুরের মধ্যেই তামিলনাড়ু-অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল দিয়ে ঢুকে পড়বে। কিন্তু রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাওয়ায় ঘূর্ণিঝড় স্থলভূমিতে পৌঁছতে দেরি করে ফেলে। বিকেল পৌনে ছটা নাগাদ তা ঢুকে পড়ে স্থলভূমিতে।
অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলবর্তী এলাকা রায়ালসীমা এবং উত্তর তামিলনাড়ুর ভেতরের দিকে আগামি ৪৮ ঘণ্টায় প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। এক থেকে দেড় মিটার উঁচু ঢেউ উঠতে পারে সমুদ্রে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। ঝড়ের পরে যে ভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে তামিলনাড়ুর খনিগুলির খোলামুখে বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। নজরদারি রয়েছে বিভিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের উপরেও। রেল চলাচল যাতে লাইনে জল জমে ব্যাহত না হয় তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। |
|