|
|
|
|
ভাবমূর্তি পাল্টাতে উদ্যোগী এ বার মনমোহন সরকার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
রদবদলই শেষ কথা নয়, লোকসভা নির্বাচনের আগে আগামী দেড় বছর এই নতুন টিমকেই যে সরকারের ভাবমূর্তি বদলাতে হবে, সে কথা বোঝাতেই আগামিকাল মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
দুর্নীতির ধারাবাহিক অভিযোগ, মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষের মনে কংগ্রেস ও সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে। তার উপরে প্রশ্ন উঠেছে সরকারের নীতির পঙ্গুতা নিয়ে। এই অবস্থায় মনমোহন সিংহ যেমন সংস্কারের লক্ষ্যে পা বাড়িয়েছেন, তেমনই সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় বড়সড় রদবদল করে সরকারের মুখ বদলেরও চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শুধু রদবদলেই যে থেমে থাকলে চলবে না, লোকসভা নির্বাচনের আগে পুরনো সতীর্থদের পাশাপাশি এই নতুন মুখদেরও যে একজোট হয়ে সরকারের মুখ উজ্জ্বল করার চেষ্টা করতে হবে, মানুষের মন জয় করতে হবে, পাশাপাশি সরকারের প্রতি নেতিবাচক মানসিকতার পরিবর্তনও ঘটাতে হবে, তারজন্যই এই বৈঠক ডেকেছেন মনমোহন।
সরকারের এক শীর্ষ কর্তা আজ জানান, “এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হল সকলকে আমাদের সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেটি ব্যাখ্যা করা। এবং আগামী দেড় বছরে সরকারের কী রোডম্যাপ সেটিও বর্ণনা করা। প্রধানমন্ত্রী যে সব সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছেন, সেগুলি দ্রুত রূপায়ণ করতে হবে। তার পাশাপাশি বিনিয়োগের পরিবেশও ফিরিয়ে আনতে হবে। বিশেষ করে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বড় বিনিয়োগ জরুরি। বিভিন্ন মন্ত্রকের সঙ্গে সমন্বয়ও ঘটাতে হবে। এই কাজটি যাতে সুষ্টুভাবে রূপায়িত হয়, তাই প্রধানমন্ত্রী সকলকে ডেকে সরকারের রোডম্যাপটি বোঝাতে চান।”
অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম ইতিমধ্যেই দেশের আর্থিক হাল ফেরাতে একটি ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করেছেন। আগামী পাঁচ বছরে রাজকোষ ঘাটতি অর্ধেকের বেশি কমিয়ে আনতে চান তিনি। ঘাটতি কমানোর পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানোর লক্ষ্যে পদক্ষেপ করলে লগ্নিও বাড়বে। আর তাতে বৃদ্ধির হারও আরও বাড়ানো যাবে। সে ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধিতেও লাগাম কষা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। আগামিকালের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি চিদম্বরমও আর্থিক পরিস্থিতির হাল-হকিকত ব্যাখ্যা করবেন। ভর্তুকির ছাঁটাই করে এর সুফল শুধুমাত্র গরিব লোকের কাছে পৌঁছে দেওয়াও এখন লক্ষ্য সরকারের। আয় বাড়ানোর পথ হিসাবে প্রত্যক্ষ কর বিধি, পণ্য ও পরিষেবা কর দ্রুত কার্যকরও করতে চাইছে কেন্দ্র।
মনমোহনের এই দাওয়াইয়ের আঁচ ইতিমধ্যেই মন্ত্রীরা পেয়েছেন। মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়েই তাই পবন বনশলরা রেলের ভাড়া বাড়িয়ে রেল পরিষেবা আরও উন্নত করার পথে হাঁটতে চাইছেন। ইউপিএর প্রথম জমানায় বাম ও দ্বিতীয় জমানায় তৃণমূলের জন্য সংস্কারের কাজে হাত দিতে পারেননি মনমোহন। কিন্তু এ বারে মন্ত্রিসভা ঢেলে সাজানোর পর অপ্রিয় হলেও কিছু সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন মনমোহন। অনেক নবীন মুখকেও এ বারে মন্ত্রিসভায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, সচিন পাইলটের মতো নবীন নেতাদের পদোন্নতি হয়েছে। গতকাল মিলিন্দ দেওরাকে তথ্য ও যোগাযোগ, জাহাজ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। পানাবাকা লক্ষ্মীকে পেট্রোলিয়াম ও লালচাঁদ কাটারিয়াকে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রবীণের সঙ্গে নবীনের মেলবন্ধন করিয়েই প্রধানমন্ত্রী যে নতুন টিম তৈরি করেছেন, এ বারে তাঁদেরকে সরকারের রোডম্যাপ রূপায়ণে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেবেন মনমোহন। সরকারের এক শীর্ষ মন্ত্রীর কথায়, “এখন যদি অপ্রিয় সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয়, তা হলে অদূর ভবিষ্যতে কোনও দিনই অর্থনীতি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। আজ কংগ্রেসের বদলে বিজেপিও যদি সরকারে থাকত, তাহলে তাদেরও এই ধরণের অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে হত।” আগামিকালের বৈঠকের আগেই প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পুলক চট্টোপাধ্যায় আজ অর্থ ও অন্যান্য মন্ত্রকের শীর্ষ আমালদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বড় বড় প্রকল্পগুলি যাতে দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়া হয়, তার জন্য জাতীয় বিনিয়োগ বোর্ড গঠনের বিষয়টি শীঘ্রই ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। |
|
|
|
|
|