মেট্রোর সুরক্ষায় নয়া ব্যবস্থা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন
শিশু কোলে নিয়ে এক মহিলা উঠলেন। পরের স্টেশনে নামার সময়ে তাঁর ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে বাচ্চার দুধের বোতলটি মেট্রোর মেঝেতে পড়ে গেল। তার পরে কয়েক মুহূর্ত। বোতলটি থেকেই ঘটল বিস্ফোরণ। চলন্ত মেট্রোতেই প্রাণ হারালেন প্রায় হাজার দুয়েক যাত্রী।
না, বাস্তবে এমনটি ঘটেনি। এটি পরিচালক সুজয় ঘোষের ‘কহানি’ ছবির দৃশ্য। কিন্তু মেট্রোর নিরাপত্তা জোরদার না হলে কী হতে পারে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে ওই দৃশ্যে।
বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনগুলির হুমকি থাকায় যাত্রী-নিরাপত্তা নিয়ে গত তিন বছর ধরে রেলের জোনগুলিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তার মধ্যে একটি পরিকল্পনা হল ‘ইন্টিগ্রেটেড সিকিউরিটি সিস্টেম’ বা ‘আইএসএস’। আর তা প্রথম রূপায়িত হচ্ছে কলকাতা মেট্রো রেলে। প্রায় ৩৫ কোটি টাকা খরচ করে আনা হয়েছে ২৩টি এক্স-রে স্ক্যানার যন্ত্র। যা বসানো হবে মেট্রো স্টেশনগুলিতে। পাশাপাশি, আনা হচ্ছে উন্নত মানের ৩০০টি নাইট ভিশন ক্যামেরা। সেগুলিও বসানো হবে মেট্রো স্টেশনগুলিতে।
এ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। কিন্তু মেট্রোর ২৩টি স্টেশনে ঢোকা এবং বেরোনোর জন্য প্রায় ১০০টি গেট রয়েছে। সেখানে ওই ২৩টি এক্স-রে স্ক্যানার বসিয়ে কী ভাবে সুরক্ষা বাড়ানো হবে, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মেট্রোকর্তারা ওই যন্ত্র বসানোর কথা প্রচারে আনার পরে তাঁদেরই একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, “বিষয়টি লোক দেখানো। না হলে, চতুর্দিক খোলা। হঠাৎ একটি গেটে একটি স্ক্যানার বসছে কেন?”
মেট্রোর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রত্যুষ ঘোষ অবশ্য বলেন, “সকলকে নয়, সন্দেহজনক মাল অথবা বড় বড় বাক্সগুলি দেখে নেওয়ার জন্য আপাতত ওই মেশিন বসানো হচ্ছে।”
অর্থাৎ, যে গেটে আপাতত স্ক্যানার থাকছে না, সেই গেট দিয়ে অনায়াসেই মাল নিয়ে ঢোকা যাবে। না হলে ওই যাত্রীকে অহেতুক ঘুরে স্ক্যানার-গেট দিয়ে যেতে হবে।
দিল্লি মেট্রোয় (ডিএমআরসি) ওই স্ক্যানার বসানো রয়েছে অনেক আগে থেকেই। সেখানে প্ল্যাটফর্মে ঢোকা বেরোনোর রাস্তায় বসানো আছে ওই মেশিন। কিন্তু দিল্লি মেট্রোর যাত্রী-সংখ্যার তুলনায় কলকাতা মেট্রোয় যাত্রী অনেক বেশি। আর ভিড় থাকবে বলে যে গেটেই স্ক্যানার থাকবে, সেখান দিয়েই যাত্রীদের প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে বা বেরোতে অনেক বেশি সময় লাগবে। আর দিল্লি মেট্রোর মতো এখানে অত জায়গা নেই। ফলে ওই স্ক্যানার দিয়ে যাত্রীদের নিয়ে যেতে গেলে সারক্ষণই লম্বা লাইন থাকবে। শুরু হবে বাদানুবাদও।
রেলের এক কর্তা বলেন, “দিল্লি মেট্রোর মতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে গেলে কলকাতা মেট্রোর পরিকাঠামো আগে ঢেলে সাজার ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে গোলমাল পাকিয়ে যাবে।” মেট্রোর কর্তাদের একাংশ মনে করেন, এ সব করার আগে ভেবে নেওয়া উচিত ছিল। মেট্রোর যাত্রী সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। পুজোর সময়ে তা ৬ লক্ষ ৯৩ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। পূর্ব রেলের প্রণবানন্দ হল্ট স্টেশনটি চালু হলে যাত্রী-সংখ্যা আরও কয়েক হাজার বাড়বে। রেল বোর্ডের প্রাক্তন কর্তা সুভাষরঞ্জন ঠাকুরের কথায়, “স্থানীয় ভাবে আলাদা করে মেট্রোর নিরাপত্তার পরিকল্পনা করা উচিত। দিল্লির মতো ভাবতে গেলে অসুবিধা হবে। নিরাপত্তার সঙ্গে যাত্রীদের সুবিধার কথাও তো মাথায় রাখতে হবে।”
এ দিকে পুলিশকর্তাদের আশঙ্কা, জঙ্গিদের হাতে যে ধরনের সরঞ্জাম এখন এসেছে, তাতে তা এই স্ক্যানারেও ধরা পড়ার কথা নয়। যেমনটি ছিল ‘কহানি’ ছবিতে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.