রিজওয়ানুর-কাণ্ডে দুই প্রাপ্তবয়স্ক তরুণ-তরুণীর বিয়ে সংক্রান্ত সমস্যায় মাথা ঘামিয়ে সমালোচিত হয়েছিল পুলিশ। এ বার ‘এক্তিয়ার-বহির্ভূত ভাবে’ দুই অংশীদারের ব্যবসার গোলমালের মধ্যে ঢুকে এক পক্ষকে থানার লক-আপে বন্দি করে জোর করে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠল কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে।
ঘটনার তদন্তে নেমে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন জানতে পারল, এক পক্ষের স্বার্থরক্ষার জন্য অন্য পক্ষের দু’জনকে সরকারি ভাবে গ্রেফতার না-করেই লক-আপে রাখা এবং তাঁদের দিয়ে জোর করে সাদা কাগজে সই করিয়ে জবরদস্তি টাকা আদায় করা হয়েছে। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট টালা থানার ওসি এবং এক সাব-ইনস্পেক্টরের বিরুদ্ধে সরকারের কাছে বিভাগীয় তদন্ত শুরুর সুপারিশ করেছে কমিশন।
কমিশনের মতে, ওই দুই অফিসার নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুই ব্যক্তির ক্ষতি করেছেন। এতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। সুপারিশে কমিশন বলেছে, এ ক্ষেত্রে পুলিশ একটি দেওয়ানি বিষয়ে সম্পূর্ণ এক্তিয়ার-বহির্ভূত ভাবে হস্তক্ষেপ করেছে। আগামী ছ’সপ্তাহের মধ্যে ওই দুই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করেছে কমিশন।
রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের যুগ্ম সচিব সুজয় হালদার বলেন, “সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে কমিশনের মনে হয়েছে, দুই অভিযোগকারী সন্তোষকুমার জয়সোয়াল ও বিকাশকুমার গুপ্তের মানবাধিকার পুলিশের হাতে লঙ্ঘিত হয়েছে। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত দুই অফিসারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।” ইতিমধ্যেই ওই সুপারিশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে মহাকরণে।
কমিশনের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ জমা পড়ে গত বছরের ২০ ডিসেম্বর। কাশীপুর রোডের বাসিন্দা সন্তোষ জয়সোয়াল ও বিকাশ গুপ্ত তাঁদের অভিযোগে জানান, সুদীপ দাস নামে এক জনের সঙ্গে তাঁরা ব্যবসা শুরু করেছিলেন। ব্যবসাটি না দাঁড়ানোয় তাঁরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন। তাঁদের দু’জনের কাছে সুদীপ দাসের কিছু টাকাও পাওনা হয়। কিন্তু সুদীপের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে টালা থানার সাব-ইনস্পেক্টর জ্যোতির্ময় বারুই ক্রমাগত সন্তোষ ও বিকাশকে ফোন করে হুমকি দিয়ে টাকা ফেরত চান। সন্তোষ ও বিকাশের অভিযোগ, যে পরিমাণ টাকা সুদীপের পাওনা ছিল, তার চেয়ে বেশি টাকা তাঁর হয়ে ফেরত চেয়ে হুমকি দিচ্ছিলেন ওই এসআই। তাঁদের বক্তব্য, গত বছর ১৫ অক্টোবর রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ সন্তোষ ও বিকাশকে ফোন করে টালা থানায় ডেকে পাঠিয়ে লকআপে আটকে সুদীপ দাসের ওই পাওনা টাকা ফেরত দিতে বলা হয়। যতক্ষণ না টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ তাঁদের লকআপে আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, টাকা পাওয়ার পরেও জোর করে তাঁদের দিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ পেয়ে খোঁজখবর নিয়ে কমিশন জানতে পারে, টালা থানার ওসি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় সুদীপ দাসের অভিযোগ পেয়ে এসআই জ্যোতির্ময় বারুইকে খোঁজখবর নিতে দায়িত্ব দেন। ওসি এটাও জানান, কারও পাওনা টাকা উদ্ধার করার ক্ষেত্রে কিংবা আর্থিক বিবাদ মেটানোর ব্যাপারে পুলিশের কিছু করার নেই। কমিশনের বক্তব্য, তাদের সামনে হাজির হয়ে জ্যোতির্ময়বাবু জানান, সুদীপ দাসের টাকা পাইয়ে দেওয়ার বিষয়টি সত্যি।
অভিযুক্ত ওসি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “যা বলার মানবাধিকার কমিশনকে বলেছি।” তবে অন্য অভিযুক্ত এসআই জ্যোতির্ময় বারুই বুধবার বলেন, “আমার বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যা।”
এর আগে ব্যঙ্গচিত্র-কাণ্ডে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র ও তাঁর সমবায়ের সম্পাদক সুব্রত সেনগুপ্তের উপরে পুলিশি নির্যাতনের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণের সুপারিশ করেছিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। রাজ্য সরকার অবশ্য তা মানেনি।
এ দিন যুগ্ম কমিশনার জাভেদ শামিম শুধু বলেন, “আমি এখনও বিষয়টি জানি না।” |