অন্য ধাঁচের লগ্নি
সোনায় সঞ্চয়
জ নতুন নয়। সোনা বরাবরই বিনিয়োগকারীর বিশ্বস্ত বন্ধু। সম্প্রতি অবশ্য তার কদর বেড়েছে আরও। কারণ, কয়েক বছর ধরেই সারা বিশ্বে সোনার দাম বাড়ছে প্রায় লাফিয়ে লাফিয়ে। কিন্তু সোনা কেনা মানে কি শুধু হলুদ ধাতুকেই ঘরে আনা? না কি তা কিনে রাখা যায় কাগজেও? কী কী ভাবে সোনায় লগ্নি করতে পারবেন আপনি? চলুন, আজকের আলোচনায় না হয় এ সব প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজি।

লগ্নি সম্ভব দুই পথেই
মূলত দু’ভাবে সোনায় লগ্নি করা সম্ভব—
(১) ফিজিকাল গোল্ড অর্থাৎ সরাসরি সোনার বার বা গয়না, বিস্কুট, মুদ্রা (কয়েন) ইত্যাদি কেনা। একে সাধারণত কাঁচা সোনা কেনা বলা হয়।
(২) পেপার গোল্ড-এ বিনিয়োগ। এ ভাবে সোনায় লগ্নি করা যায় এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ), মিউচুয়াল ফান্ডের গোল্ড ফান্ড এবং কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বা পণ্য লেনদেনের বাজারে সোনা কেনা-বেচার মাধ্যমে। এই ব্যবস্থায় সাধারণত সোনা হাতে পাওয়া যায় না। তার পরিবর্তে হাতে আসে কিছু নথি। এ নিয়ে বিশদ আলোচনা একটু পরেই করব আমরা।

গয়না বা কাঁচা সোনা কেনার সুবিধে-অসুবিধে
অসুবিধার কথা বলার আগে সুবিধাটা বলে নেওয়া ভাল। সুবিধা হল, টাকা দিলেই চটজলদি গয়না বা কাঁচা সোনা হাতে পাবেন আপনি। কিন্তু কাগজে কেনার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই তা হাতে পাওয়া যায় না। নথির মাধ্যমেই সোনার লেনদেন হয়। তাই গয়না যেমন বিক্রি করে টাকা পাওয়া ছাড়াও ব্যবহার করা যায়, কাগজে সোনা কিনলে সেই সুবিধে নেই।
তেমনই অসুবিধা হল, গয়না কেনার সময় মজুরির টাকাও গুণতে হয় আপনাকে। অথচ বিক্রির সময় সেই টাকা ফেরৎ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। পেপার গোল্ড কিংবা কয়েন-সহ অন্য কাঁচা সোনায় সেই অসুবিধা নেই। তবে গয়না বা কাঁচা সোনার নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণের হ্যাপা অনেক। কাগজে সেই সমস্যা নেই।
গোল্ড ইটিএফ কী?
বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ড গোল্ড ইটিএফ বাজারে ছাড়ে। ওই তহবিলে সংগৃহীত টাকা দিয়ে সংশ্লিষ্ট ফান্ড সোনা কেনে। আপনার টাকা দিয়ে যে পরিমাণ সোনা কেনা হবে, তার ভিত্তিতেই ইটিএফ ইউনিট পাবেন আপনি। যেমন ধরুন, অনেক সংস্থা এক গ্রাম সোনায় একটি ইউনিট দেয়। অনেকে আবার ওই ইউনিট দেয় ২ গ্রাম বা তার থেকে বেশিতে।

গোল্ড ইটিএফে লগ্নি কী ভাবে?
আগেই বলেছি ফান্ডগুলি যখন ইটিএফ বাজরে ছাড়ে, তখন সরাসরি তাতে লগ্নি করা যায়। শেয়ারের মতো একেও ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং (আইপিও) বলে। এর পর ইটিএফ ইউনিটগুলি শেয়ার বাজারে লেনদেন করা যায়। তাই আইপিও-তে অংশ না নিয়েও বাজারের মাধ্যমে ইটিএফে যে কোনও সময় লগ্নি করতে পারেন আপনি। আবার নিজের সুবিধামতো যে কোনও সময়ে তা ফের
শেয়ার বাজারে বিক্রি করে লাভের টাকা ঘরে তুলতে পারবেন। সোনার দামের ওঠা-পড়ার উপর নির্ভর করে শেয়ার বাজারে ওঠে-নামে ইটিএফ ইউনিটের দামও।

কিলোয় কিনলে হাতে সোনা
ইটিএফে আপনি এক গ্রাম বা অনেক সময় তার থেকে কম সোনাও কিনতে পারেন। তবে অন্তত এক কিলোগ্রাম সোনা কিনলে তবেই তা ডেলিভারি নিতে পারেন আপনি। সহজ কথায়, সোনা পেতে পারেন হাতে-নাতে। সোনার পরিমাণ তার থেকে কম হলে, শুধুমাত্র শেয়ার বাজারে ইউনিট বিক্রি করে তা ‘এনক্যাশ’ করা যাবে।

‘সোনা কেনা’র প্রথম ধাপ
এ ক্ষেত্রে সোনা বলতে কিন্তু গোল্ড-ইটিএফের কথা বলছি আমরা। যেহেতু তা শেয়ার বাজারে লেনদেন হয়, তাই প্রথমেই ডি-ম্যাট অ্যাকউন্ট খুলতে হবে। আইপিও এবং পরবর্তী পর্যায়ে বাজারে লেনদেন, উভয় ক্ষেত্রেই তা প্রয়োজন। আইপিও-র ক্ষেত্রে সরাসরি মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থার কাছ থেকেই ইউনিট কেনা যাবে। আর পরে ব্রোকারের মাধ্যমে ‘সেকেন্ডারি মার্কেট’ বা শেয়ার বাজার থেকে কেনা যাবে ইটিএফ ইউনিট। সে ক্ষেত্রে অবশ্য ব্রোকারের কাছে ক্লায়েন্ট অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।

গোল্ড ফান্ডের গোড়ার কথা
বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ড মাঝেমধ্যেই গোল্ড ফান্ড প্রকল্প বাজারে ছাড়ে। সংগৃহীত অর্থ লগ্নি করা হয় ইটিএফে। যে ভাবে ফান্ডগুলি শেয়ার বা ঋণপত্রে বিনিয়োগ করে, একই ভাবে গোল্ড ইটিএফেও লগ্নি করে তারা।

ফান্ডে লগ্নির এক-দুই-তিন
যখন গোল্ড ফান্ড প্রথম বাজারে ছাড়া হবে, তখন আবেদনপত্র ভর্তি করে লগ্নি করতে পারেন। সাধারণত প্রতি ইউনিটের দাম হয় ১০ টাকা। প্রথম পর্যায়ে নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে লগ্নি করলে ওই দামেই ইউনিট কেনা যাবে। কিন্তু তার পর লগ্নির সময় যে নেট অ্যাসেট ভ্যালু (ন্যাভ) থাকবে, সেই দামেই ইউনিট কিনতে হবে। কেনা যাবে সংশ্লিষ্ট ফান্ড সংস্থার কাছ থেকেই।

এসআইপি-র সুবিধা
গোল্ড ফান্ডে সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান বা এসআইপি ব্যবস্থায় লগ্নি করতে পারেন। মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নির মতো এখানেও মাসে অন্তত ৫০০ টাকা রাখতে হবে। ইটিএফে কিন্তু এসআইপি-র সুবিধা নেই।
আর ইউনিট বিক্রি?
মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থার কাছে যেমন ইউনিট কিনতে হবে, তেমনই তা বেচতেও হবে তাদের কাছে। তবে ইচ্ছে করলে পুরোটা বিক্রি না-করে আংশিক ভাবে বেচার সুযোগ রয়েছে।

হিসেবে রাখুন এক্সিট লোড-ও
তবে মনে রাখবেন, গোল্ড ফান্ডে লগ্নির এক বছরের মধ্যে ইউনিট বিক্রি করে লগ্নি তুলে নিলে, ফান্ড কিন্তু একটা চার্জ নেবে আপনার কাছ থেকে। একে বলে এক্সিট লোড। তাই এর হার কী হবে, গোড়া থেকেই তা স্পষ্ট জেনে রাখা জরুরি। এবং এক বছরের মধ্যে ইউনিট বিক্রি করে টাকা তুলে নিতে চাইলে, লাভ-ক্ষতির অঙ্ক কষার সময় এক্সিট লোড-কেও হিসেবের মধ্যে রাখুন।

কমোডিটি এক্সচেঞ্জে কেনা-বেচা
• কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বা পণ্য লেনদেনের বাজারে সোনা বেচা-কেনার জন্য প্রথমে ব্রোকারের কাছে যেতে হবে। খুলতে হবে ক্লায়েন্ট অ্যাকউন্ট। এ ক্ষেত্রে ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট অবশ্য বাধ্যতামূলক নয়।
• এর পর বাছতে হবে সোনার ‘লট’। সাধারণত ১০ গ্রাম থেকে ১ কিলোগ্রাম পর্যন্ত এক-একটি লট হয়। যে লট আপনি বাছবেন, তার মোট দামের ১০ শতাংশ টাকা জমা রাখতে হবে ব্রোকারের কাছে। একে বলে ‘মার্জিন মার্নি। ওই মার্জিন মানি দিয়েই কিন্তু পুরো লটেরই মালিক হতে পারেন আপনি।
• টাকা দেওয়ার পর হাতে পাবেন লেনদেনের নথি। নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে (কনট্র্যাক্ট পিরিয়ড) পুরো টাকা দিয়ে সোনা ডেলিভারি নিতে পারেন।
ডেলিভারি নেওয়া কি বাধ্যতামূলক?
না। তবে সে ক্ষেত্রে কিন্তু চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সোনা বেচে দিতে হবে আপনাকে। যে দরে কিনেছিলেন, বেচার সময় সোনার দাম তার থেকে বেশি হলে, লাভের টাকা ঘরে তুলতে পারবেন আপনি। আর যদি দাম কমে, তা হলে মার্জিন মানি থেকে লোকসানের টাকা কেটে বাকিটা ফিরিয়ে দেবে ব্রোকার।

কর ছাড়ের সুবিধা
যে কোনও ক্ষেত্রেই লগ্নির সময় তাতে কর-ছাড়ের কী কী সুবিধা মিলবে, তার খোঁজ-খবর করি আমরা। সোনাও তার ব্যতিক্রম নয়। এ ক্ষেত্রে ফান্ডে লগ্নি করার পর অন্তত এক বছর তা ধরে রাখলে, দীর্ঘ মেয়াদি ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্সের সুবিধা পাবেন আপনি। অর্থাৎ, সে ক্ষেত্রে শুধু লাভের অঙ্কের উপর ১০ শতাংশ কর দিলেই চলবে। কোনও আয়কর দিতে হবে না। কিন্ত এক বছরের মধ্যে বিনিয়োগ তুলে নিলে, লাভের অঙ্ক আয়করের আওতায় পড়বে। সুতরাং সে ক্ষেত্রে লগ্নিকারী যদি ৩০ শতাংশ আয়কর বন্ধনীর মধ্যে থাকেন, তা হলে তাঁকে লাভের অঙ্কের উপর ওই ৩০ শতাংশ কর দিতে হবে।

তবে ইটিএফে দীর্ঘকালীন বা লং টার্ম ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্সের সুবিধ পেতে অন্তত ৩ বছর লগ্নি তোলা যাবে না। একই ভাবে সরাসরি গয়না বা কাঁচা সোনা কেনার অন্তত ৩ বছর পর তা বিক্রি করলে, তবেই পাওয়া যাবে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্সের সুবিধা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.