মিউচুয়াল ফান্ড
জানুন, বুঝুন, তার পরই এগোন

ক্যুইটি ফান্ড নিয়ে এক দফা আলোচনা হয়েছে আগের বারই। বড় সংস্থায় লগ্নি বা বিভিন্ন ধরনের সংস্থার শেয়ারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে লগ্নি করা নিয়ে কিছু কথা বলেছিলাম তখন। এ বার একটু গভীরে গিয়ে নজর রাখব গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে। যার মধ্যে রয়েছে ফান্ডের রকমফের, লগ্নিকারীদের জন্য বাছাইয়ের সুযোগ, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে জড়িয়ে থাকা ঝুঁকির পরিমাণ ইত্যাদি।

খেলাটা অনেক বড়
মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে শেয়ার বাজারে লগ্নির পরিসরটা অনেক বড়। আর সেখানে আপনাকে খেলতে হবে দক্ষ দাবাড়ুর মতো। মানে ফান্ড পরিচালককে আপনার শর্তগুলো জলের মতো সহজ করে বুঝিয়ে দিতে হবে। কাজেই লগ্নিকারী হিসেবে শুধু কত রকমের ফান্ড রয়েছে, তা জানাই শেষ কথা নয়। কোথায় ঝুঁকির পরিমাণ কী দাঁড়াচ্ছে সে সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।

জনপ্রিয় পথ
ইক্যুইটি ফান্ডে লগ্নির অনেকগুলি পথ আছে। যার মধ্যে বিভিন্ন বড় সংস্থার শেয়ারে (লার্জ-ক্যাপ) লগ্নি করা এবং নানা রকম ক্ষেত্রের বিভিন্ন সংস্থার শেয়ারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে (ডাইভার্সিফায়েড) টাকা খাটানোর পথ জনপ্রিয়। এই দু’ধরনের লেনদেনের অধিকাংশটাই হয় ‘ইনডেক্স স্টকস’-এ। যে সমস্ত সংস্থার শেয়ার নিয়ে সেনসেক্স, নিফটি ইত্যাদি সূচক তৈরি হয়, তাদের শেয়ারই ইনডেক্স স্টকস।

গুরুত্বপূর্ণ যারা
জনপ্রিয়তায় লার্জ-ক্যাপ বা ডাইভার্সিফায়েড-এর তুলনায় পিছনে থাকলেও, বেশ গুরুত্বপূর্ণ ফান্ড মিড-ক্যাপ। নামই বুঝিয়ে দিচ্ছে ফান্ডের চরিত্র। মিড-ক্যাপ মানে মাঝারি মাপের সংস্থার শেয়ারে যে ফান্ড লগ্নি করে। এখানে বড়-মাঝারি-ছোট সবই কিন্তু বিচার হয় শেয়ার মূলধনের (মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন) ভিত্তিতে। সংস্থার শেয়ার মূলধন= শেয়ারের বর্তমান দাম X শেয়ার সংখ্যা।

বৈচিত্রেই ফায়দা
প্রকৃতপক্ষে এমন ফান্ডও রয়েছে, যা বড়, মাঝারি ও ছোট সমস্ত ধরনের সংস্থার শেয়ারে মিলিয়ে-মিশিয়ে লগ্নি করে। এই বৈচিত্র আসলে ফান্ডগুলির বাজারের সমস্ত দিক থেকেই ফায়দা তোলার একনিষ্ঠ চেষ্টা।

সাহসীদের সেক্টর ফান্ড
সেক্টর বা শিল্পভিত্তিক ফান্ডে লগ্নি সীমাবদ্ধ থাকে নির্দিষ্ট একটি শিল্পের মধ্যে। অর্থাৎ একটি শিল্পেরই একাধিক সংস্থার শেয়ারকে লগ্নির জন্য বাছা হয়। ভোগ্যপণ্য, ওষুধ ও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে এই ধরনের লগ্নি করতে দেখা যায় বেশি। কাজেই যাঁরা ঝুঁকি নিতে ভালবাসেন সেক্টর ফান্ড তাঁদের জন্য। এখানে ওই নির্দিষ্ট ক্ষেত্র ভাল করলে, আপনি রাজা। ডুবলে, পুরো টাকাই জলে।
কারণ, কোনও নির্দিষ্ট সময়ে একটি শিল্প আশানুরূপ ফল না-ই করতে পারে। সেই অনুযায়ী হয়তো দেখা গেল যে এক সঙ্গে শেয়ার দর পড়ে গেল ওই ক্ষেত্রের সব সংস্থার। তখন কিন্তু ন্যাভ নামবে হু হু করে। স্বাভাবিক ভাবেই ডাইভার্সিফায়েড ফান্ডে এই ঝুঁকি সেক্টর ফান্ডের তুলনায় অনেক কম। সেখানে এক ক্ষেত্রের খারাপ ফলাফল পুষিয়ে দিতে পারে অন্য কোনও শিল্প।
এখানে একটা পরামর্শ দিয়ে রাখি যে, ইক্যুইটি ফান্ডে লগ্নি করতে এসে প্রথমেই সেক্টর ফান্ডের দিকে ঝুঁকবেন না। আগে ডাইভার্সিফায়েড ফান্ডে টাকা ঢেলে নিজের আত্মবিশ্বাসের জায়গাটা পাকা করুন। মুনাফা ঘরে তুলুন। তার পরে সময় ও সামর্থ্য থাকলে লেগে পড়ুন সেক্টর ফান্ডের পেছনে।

ইক্যুইটি ফান্ডের খুঁটিনাটি
• শেয়ার মূলধন, পরিচালনার পদ্ধতি (অ্যাক্টিভ/প্যাসিভ) ইত্যাদির ভিত্তিতে হাজারো রকমফের রয়েছে ইক্যুইটি ফান্ডের দুনিয়ায়।
• যে কোনও লগ্নিতেই ভরপুর ঝুঁকি। কোনওটায় হয়তো একটু বেশি।
• ফান্ডের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়াতে পারে ভুল শেয়ার বাছাই, ফান্ড পরিচালনার কৌশলে খামতি।
• দীর্ঘ মেয়াদের লগ্নিতে সাধারণত মুনাফা হয়। তবে তার কোনও গ্যারান্টি কিন্তু দেওয়া মুশকিল।
• ফান্ডের লগ্নি বিভিন্ন ধরনের শেয়ারে ছড়ানো-ছিটানো থাকলে ঝুঁকি কমে।
• লগ্নির জন্য শেয়ার বাছাইয়ে বৈচিত্র যত কম, ঝুঁকি তত বেশি।
• ইক্যুইটি ফান্ডের লগ্নি রাতারাতি অলৌকিক কোনও রিটার্ন দেয় না।
• ‘সময়’-ই এখানে আসল রাজা। কিস্তিমাতের মূল চাল বাজারে ঢোকা বা বেরোনোর সময়।
• বিশ্বের কোথাও ফান্ড ম্যানেজাররা বলতে পারেন না শেয়ার কেনা-বেচার এক্কেবারে সঠিক সময় কোনটা।

বিষয়ভিত্তিক বা থিমেটিক ফান্ড

এই ধরনের ফান্ডের পরিসর আরও বড়। অনেক বেশি ছড়িয়ে থাকে এর লগ্নি। কারণ এখানে ফান্ড ম্যানেজাররা লগ্নির জন্য বেছে নেন নির্দিষ্ট বিষয়কে (থিম)। যেমন ধরুন, পরিকাঠামো। এখন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফান্ড বেশ জনপ্রিয়। আগে ভোগ্যপণ্যের ফান্ডকেও বাজারে আসতে দেখা গিয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রে আবার সেই থিম হতে পারে কোনও ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত। যেমন, অধিগ্রহণ, শেয়ার বিক্রি, বড় কোনও লগ্নি, নতুন ব্যবসায় পা ইত্যাদি। মুনাফার আশায় তখন এই সব পদক্ষেপ করা সংস্থায় টাকা ঢালে ফান্ড। ছোট কোনও সংস্থার বড় হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলেও তাতে লগ্নি করতে পারেন ফান্ড ম্যানেজাররা।

অ্যাক্টিভ ও প্যাসিভ ফান্ড
অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফান্ড ম্যানেজারের একটাই চেষ্টা থাকে। তা হল কী করে ফান্ডের পারফরম্যান্স টেক্কা দিতে পারে শেয়ার বাজারকে। এটা হল অ্যাক্টিভ বা সক্রিয় ভাবে পরিচালিত ফান্ড। সে ক্ষেত্রে সমস্ত ফান্ডের গতিপ্রকৃতি পর্যালোচনা করা হয় তাদের জন্য বেছে নেওয়া সূচকের ভিত্তিতে।
একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরা যাক ‘ক’ ফান্ড যে সমস্ত শেয়ারে লগ্নি করেছে সেগুলির লেনদেন চলছে ‘খ’ সূচকের আওতায়। অর্থাৎ ‘ক’ ফান্ডের গতিপ্রকৃতি ‘খ’ সূচকের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করা হবে। এই ধরনের লগ্নিতে চেষ্টা করা হয়, যাতে ‘খ’ সূচকের থেকে অনেকটাই বেশি ভাল রিটার্ন দিতে পারে ‘ক’ ফান্ড।
কিন্তু প্যাসিভ বা নিষ্ক্রিয় ভাবে পরিচালিত ফান্ড ঠিক এর উল্টো। এখানে সংশ্লিষ্ট সূচককে ছাপিয়ে রিটার্ন পাওয়ার কোনও উচ্চাকাঙ্খা থাকে না ফান্ড ম্যানেজারের। থাকে না বাড়তি ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ।
ধরা যাক, ইক্যুইটি ফান্ড ‘ক’-এর লগ্নি রয়েছে সূচক ‘খ’-এর আওতাভুক্ত শেয়ারে। এই ধরনের ফান্ডে ‘ক’-এর গতিপ্রকৃতি হয় অবিকল ‘খ’-এর মতো। এখানে ফান্ডের লক্ষ্য সূচককে ছাপিয়ে যাওয়া নয়, বরং তার গতিপ্রকৃতিকেই অনুসরণ করা। অর্থাৎ সূচক বাড়লে আপনার লাভ, পড়লে আপনার লগ্নির মূল্যও পড়বে।
প্যাসিভ ফান্ডকে ইনডেক্স ফান্ড বলে। সারা বিশ্বে লগ্নিকারীদের একাংশ এই ফান্ডেরই পক্ষপাতী। এ নিয়ে পরে কখনও বিশদে আলোচনা করব।

মাথা ব্যথার কারণ
বাজারে শেয়ার মূলধনের নিরিখে বড়, নামী সংস্থায় টাকা খাটানো সব সময়ই বেশি নিরাপদ। একটু ঝুঁকি নিতে চাইলে অবশ্য মাঝারি বা ছোট সংস্থাকে বেছে নেওয়া যায়। তবে লগ্নির জন্য নির্বাচিত সংস্থার শেয়ার মূলধনের অঙ্ক যা-ই হোক না কেন, ইক্যুইটি ফান্ডে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে হাজার একটা কারণে। যেমন, যে সংস্থাকে বাছা হল, তার ব্যবসায়িক কাজকর্মে আচমকা বদল ঘটল। যার দরুন হয়তো নীচে নেমে গেল তার শেয়ার দর। কখনও আবার কাঁটা হতে পারে ফান্ড ম্যানেজারের ভুল কৌশলও।
এখানেই উঠে আসে ইক্যুইটি ফান্ডে লগ্নির অন্যতম মাথার ব্যথার প্রসঙ্গ। তা হল বাজারে ঢুকবার ও বেরোবার উপযুক্ত সময়। এই সময় নির্ধারণে গণ্ডগোল করে ফেলেন বহু বাঘা বাঘা ম্যানেজারও। তাই এ ক্ষেত্রে সময়ই যে আসল রাজা, তা অস্বীকারের কিন্তু কোনও জায়গা নেই।
লেখক উইশলিস্ট ক্যাপিটাল অ্যাডভাইজর্সের ডিরেক্টর


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.