কমোডিটি ট্রেডিং
সজাগ থাকুন চব্বিশ ঘণ্টা

গের সংখ্যায় আমরা কমোডিটি ট্রেডিং কী এবং কী ভাবে সেই বাজারে পণ্য লেনদেন হয়, তা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। এ বার দেখব সেই কেনা-কাটার দুনিয়ায় পা রাখার আগে কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে আপনাকে।

চৌখস থাকুন ২৪ ঘণ্টাই
আগের বার মার্ক-টু-মার্কেট নিয়ে কথা বলেছি। যার মানে, ক্রেতার উচিত প্রতিদিন বাজারের গতির সঙ্গে পা মিলিয়ে চলা। এ বার কিন্তু আর এক ধাপ এগোনোর পালা। এখানে লাভের কড়ি ঘরে তুলতে সব সময়ই বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে আপনাকে। কারণ, ভারতে হয়তো সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত লেনদেন চলে। কিন্তু কোনও কোনও দেশে পণ্য লেনদেনের বাজার ২৪ ঘণ্টাই খোলা। অর্থাৎ, সারাদিন ধরেই সেখানে কোনও না কোনও পণ্য কেনা-বেচা চলছে। সেই অনুযায়ী পাল্টে যাচ্ছে তার দামও। তাই আপনি সে বিষয়ে সতর্ক না থাকলে চলবে কী করে? সজাগ থাকতে হবে সারাক্ষণই।

দাম পাল্টালে আমার কী?
মনে হতেই পারে যে মশাই অন্য কোনও দেশে কোনও পণ্যের দাম পাল্টালে আমি চিন্তা করতে যাব কেন? কিন্তু সত্যি বলতে কী, এই বাজারের চৌখস খেলোয়াড় হতে গেলে তা করতেই হবে আপনাকে। কারণ, এই বাজারে পণ্যের দাম শুধুমাত্র ভারতের দামের উপর নির্ভর করে না। সারা পৃথিবীতে কোন পণ্যের কী দাম যাচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে তা পাল্টে যায় এ দেশেও। অর্থাৎ, আমেরিকায় যদি সোনার দাম বাড়ে বা কমে, তার প্রভাব পড়বে ভারতেরও দামেও। এমনকী তা ১০০ শতাংশ পর্যন্ত একে অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে পারে।
শেয়ার বাজারের ক্ষেত্রেও এই কথা প্রযোজ্য। কিন্তু পণ্য লেনদেনের বাজারের মতো অতটা নয়। যেমন ধরুন, বিশ্ব বাজারের সঙ্গে যুক্ত হলেও, দেশের কোনও ব্যাঙ্কের শেয়ার দর কিন্তু বেশির ভাগটাই নির্ভর করে ভারতের আর্থিক পরিস্থিতির উপর। সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোনও ব্যাঙ্কের শেয়ার দর পড়ল না বাড়ল, তা দিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই কিছু যায় আসে না।

সকাল হতেই দাম বদল
দেশের বাজার যেহেতু রাতে বন্ধ থাকে, সেই সময়ের মধ্যে কোনও কারণে কিন্তু বিদেশের বাজারে ঘটে যেতে পারে বড়সড় পরিবর্তন। আর তার জেরেই পর দিন বাজার খোলার সময়ে হয়তো দেখলেন পণ্যের দাম খুব বেড়ে বা কমে গিয়েছে। একেই বলে ‘গ্যাপ ওপেনিং’। অর্থাৎ আগের দিন বাজার বন্ধ এবং পরের দিন তা খোলার সময়ে পণ্যের দামের তফাত। সেই কারণেই লগ্নিকারীর উচিত বাজার বন্ধ থাকার সময়ও বিদেশের দর খেয়াল রাখা।
দেশ-বিদেশের পণ্য বাজার
• ৩৫টির মতো দেশে পণ্য লেনদেনের নিজস্ব বাজার রয়েছে।
• দুনিয়ার বিখ্যাত কমোডিটি এক্সচেঞ্জগুলি হল: লন্ডন মেটাল এক্সচেঞ্জ (অ্যালুমিনিয়াম, তামা-সহ অন্যান্য ধাতু), নিউ ইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জ
(অশোধিত তেল ইত্যাদি), কোমেক্স (সোনা-রুপো প্রভৃতি), শিকাগো বোর্ড অফ ট্রেড, ডালিয়ান কমোডিটি এক্সচেঞ্জ (কৃষিপণ্য), টোকিও কমোটিডি এক্সচেঞ্জ (রবার) ইত্যাদি।
• বিদেশের বাজারের আগাম লেনদেন বড়সড় প্রভাব ফেলে ভারতের বর্তমান ও আগাম দামের উপরেও।
• বিদেশে সোনার দাম ১ ডলার বদলালে, ভারতে তা বাড়ে বা কমে ৫০০ টাকা। উল্টো দিকে, দেশে টাকার দরে ১০ পয়সা পরিবর্তনে সোনার দাম সাধারণত ৫০ টাকা ওঠে-নামে।
• বিশ্ব বাজারে রুপোর দাম কেজিতে ১ ডলার বাড়লে বা কমলে, দেশে তা পরিবর্তন হয় ১,৮০০ টাকা।
ডলারের খবর রাখছেন তো?
ডলারে টাকার দামের সামান্য ওঠা-নামাও কিন্তু দেশে পণ্যের দামে বিপুল হেরফের ঘটাতে পারে। শুধুমাত্র ফিউচার ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রেই নয়, একই ঘটনা ঘটতে পারে সাধারণ কেনাকাটার ক্ষেত্রেও। কারণ, ডলারে টাকার দাম বাড়লে বা কমলে, সেই অনুসারে পর দিন দেশের বাজার খুলতেই বদলে যায় পণ্যের দামও।

বিদেশেও বেচা-কেনা করতে পারি কি না?
অনেকেই প্রশ্ন করেন, বিদেশের পণ্য লেনদেনের বাজারেও লগ্নি করা যাবে কি না? এখনও পর্যন্ত বিদেশের মাটিতে ভারতের কোনও এক্সচেঞ্জ লেনদেন করতে পারে না। একই ভাবে বিদেশের এক্সচেঞ্জগুলিকেও ভারতে লেনদেনের অনুমতি দেওয়া হয় না। বিদেশি হেজ ফান্ড, ব্যাঙ্ক বা অন্য কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠানই কিন্তু ভারতের বাজারে লেনদেন করতে পারে না। এক দিক থেকে এই নিয়ম অবশ্য দেশের বাজারকে সাহায্যই করছে। কারণ, দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং জোগানের হাত ধরে এখন নিজেরাই একটি স্বতন্ত্র ধারা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে ভারতের এক্সচেঞ্জগুলি।

ঝুঁকি এড়িয়ে লাভ
এ বাজারে যে যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে, সে বিষয়ে সকলকে গোড়াতেই সতর্ক করেছি আমি। আমার মনে হয় আজ সে কথা আরও এক বার মনে করিয়ে দেওয়া জরুরি। সোনা-রুপো ইত্যাদির দাম যেমন গত কয়েক বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, তেমনই টাকার দামও কিন্তু এখন প্রায় প্রতিদিনই গড়ে বাড়ছে বা কমছে ৫০-৭০ পয়সা। অথচ গত বছরেও তা ছিল ২০ পয়সার আশেপাশে। এই ওঠা-পড়ার জেরে বাড়ছে পণ্যের দাম দ্রুত বাড়া-কমার প্রবণতাও। ফলে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে ঝুঁকিও।
কিন্তু তাও লগ্নিকারী যদি বিচক্ষণ হন, তা হলে এই বাজারে তাঁর সাফল্যের সম্ভাবনা অনেকখানি। কারণ, সে ক্ষেত্রে টাকার দামের এই পরিবর্তনকেও লাভ ঘরে তোলার হাতিয়ার হিসেবে বুদ্ধি করে ব্যবহার করতে পারবেন তিনি। দরকার শুধু চোখ-কান খোলা রেখে সঠিক পণ্যে সঠিক সময়ে বিনিয়োগ।
লেখক মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ (এমসিএক্স)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.