|
|
|
|
|
|
অবসরের বন্দোবস্ত |
|
আর যাঁদের পেনশন নেই?
পেনশন নেই বলে কি ষাটের পর মাথা উঁচু করে বাঁচা বারণ? আর একটুও দেরি না করে এখন থেকেই অবসরের জন্য জমাতে শুরু করুন। অল্প কিন্তু নিয়মিত। দেখবেন অবসরের মুখে বড়সড় তহবিল এসে গিয়েছে আপনার হাতে। বিন্দু দিয়েই তো সিন্ধু হয়। তাই না?
অমিতাভ গুহ সরকার |
|
পেনশনে বিদেশি লগ্নি (এফডিআই) এল কি না, তা নিয়ে কিস্যু এসে যায় না দেশের কোটি কোটি মানুষের। যাঁদের পেনশনই নেই, তাঁদের আবার এ নিয়ে মাথা ব্যথা কিসের? তাই পেনশনে বিদেশি বিনিয়োগ এল কি না, তা নিয়ে তাঁদের চিন্তার কোনও অর্থ নেই। বরং পেনশন না-থাকাটাই এঁদের চিন্তার বড় কারণ।
ষাটের পর খাব কী?
চাকরিতে ঢোকার পর পরই ব্যাপারটা তত গুরুত্ব পায় না। পরে চলতে চলতে পথ যখন ফুরিয়ে আসে, তখন নড়তে শুরু করে দুশ্চিন্তার পোকা। ঘুম উড়ে যায় রাতের। আসলে ক্রিকেটের মতো সঞ্চয়ের ক্ষেত্রেও প্রথম দিকে ওভার নষ্ট হলে চাপ এসে যায় শেষের ওভারগুলিতে। তাই অবসরকে সচ্ছল করার ব্যাপারটি টোয়েন্টি-টোয়েন্টি ম্যাচের আঙ্গিকে দেখলে চলবে না। এখানে ইনিংস খেলতে হবে টেস্ট ম্যাচের মতো। বড় রানের ক্ষিদে থাকবে। কিন্তু তা আসবে নিয়মিত এক-দুই করে। অযথা চার ছ’য়ের ঝুঁকি নেওয়ার প্রয়োজনই নেই। তবে হ্যাঁ, মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে। টাকা জমাতে হবে নিয়মিত। অল্প-অল্প করে।
যাঁদের পেনশন নেই
অবসর নিয়ে সব থেকে আগে পরিকল্পনা শুরু করা প্রয়োজন এঁদেরই। আমাদের দেশে অসংগঠিত ক্ষেত্রে তো বটেই, এমনকী বহু নামী সংস্থার কর্মীদেরও পেনশনের সুবিধা নেই। পেনশনের ব্যবস্থা নেই স্ব-নিযুক্ত অসংখ্য মানুষ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও। আবার এত মানুষের পেনশনের ব্যবস্থা সরকারের পক্ষেও করা সম্ভব নয়। তাই জীবনের শেষ ল্যাপে দৌড়নোর জন্য যাতে পর্যাপ্ত রসদ হাতে থাকে, সেই ব্যবস্থা অনেক আগেই শুরু করা জরুরি। ধরে নিন, শেষ জীবনের জন্য নিজের ব্যবস্থা নিজেকেই করে নিতে হবে। আর এই ব্যাপারে চিন্তাভাবনা যদি কর্মজীবনের গোড়া থেকেই শুরু করা যায়, তবে শেষ ওভারে বাড়তি চাপ পড়বে না।
আমাকে আমার মতো জমাতে দাও
একটা উপায় হল, নিজেই পরিকল্পনামাফিক পেনশন তহবিল খুলে নিয়মিত এক নাগাড়ে টাকা জমিয়ে যেতে পারেন। দীর্ঘ সময় ধরে এই অভ্যাস বজায় রাখতে পারলে, অবসরের সময় তা এক অতিকায় সম্পদে পরিণত হতে পারে।
মনে রাখবেন, আজীবন ‘আমাকে আমার মতো জমাতে দাও’ নীতি মেনে চললে, শেষ জীবনে পেনশন প্রাপকদের মতোই স্বচ্ছন্দে থাকার সুযোগ পাবেন আপনি। সচ্ছল হবে অবসর জীবন।
চক্রবৃদ্ধি হারে সুদের শক্তি এমনই, যে দীর্ঘ মেয়াদে তিল তিল করে জমানো টাকাই পরিণত হবে এক বিশাল তহবিলে। যা থেকে মাসে মাসে নিয়মিত আয়ের সুযোগ পাবেন আপনি। মনে রাখবেন, অল্প করে জমালেই চলবে। কিন্তু টাকা রাখতে হবে নিয়মিত। এতে তেমন কোনও চাপ আসবে না। কিন্তু ওই অল্প করে জমানো টাকাই কিন্তু অজান্তেই ভাগ্য গড়ে দেবে আপনার।
সঙ্গের চার্ট দেখুন। সেখানে দীর্ঘ মেয়াদে অল্প অল্প টাকা জমানোর শক্তি বোঝাতে চার কাল্পনিক চরিত্র ব্যবহার করেছি আমরা। এক ঝলক দেখলেই বুঝবেন, কী ভাবে তিল জমে তাল হয়।
পরিকল্পনার গোড়ার কথা
অবসর জীবনের জন্য টাকা জমাতে নীচের বিষয়গুলি মাথায় রাখুন
• জমাতে শুরু করুন একদম কম বয়স থেকে। যদি আগে শুরু করে না-থাকেন, তা হলে আর দেরি না-করে শুরু করে দিন এখনই।
• নিয়মিত জমিয়ে যান ছেদহীন ভাবে। অল্প দিয়ে শুরু করলেও পরে তা বাড়ানোর চেষ্টা করুন।
• কম ঝুঁকির প্রকল্পে লগ্নি করুন। একাধিক প্রকল্পে করতে পারেন। তবে এক সঙ্গে খুব বেশিতে না-করাই ভাল।
• পেনশনের কথা মাথায় রেখে যে সব প্রকল্পে সঞ্চয় করবেন, তাকে অন্যান্য প্রকল্প থেকে আলাদা করুন। লগ্নি করুন দীর্ঘকালীন সুরক্ষিত প্রকল্পে।
• পেনশনের জন্য সঞ্চিত প্রকল্প থেকে মাঝ পথে টাকা তোলার কথা মাথায় আসতেও দেবেন না।
• প্রকল্প বাছার সময় মাথায় রাখুন করের কথা। আয় একটু কম হলেও করমুক্ত প্রকল্প অনেক ক্ষেত্রেই শ্রেয়।
• হঠাৎ থোক টাকা হাতে এলে, অন্তত তার একাংশ কোনও দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্পে লগ্নি করার চেষ্টা করুন।
• অবসরের আগে কোনও প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে, সেখান থেকে পাওয়া টাকা জমা করুন এমন কোনও প্রকল্পে, যা অবসর নেওয়ার সময় সুদে-আসলে হাতে আসবে।
• অবসরের পর বিভিন্ন প্রকল্প থেকে পাওয়া টাকা লগ্নি করুন বিভিন্ন সুরক্ষিত প্রকল্পে। যেখান থেকে নিয়মিত আয় বা পেনশন পাবেন। পছন্দের প্রকল্প তালিকা
এমন বেশ কয়েকটি পথ রয়েছে, যেখানে পেনশন তহবিল তৈরির জন্য অল্প অল্প করে টাকা ঢালতে পারেন আপনি। এদের মধ্যে কয়েকটি হল
• পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিপিএফ): পেনশন তহবিল গড়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ জায়গা। প্রাথমিক মেয়াদ ১৫ বছর হলেও মেয়াদ শেষে তা ৫ বছর করে বাড়িয়ে নেওয়া যায়। সুরক্ষায় উত্তম। সুদ বেশ আকর্ষণীয়। বর্তমানে ৮.৮%। তবে সব থেকে বড় আকর্ষণ হল এই সুদ পুরোপুরি করমুক্ত। জমার উপরও পাওয়া যায় কর ছাড়। বাৎসরিক জমার ঊর্ধ্বসীমা এক লক্ষ টাকা। বড় ডাকঘর ও অনেক ব্যাঙ্কে খোলা যায় পিপিএফ অ্যাকাউন্ট।
• রেকারিং-ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট: ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরে খোলা যায়। সর্বাধিক মেয়াদ ১০ বছর। উঁচু সুদের জমানায় খুললে, সেই সুদ পুরো মেয়াদে পাওয়া যায়। এমনকী তা পকেটে আসে পরে সুদের হার কমলেও।
• ফ্লেক্সি-ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট: এক ধরনের রেকারিং ডিপোজিট। তবে মাসিক জমার অঙ্ক কম-বেশি করা যায়। ইচ্ছে হলে কোনও মাসে একাধিক বার জমা দেওয়ারও সুযোগ রয়েছে। স্টেট ব্যাঙ্কে এ ধরনের প্রকল্পের নাম এসবিআই ফ্লেক্সি ডিপোজিট। এই প্রকল্প আছে এইচডিএফসি-রও।
• এসআইপি: পুরো কথা সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান। মিউচুয়াল ফান্ডে খোলা যায় এই অ্যাকাউন্ট। ঝুঁকি নেওয়ার সামর্থ্য অনুযায়ী বাছা যেতে পারে ইক্যুইটি নির্ভর অথবা ঋণপত্র নির্ভর প্রকল্প। এতে দীর্ঘ মেয়াদে আয় বৃদ্ধি ভালই হয়। মিউচুয়াল ফান্ডের ডিভিডেন্ড করমুক্ত। এসআইপি ব্যবস্থায় লগ্নি করা যেতে পারে গোল্ড ফান্ডেও।
• জীবন বিমা/ইউলিপ: দীর্ঘ মেয়াদে লগ্নি করার কথা ভাবতে পারেন বিমা পত্রেও। তবে বিমা মূলত ঝুঁকি সামলানোর জন্য। লগ্নির দিক থেকে তেমন আকর্ষণীয় নয়। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে প্রিমিয়াম গুণলে মোটা তহবিল তৈরি হতে পারে এখানেও।
ইউলিপ অবশ্য অনেকটা মিউচুয়াল ফান্ডের মতো। শেয়ার বাজারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এখানে আছে বাজারজনিত ঝুঁকি। প্রাথমিক খরচ বেশি হলেও লম্বা মেয়াদে ইউলিপ আকর্ষণীয় হতে পারে।
বিমার অন্যতম বড় আকর্ষণ টাকা ফেরতের সময় করের বোঝা না থাকা।
• শেয়ার: বাজারের চরম দুর্দিনে অল্প অল্প করে জমানো যায় ব্লু-চিপ শেয়ার। ঠিক শেয়ার ঠিক সময়ে কিনতে পারলে কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে তা বড় সম্পদে পরিণত হতে পারে।
• সম্পত্তি: জমি, বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাটও এখন লগ্নির বেশ ভাল জায়গা। থোক টাকা অথবা ইএমআই দিয়ে ভাল জায়গায় সম্পত্তি কিনে রাখলে, অবসরের সময় তা বড় তহবিলের সূত্র হয়ে উঠতে পারে। আবার মনে করলে, ভাড়া দিয়ে মাসিক আয়ের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে।
• করমুক্ত বন্ড: কর্মজীবনের শেষ দিকে করমুক্ত বন্ড কেনার কথা ভাবতে পারেন। অবসরের পর এই আয়ের উপর কোনও করের চাপ থাকবে না।
• নিউ পেনশন স্কিম (এনপিএস): সরকারের তৈরি পেনশন প্রকল্প। খাতা খোলা যায় কম বয়স থেকেই। অল্প অল্প করে আজীবন জমিয়ে যাওয়া যায় এন পি এস অ্যাকাউন্টে। করের সুবিধা আছে শেয়ার বাজারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এই প্রকল্পে। গত কয়েক বছর এই প্রকল্পে আয় ভালই হয়েছে। নতুন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা এই প্রকল্পের সদস্য। সাধারণ লগ্নিকারীরাও যোগদান করতে পারেন এনপিএস প্রকল্পে। এ ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা হল, টাকা কোথায় খাটানো হবে, সে বিষয়ে পছন্দ জানানোর সুযোগ রয়েছে আপনার। |
লেখক ম্যাকলিওড রাসেল ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কোম্পানি সেক্রেটারি
|
মাসে মাসে ছোট বিনিয়োগ + লম্বা মেয়াদ = বড় তহবিল |
নাম |
অমল |
বিমল |
কমল |
সুবল |
বর্তমান বয়স |
২৫ |
৩০ |
৩৫ |
৪০ |
অবসরের বয়স |
৬০ |
৬০ |
৬০ |
৬০ |
লগ্নির মেয়াদ |
৩৫ |
৩০ |
২৫ |
২০ |
মাসিক লগ্নি |
৫,০০০ |
৬,০০০ |
৭,০০০ |
৮,০০০ |
মোট লগ্নি |
২১,০০,০০০ |
২১,৬০,০০০ |
২১,০০,০০০ |
১৯,২০,০০০ |
বছরে গড় রিটার্ন |
৯ |
৯ |
৯ |
৯ |
মেয়াদ শেষের অঙ্ক |
১,৩৫,৭০,০০০ |
১,০২,৯২,০০০ |
৭৪,৬৪,০০০ |
৫১,৫৬,০০০ |
মেয়াদ: বছরে, লগ্নি: টাকায়, রিটার্ন: শতাংশে |
|
|
|
|
|
|