|
|
|
|
|
|
বয়স মেপে সঞ্চয় |
ছোটবেলার পুঁচকে হাফশার্ট পঁচিশেও গায়ে গলে কখনও? না কি পোশাক বাছাই একই থাকে চুল
পাকার পরেও? তা হলে শুধু সঞ্চয়ের বেলায় এই সহজ কথাটা কেন মাথায় ঢোকে না
আমাদের?
তাড়াতাড়ি টাকা জমানো শুরু করুন।
আর বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বদলে ফেলুন
সঞ্চয়ের
কৌশল। লক্ষ্মীপুজো পেরোতেই ঝাঁপি ভরার হদিশ দিলেন
শৈবাল বিশ্বাস |
এমবিএ
পড়তে বেঙ্গালুরু যাচ্ছে সদ্য একুশে পা দেওয়া আপনার মেয়ে। আর অমনি তার খরচ জোগাতে ঋণের খোঁজে আপনি হন্যে। নিয়ম করে চক্কর কাটছেন এক ব্যাঙ্কের দরজা থেকে আর এক ব্যাঙ্কের চৌকাঠে। গুণতে রাজি আছেন চড়া সুদও। কিন্তু প্রশ্ন হল, এ রকম একটা মোটাসোটা খরচ এই সময় ধেয়ে আসবে জেনেও গত ২১ বছর কী করছিলেন আপনি? |
|
শুভস্য শীঘ্রম |
সঞ্চয়কে সাধারণত বয়স কালের জন্য ফেলে রাখি আমরা। অনেকটা জপ-তপ, দান-ধ্যানের মতো। মনে করি, আপাতত সংসারের হেঁশেল ঠেলে, শখ-আহ্লাদ মিটিয়ে যেটুকু টাকা হাতে থাকে, তা কোনও একটা প্রকল্পে রেখে দেওয়ার নামই সঞ্চয়।
ডাহা ভুল। দু’দিক থেকেই
(১) বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণত আয় বাড়ে ঠিকই। কিন্তু তাল মিলিয়ে বাড়ে খরচও। তাই ৪৫ পেরোলে তবে টাকা জমানোর কথা ভাবব, এমন চিন্তা অর্থহীন। বরং তা জমাতে শুরু করুন গোড়া থেকেই। মাস গেলে ৩০-৩৫ হাজার টাকা মাইনে পান, অথচ ২০ তারিখ না-পেরোতেই হাত খালি, এমন উদাহরণ অগুন্তি। তাই টুক-টাক বেরিয়ে আসা কিংবা পছন্দের ল্যাপটপ কেনার শখ অবশ্যই মেটান। কিন্তু মাথায় রাখুন অবসর জীবনের কথাও। ৬০ পেরনোর পরেও মাথা উঁচু করে বাঁচার ব্যবস্থা কিন্তু ২৬ থেকেই করতে হবে আপনাকে।
(২) শুধু টাকা জমানোই শেষ কথা নয়। বরং আরও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল কখন কোন প্রকল্পে কত টাকা রাখছেন। তাই শুধু এজেন্ট কিংবা পরিচিতদের কথায় অন্ধ বিশ্বাস না-করে প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত খবর নিন। ভেবে দেখুন, তা আদৌ আপনার পক্ষে উপযোগী কি না। কিংবা কর এবং মূল্য বৃদ্ধির হার বাদ দিয়ে সেখান থেকে কতটুকু নিট রিটার্ন পেতে পারেন আপনি। মাথায় রাখুন যে যে লক্ষ্য আপনি পূরণ করতে চান (বাড়ি বা গাড়ি কেনা, ছেলে-মেয়ের উচ্চশিক্ষা ইত্যাদি), তার তালিকাও। সব খতিয়ে দেখে তবেই টাকা ঢালুন প্রকল্পে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
|
বয়স অনুসারে সঞ্চয় বদল |
অনেকেই ভাবেন, কোথায় টাকা রাখব, তার সঙ্গে আবার বয়সের সম্পর্ক কী? এই ধারণাও কিন্তু একেবারে ভুল। কারণ, একটু ভেবে দেখলেই বুঝবেন যে, এই যোগাযোগ বেশ সোজাসাপ্টা।
কষ্টের টাকায় সেরা রিটার্ন ঘরে তুলতে তা বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পে ছড়িয়ে দেওয়া জরুরি। কিছুটা ঝুঁকির শেয়ার, তো কিছুটা নিরাপদ ফিক্সড ডিপোজিট। কিছুটা মিউচুয়াল ফান্ড, তো কিছুটা আবার সরকারি বন্ডে। নইলে দেখবেন হয় অযথা বেশি ঝুঁকি নিয়ে পুরো টাকাই জলে গিয়েছে। না-হলে, ঝুঁকি এড়াতে গিয়ে কম সুদের কারণে সে ভাবে ফুলে-ফেঁপে ওঠেনি সঞ্চয়। এই দু’য়ের ভারসাম্য রাখতেই বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমাগত সঞ্চয়ের কৌশল বদলে যেতে হবে আপনাকে।
|
দুরন্ত ১৮ বনাম স্নিগ্ধ ৬০ |
যখন বয়স কম, স্বাভাবিক ভাবেই তখন বেশি ঝুঁকি নিতে পারবেন আপনি। বেশি টাকা ঢালতে পারবেন শেয়ার বাজার কিংবা মিউচুয়াল ফান্ডে। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যত আপনি অবসরের কাছাকাছি, তত বেশি করে আপনাকে ভাবতে হবে লগ্নির নিরাপত্তার কথা। যাতে বেশি রিটার্নের আশায় খোয়া না যায় সঞ্চয়ের টাকা।
|
চোখ রাখুন নীচের চার্টে |
|
কী ধরনের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা থাকলে, কোন বয়সে কোথায় লগ্নির কত অংশ ছড়িয়ে দিতে হবে, নীচের চার্টে তার একটা হদিশ দেওয়ার চেষ্টা করলাম আমরা। সকলের পক্ষেই এই হিসাব যে একেবারে অক্ষরে অক্ষরে মানা ঠিক হবে, এমনটা একেবারেই নয়। তবে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে জমানো টাকা কী ভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখলে, সঞ্চয় ফুলে-ফেঁপে উঠবে, তার একটা ধারণা পাওয়া যাবে সেখানে।
সঞ্চয়ের এই ঠিকুজি কতটা আমার জন্য?
এক ওষুধে সব রোগ সারবে, এমনটা আশা করা অন্যায়। তাই চার্টের থেকে মূল ধারণাটুকু নিয়ে তাকে নিজের প্রয়োজন ও বাধ্যবাধকতা অনুসারে সাজিয়ে-গুছিয়ে নিতে হবে আপনাকে। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় বিশেষ করে মাথায় রাখা জরুরি
• আয়ের অঙ্ক।
• সংসারের দায়। অর্থাৎ, পরিবারের কত জন আর্থিক ভাবে আপনার উপর নির্ভরশীল।
• কতটা ঝুঁকি নিতে স্বচ্ছন্দ।
• কোনও ভাবেই এড়ানো যাবে না, এমন দায় মাথার উপর কতখানি। তা সে কারও ব্যয়বহুল চিকিৎসা হোক বা ছেলে-মেয়ের উচ্চশিক্ষা।
• স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্য (বাড়ি বা গাড়ি কেনা, সন্তানের শিক্ষা, সচ্ছল অবসর ইত্যাদি)। এই সব লক্ষ্য বা তার গুরুত্ব বদলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাওয়া উচিত আপনার সঞ্চয়ের ধরনও।
এ ক্ষেত্রে অন্তত পাঁচটি বিষয় গোড়া থেকেই মাথায় রাখুন:
(১) চিকিৎসার হঠাৎ খরচ (স্বাস্থ্য বিমা)
(২) ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা
(৩) অবসর পরিকল্পনা
(৪) পর্যাপ্ত বিমা-কভারেজ
(৫) বাড়ি বা গাড়ি কেনা।
|
তা বলে খামোখা ঝুঁকি কেন? |
অনেকেই বলেন, কষ্টের জমানো টাকা তো ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। খামোখা শেয়ার বাজার বা মিউচুয়াল ফান্ডে ঢেলে অযথা ঝুঁকি নেওয়ার মানে কী?
উত্তর কিন্তু খুব সহজ। এক দিকে, হুড়মুড়িয়ে দাম বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের। আর অন্য দিকে, ক্রমশ কমছে ব্যাঙ্কে আমানতের সুদ। দেশের অর্থনীতি যত বিশ্বায়নের পথে হাঁটবে, তত তা আরও কমতে থাকার সম্ভাবনা। তাই এই পরিস্থিতিতে মূল্যবৃদ্ধিকে টপকে রিটার্ন ঘরে তুলতে কিছুটা বাড়তি ঝুঁকি নিতেই হবে আপনাকে। নইলে নামেই সঞ্চয় বাড়বে। আখেরে যখন টাকা হাতে পাবেন, দেখবেন তখনকার জিনিসপত্রের দামের তুলনায় তা নস্যি। একটা উদাহরণ দিলে হয়তো বিষয়টি একটু স্পষ্ট হতে পারে ধরা যাক, কোনও স্থায়ী আমানতে ৯% সুদ পাবেন আপনি। কিন্তু তার উপর ৩০% কর দিতে হবে আপনাকে। সেই সঙ্গে মাথায় রাখুন ৭% মূল্যবৃদ্ধির কথা। তা হলে কী দাঁড়াল?
৯% সুদের উপর ৩০% কর দেওয়ার পর আপনার হাতে থাকছে [৯%- (৯% এর ৩০%)]=৬.৩%। কিন্তু সেখানে মূল্যবৃদ্ধির হারই তো ৭%। সুতরাং আসলে আপনার সঞ্চয় বাড়ছে না। বরং জিনিসপত্রের দাম বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিতে না-পেরে তার নিট রিটার্ন কমে যাচ্ছে (৭%-৬.৩%)=০.৭%। এই পরিস্থিতি এড়াতে কিছুটা ঝুঁকি তো নিতেই হবে।
|
বিমার বাড়াবাড়ি |
আমাদের অনেকেরই বিমায় একের পর এক লগ্নির প্রবণতা আছে। বিশেষত দীর্ঘ মেয়াদি এনডাওমেন্ট প্রকল্পে। হয়তো পঞ্চাশ পেরিয়ে থোক টাকা হাতে পাওয়া আর কর ছাড়ের লোভেই এমনটা করি আমরা।
কিন্তু আমার মতে, বয়স কম থাকতে (২৫-৩৫) টার্ম পলিসি বাছা ভাল। সেখানে অল্প টাকায় মোটা কভারেজ নিশ্চিত করে বাকিটা খাটানো যেতে পারে মিউচুয়াল ফান্ডের মতো বেশি রিটার্নের প্রকল্পে। বয়স ৩৬-৫০ হলে, সঙ্গে যোগ করুন এনডাওমেন্ট প্রকল্প। ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে জমানো মোটা টাকা এনে তৈরি করুন পেনশন তহবিল। বয়স ৬০ পেরোলে জীবনবিমার প্রয়োজন আর সে ভাবে নেই। তবে স্বাস্থ্য বিমা করুন একেবারে প্রথম থেকে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যতটা সম্ভব বাড়ান তার কভারেজও। |
|
|
|
|
|