এলাকায় ‘স্বচ্ছ’ ও ‘পরিচ্ছন্ন’ ভাবমূর্তি না থাকলে এবং সাধারণ মানুষের কাছে ‘গ্রহণযোগ্যতা’ না থাকলে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে উত্তর ২৪ পরগনায় কাউকে প্রার্থী করা হবে না বলে জানিয়ে দিল তৃণমূল। তা বাদে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে দলের বর্তমান সব সদস্যকেই প্রার্থী করা হবে বলেও দলীয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার কলকাতায় তৃণমূল ভবনে দলের এক বৈঠক হয়। সেখানে হাজির ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, জেলা তৃণমূল সভাপতি নির্মল ঘোষ-সহ জেলার চার কার্যকরী সভাপতি। এই জেলার ১৬টি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং পঞ্চায়েত সমিতির ছয় বিরোধী দলনেতাকেও ডাকা হয়েছিল বৈঠকে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে পঞ্চায়েত ভোট হতে পারে, এমনটা ধরে নিয়েই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে দলের তরফে। যে কারণে জরুরি ভিত্তিতে ওই বৈঠক ডাকা হয়।
উত্তর ২৪ পরগনায় ২২টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ১৬টি তৃণমূলের দখলে। ২০০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১২৪টি দখল করেছিল তারা। জেলা তৃণমূল সূত্রের খবর, প্রতিটি ব্লকে ১১ জনের একটি কমিটি তৈরি হচ্ছে। ওই কমিটিতে দলের সাংসদ, বিধায়ক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, জেলা পরিষদের সদস্যদের পাশাপাশি ওই এলাকায় দলের রাজ্য বা জেলা কমিটির কোনও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বসবাস করলে তিনিও থাকবেন। পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে যাঁরা দাঁড়াতে চান, তাঁদের নামের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করে ওই কমিটি জেলা কমিটির কাছে পাঠাবে। জেলা কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। জেলা পরিষদের প্রার্থী তালিকার ক্ষেত্রে জেলা কমিটি রাজ্য কমিটির কাছে তালিকা পাঠাবে। ওই তালিকা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য কমিটি।
জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি থাকলে তবেই ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে বর্তমান কোনও সদস্য আগামী পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট পাবেন। এ ছাড়া, অন্য বর্তমান সব সদস্যই টিকিট পাবেন। সংরক্ষণের আওতায় পড়ে গেলে কোনও যোগ্য সদস্যকে দল চেষ্টা করবে অন্যত্র কোথাও দাঁড় করাতে। সম্ভব না হলে তিনি দলের হয়ে কাজ করবেন।” তৃণমূল সূত্রের খবর, গত পাঁচ বছরে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষেত্রে যদি কোনও ধরনের অভিযোগ উঠে থাকে, তবে রাজ্য কমিটি ‘তদন্ত করে’ ওই ব্যক্তির প্রার্থীপদ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। মনোনয়ন পেতে কোনও ধরনের ‘প্রভাব’ বিস্তারের চেষ্টা বা ‘তদ্বির’ করলে তা কঠোর ভাবে আপত্তিজনক বলে বিবেচিত হবে বলে জানান জ্যোতিপ্রিয়বাবু। দলের একটি সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত ভোটে ক্ষমতায় এসে বিভিন্ন এলাকায় পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতিতে দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে। যাঁরা এই ব্যাপারে জড়িত, তাঁদের উপরে ‘নজর’ রাখছে দল। কিছু নাম নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এঁরা যাতে টিকিট না পান, সে দিকে ‘সতর্ক দৃষ্টি’ রাখা হচ্ছে।
তৃণমূল সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের কর্মী-সমর্থকদের ‘চাঙ্গা’ করার কথা ভাবা হচ্ছে। যে কারণে খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ, রান্নার গ্যাস, পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি-সহ নানা বিষয়কে সামনে রেখে আগামী কয়েক মাসে জোরদার আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই এক দফা মোটর বাইক মিছিল হয়েছে বনগাঁ-বসিরহাটে। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “শীঘ্রই জেলা জুড়ে লাগাতার আন্দোলন শুরু হবে।” তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের ধারণা, আন্দোলনের ফলে সরকার বা দল সম্পর্কে মানুষের কোনও নেতিবাচক ধারণা হয়ে থাকলে তা-ও কেটে যাবে।
দলীয় পর্যালোচনায় সাংগঠনিক ভাবে বসিরহাট ১ এবং ২ ব্লককে কিছুটা ‘দুর্বল’ বলে মনে করা হচ্ছে। কংগ্রেস এই সব জায়গায় তুলনায় শক্তিশালী। আবার ওই এলাকায় তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে দলের স্থানীয় নেতাদের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। বিশেষ করে তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে পুরনো নেতা-কর্মীরা ‘গুরুত্ব’ পাচ্ছেন না বলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এই ক্ষোভ মেটাতেও উদ্যোগী হয়েছে দল।
গত পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে নিচুতলায় তৃণমূলের সমঝোতা হয়েছিল অনেক জায়গায়। এ বারেও সেই সম্ভাবনা আছে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। যদিও সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্কে যে চিড় ধরেছে, তার নিরিখে এই প্রবণতা আটকাতে চাইছেন তৃণমূল নেতারা। কী ভাবে তা করা হবে, তা নিয়েও আলাপ-আলোচনা চলছে। |