দক্ষিণ ২৪ পরগনা
নিচু তলার মত নিয়েই প্রার্থী বাছাইয়ে সিপিএম
প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা বিচারে এ বার মতামত নেওয়া হবে দলের নিচু তলার কর্মীদের। এই কৌশল নিয়েই আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতিতে নামছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম।
জেলা সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, ২০০৮ সালে জেলা পর্যায়ের নেতাদের মনোনীত প্রার্থীরাই ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটে লড়াই করেছিলেন। প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে তখন বহু ক্ষেত্রেই দলের নিচু তলায় ক্ষোভ রয়ে গিয়েছিল। জেলা নেতৃত্বের কাছের লোকেদেরই প্রার্থী করা হয়েছিল বলে ওই ক্ষোভ অন্তর্ঘাতে পরিণত হয়েছিল বলে পরবর্তী কালে নির্বাচনী ফলাফলের বিশ্লেষণে উঠে এসেছিল। এ বার তাই আগেই নিচু তলার মতামত নিয়ে এগোনোর প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে।
বুথ স্তর থেকেই পঞ্চায়েতের প্রার্থী নির্বাচনে হাত দিতে চাইছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম। জেলার ৩১২টি পঞ্চায়েত এলাকায় ৬ হাজার বুথ রয়েছে। দলের তরফে প্রতিটি বুথে একটি কমিটি করা হয়েছে। সিপিএমের দলীয় সদস্য-সহ এসএফআই, ডিওয়াইএফআই, মহিলা সমিতির মতো গণসংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে ওই কমিটি গড়া হয়েছে। জেলা সিপিএমের তরফে রূপরেখা ঠিক করে দিয়ে বলা হয়েছে, এলাকায় আগমার্কা সিপিএম না-হলেও চলবে। জনপ্রিয় ও বা এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এমন লোককেই প্রাথমিক ভাবে প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত করবে ওই বুথ কমিটি গুলি। তার পরে ওই বুথ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী জেলা নেতৃত্ব বাছবিচার করে প্রার্থী মনোনয়ন করবেন। বুথ কমিটির সুপারিশকেই গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই ‘মডেল’ সফল হলে তখন অন্যত্রও এই কৌশল প্রয়োগের কথা ভাবতে পারে সিপিএম।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, “সব পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থী মনোনীত করা হবে।” আর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও কম বয়সী, শিক্ষিত ব্যক্তিরা ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের প্রার্থী হিসেবে অগ্রাধিকার পাবেন। নিচু তলার কর্মীরা সর্বসম্মত হয়ে প্রার্থী মনোনয়ন করলে ক্ষোভ ও গোষ্ঠী-বিবাদের সম্ভাবনার অবকাশ থাকবে না।” সিপিএম সূত্রের মতে, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত নিচু তলার উপরে চাপিয়ে দেওয়ার ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তৈরি-হওয়া ক্ষোভ বামফ্রন্টের ভরাডুবির অন্যতম কারণ হয়েছিল।
২০০৮-এ দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা পরিষদ হাতছাড়া বামেদের। ৩১২টি পঞ্চায়েতের মধ্যে তাদের দখলে আসে ৬৯টি। ২৯টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে মাত্র ৪টি দখলে রাখতে পেরেছিল তারা। ওই বিপর্যয়ের চুলচেরা বিশ্লেষণে দু’টি বিষয় উঠে এসেছিল। এক দিকে তৃণমূল ও কংগ্রেসের অঘোষিত জোট, আর এক দিকে সিপিএমের নিচু তলার কর্মীদের অর্ন্তঘাত। দু’টি বিষয় একত্রিত হওয়ায় বামফ্রন্টের ভোট কমে গিয়েছিল।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, “এ বার যদি জোট না-হয় আর অন্তর্ঘাত এড়ানো যায়, তা হলে বামফ্রন্টের ফল ভাল হওয়ার সম্ভবনা আছে।” সেইমতোই কৌশল নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি জয়নগরে অনুষ্ঠিত দলের যুব সংগঠনের জেলা সম্মেলনেও পঞ্চায়েত নির্বাচনের নানা কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। শিক্ষিত ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির যুবকদের জেলা পরিষদের প্রার্থী করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা পরিষদ পুনরুদ্ধার করা এখন জেলা বামফ্রন্টের পাখির চোখ হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে বলে দলের একাধিক নেতা সম্মেলনে ব্যাখ্যা করেছেন। সেইমতো বুথ স্তরে গিয়ে যুব সংগঠনের সদস্যদের প্রচার অভিযান চালানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছেন জেলা সিপিএমের নেতারা। এখন জেলার অধিকাংশ পঞ্চায়েতে তৃণমূলের ও কংগ্রেসের জোট রয়েছে। তার ফলে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী একটা হাওয়ার ফায়দা নেওয়ার সুযোগ তাদের আছে বলে জেলা সিপিএমের একাংশের মত। তাদের আরও বক্তব্য, দুর্নীতি ও গোষ্ঠী-বিবাদের কারণে তৃণমূল পরিচালিত বহু পঞ্চায়েতের উপরে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ।
কংগ্রেসের সঙ্গে স্থানীয় স্তরেও তৃণমূলের জোট না-হলে গোদের উপরে বিষফোঁড়া হবে! সে ক্ষেত্রে বাম-সহ সাধারণ মানুষের (ফ্লোটিং) প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ভোট একত্র করতে পারলে ফের অধিকাংশ পঞ্চায়েত দখল করা যাবে বলে আশাবাদী দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম নেতৃত্ব।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.