|
|
|
|
|
বন্দরের মনোনীত অছিদের
ঘিরেই উঠছে প্রশ্ন
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ও হলদিয়া |
|
এ যেন বেড়ালকে মাছ বাছতে দেওয়া! কলকাতা বন্দরের যাঁরা অছি, তাঁরাই আবার হলদিয়া ও কলকাতা বন্দরের লাইসেন্সধারী ব্যবসাদার! সরাসরি স্বার্থের সংঘাত হতে পারে যাঁদের ঘিরে, তাঁরা কী ভাবে কেন্দ্রীয় জাহাজমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে কলকাতা বন্দরের অছি পরিষদের সদস্য হয়েছেন, স্বাভাবিক ভাবেই সেই প্রশ্ন উঠছে। ফলে হলদিয়া বন্দর থেকে এবিজি-র বিদায়লগ্নে বন্দর প্রশাসনের ভূমিকা নিরপেক্ষ কিনা, তা নিয়েও শুরু হল নতুন বিতর্ক।
রবিবার এই বিতর্ক উসকে দিয়ে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ বলেন, “বন্দরের অছি পরিষদে একটি সংস্থারই চার-পাঁচ জন প্রতিনিধি রয়েছেন। তাঁরা বন্দরকে নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করছেন।” লক্ষ্মণের প্রশ্ন, বন্দরের নীতি নির্ধারক সমিতিতে যদি একটি মাল খালাসকারী সংস্থারই ৫ জন কর্মী বা প্রতিনিধি থাকেন তা হলে আর নিরপেক্ষতা বজায় থাকল কোথায়?
কলকাতা বন্দরের অছি পরিষদের সচিব অসীম মুখোপাধ্যায় বলেন, “বন্দরের অছির সংখ্যা ২২। এখন আছেন ১৯ জন। ৫ জন জাহাজ মন্ত্রকের মনোনীত। এঁদের সম্পর্কে বিশদে আমাদের কিছু জানা নেই।” বাকি ১৩ জনের মধ্যে নৌবাহিনী, উপকূলরক্ষী বাহিনী, জাহাজ মন্ত্রক, রাজ্য শিল্প দফতর, রেল মার্কেন্টাইল মেরিন বিভাগ, শুল্ক বিভাগ এবং বন্দরের অফিসার এবং ইউনিয়নের নেতারা রয়েছেন। বন্দরের এক কর্তা বলেন, “বাস্তবে অছি পরিষদের প্রায় প্রতিটি বৈঠকেই বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থার ৮-৯ জন প্রতিনিধি অনুপস্থিত থাকেন। ফলে, যে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মনোনীত সদস্যদের মতামত ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।”
|
মনোনীত যাঁরা |
ভাস্কর বসু |
সেল-এর প্রাক্তন কর্তা, প্রতিদিন প্রকাশনা সংস্থার প্রতিনিধি |
দেবাশিস দত্ত |
মোহনবাগান ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ, হলদিয়া বন্দরে ব্যবসা রয়েছে |
শম্ভুনাথ দত্ত |
আইনজীবী, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ |
দিবেন্দু বিশ্বাস |
আইনজীবী, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ |
রাগম কিশোর |
বিশাখাপত্তনমের এক বেসরকারি জাহাজ সংস্থার কর্তা, এবিজি-র প্রতিযোগী সংস্থার ঘনিষ্ঠ |
|
বন্দর সূত্রের খবর, মনোনীত পাঁচ জন হলেন, প্রতিদিন প্রকাশনী সংস্থার প্রতিনিধি ভাস্কর বসু, মোহনবাগান ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ দেবাশিস দত্ত, কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী শম্ভুনাথ দত্ত, দিব্যেন্দু বিশ্বাস এবং বিশাখাপত্তনমের এক বেসরকারি জাহাজ সংস্থার কর্তা রাগম কিশোর। এঁরা কী যোগ্যতায় অছি হয়েছেন, সেই ব্যাপারে বন্দর-কর্তারা পুরোপুরি অন্ধকারে। তবে এঁদের প্রত্যেকের সঙ্গেই এবিজি-র প্রতিযোগী সংস্থা ‘রিপ্লে অ্যান্ড কোম্পানি’র যোগাযোগ রয়েছে বলে খবর।
যেমন, স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেডের প্রাক্তন কর্মী ভাস্কর বসু যে সংবাদপত্রের প্রতিনিধি, তার মালিকের হলদিয়া বন্দরে নিজস্ব ব্যবসা আছে। ওই সংবাদপত্রের মালিক আবার মোহনবাগান ক্লাবেরও সর্বময় কর্তা। যে ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ দেবাশিস দত্ত রিপ্লে অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগাযোগ থাকার সুবাদে অছি পরিষদের সদস্য মনোনীত হয়েছেন বলে বন্দরের একাধিক
কর্তার দাবি।
বন্দর মহলের আরও খবর, রাগম কিশোরের সঙ্গেও রিপ্লে গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। অপর দুই অছি এবং পেশায় আইনজীবী শম্ভুনাথ দত্ত এবং দিব্যেন্দু বিশ্বাস কংগ্রেসের এক প্রাক্তন প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
অছি পরিষদে এই মনোনীত প্রতিনিধিদের রাখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে লক্ষ্মণ বলেন, “প্রোমোটার পুরসভার চেয়ারম্যান হলে যা হয়, হলদিয়া বন্দরের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। যে সংস্থা হলদিয়া বন্দরে মাল খালাসের কাজ করে, সেই সংস্থার ঘনিষ্ঠরা বন্দরের নীতি নির্ধারণ করেন। ফলে, এবিজি-র বন্দর ছেড়ে যাওয়া ছাড়া উপায় কী!” এই ঘটনায় রাজ্যের শিল্প-পরিবেশ বিঘ্নিত হবে দাবি করে লক্ষ্মণ বলেন, “এখানে নৈরাজ্য চলছে। এ রকম চললে এ রাজ্যে আর কোনও শিল্পপতি আসবেন না।”
হলদিয়ায় তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী শুভেন্দু অধিকারীকেও এ দিন কটাক্ষ করতে ছাড়েননি লক্ষ্মণ। নাম না করে তিনি বলেন, “এখানে চোর-পুলিশ খেলা চলছে। পুলিশ এবং একটি সংস্থার যোগসাজশে এই সব ঘটনা ঘটছে। পুলিশ এখন রাজনৈতিক ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত।” কিন্তু বাম আমলেও কি পুলিশ রাজনৈতিক শক্তির দ্বারা পরিচালিত হত না? লক্ষ্মণের জবাব, “এই অভিযোগ মিথ্যা।” তবে একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “যদি আমরা করেও থাকি, তবে তৃণমূলও কি একই কাজ করবে? তা হলে কীসের পরিবর্তন!” |
|
|
|
|
|