ট্র্যাকে রাজা ভেটেল, আলোনসো জিতলেন মন
গাড়ির গায়ে প্রথমে হাত বোলানো। তার পরে পিঠ চাপড়ে দেওয়ার ঢঙে সাবাশি!
চালক আর তাঁর যন্ত্রের মধ্যে অদ্ভূত স্নেহের সম্পর্ক। চব্বিশ ঘণ্টা আগে, তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, গাড়িটাকে আপনি এমন ভাবে আদর করেন, মনে হবে ওটা যেন গাড়ি নয়, ঘোড়া! সেটা শুনে জার্মান তরুণের সে কী হো হো হাসি! বলেছিলেন, “গাড়ির থেকে তো তবু পোড়া তেল আর রবারের গন্ধ বেরোয়। ঘোড়ার গন্ধটা জানেন তো!”
রবিবার বিকালে বোঝা গেল পোড়া তেলের গন্ধটা তাঁর কতটা প্রিয়। যখন ভারতের দ্বিতীয় ফর্মুলা ওয়ান রেস জিতে স্নেহের হাত বুলিয়ে দিলেন গাড়ির গায়ে। ঠিক তার আগের মুহূর্তেই দেখা গিয়েছে এক বছর আগের অ্যাকশন রিপ্লে। সেই গাড়ির উপর উঠে হাত দু’টো মুঠো করে আকাশের দিকে তুলে ধরা। নতুন বলতে ওই আদরটা। যেটা নিজের বিজয়োৎসবের তালিকায় এ বার আমদানি করেছেন বুদ্ধ সার্কিটের বাদশা সেবাস্তিয়ান ভেটেল!
শ্যাম্পেন-স্নান। ইন্ডিয়ান গ্রাঁ প্রি জেতার পর ভেটেল (বাঁ দিকে) ও আলোনসো। ছবি: এএফপি
এবং রেস জিতে চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে আলোনসোর সঙ্গে ব্যবধানটা তেরো পয়েন্টে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরেও বললেন, “ট্রফিটার এক দিকটায় যদি আমার হাতে ধরা থাকে, তবে অন্য দিকটা ধরে আছে ফের্নান্দো।” এ দিকে, ক্রিকেট বলিউড মিলিয়ে গ্ল্যামারের যে ফল্গুধারাটা গতবার খরস্রোতা ছিল, এ বার সেটা তিরতিরে। অজয় দেবগণ এবং সোনাক্ষী সিংহ এলেন ঠিকই। রেসের আগে ট্রাকে জাতীয় সঙ্গীতেও গলা মেলালেন শানের সঙ্গে। কিন্তু তা দিয়ে কি আর সচিন-শাহরুখ অব্যর্থ রসায়নের মোকাবিলা হয়! যিনি তাও উত্তাপ বাড়াতে পারতেন, সেই সানিয়া মির্জা স্বামী শোয়েবকে নিয়ে সার্কিটে ঢুকলেন রেস শুরুর পরে প্রায় নিঃশব্দে। তবে সচিন-শাহরুখ না থাকলেও ভেটেল বনাম আলোনসো একটা মারকাটারি রেস এ দিন স্ট্যান্ডের হাজার পঁয়ষট্টির জনতাকে তৃপ্তির হাসি নিয়ে বাড়ি ফেরার কারণ দিল। গোটা রেসে ভেটেলকে রুদ্ধশ্বাস তাড়া করে গিয়ে রেস জমিয়ে দেওয়ার গতকালের প্রতিশ্রুতি এ দিন রাখলেন আলোনসো।
জিতলেন না ঠিকই। কিন্তু আবু ধাবিতে পরের রেসের জন্য জার্মানের উপর চাপটা রেখে দিয়ে বললেন, “আমি এখনও বলছি চ্যাম্পিয়নশিপটা আমিই জিতব। এখনও তিন রেসে পঁচাত্তর পয়েন্ট রয়েছে। আমি পিছিয়ে মাত্র তেরো পয়েন্টে। তাই বলছি, ব্রাজিলের শেষ রেসে আমার মুখে হাসিই দেখবেন।”
গতবার শুমাখার আর ভেটেলকে নিয়ে মেতে থাকা বুদ্ধ সার্কিটে নিজেকে একটু গুটিয়েই রেখেছিলেন ফেরারি তারকা। এ বার কিন্তু দেখা গেল আলোনসো ভক্তদের তালিকায় হরভজন সিংহ থেকে আমজনতা। বিশেষ করে এ দিন তাঁর পাঁচ নম্বর থেকে রেস শুরু করে ভেটেলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে দ্বিতীয় হওয়ার মধ্যে ফর্মুলা ওয়ানের রোমাঞ্চের প্রকৃত স্বাদ তারিয়ে উপভোগ করল বুদ্ধ সার্কিট। দুর্ধর্ষ স্টার্ট, প্রথম তিন ল্যাপের মধ্যে দুই প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন লুইস হ্যামিল্টন এবং জেনসন বাটনকে পিছনে ফেলা এবং ৪৮তম ল্যাপে শিহরণ জাগানো ওভারটেকিংয়ে রেডবুলের মার্ক ওয়েবারকে ডিঙিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসে ভেটেলকে তাড়া করা। দিনের শেষে স্ট্যান্ডের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে “আলোনসো, আলোনসো” চিৎকার বলে দিল ভারতে তাঁর ফ্যানবেসটা হইহই করে বেড়ে গিয়েছে।
ইন্ডিয়ান গ্রাঁ প্রি জেতার পর ভেটেল। রবিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই
বাগদত্তা গীতা বসরার সঙ্গে হরভজন সিংহ হাজির হয়ে গিয়েছিলেন এ দিন বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদই। সটান ফেরারির টিম বিল্ডিংয়ে গিয়ে ঢুকলেন আলোনসোর-ভক্ত। পরে বেরিয়ে বললেন, “আমি ওকে শুভেচ্ছা জানাতেই এসেছিলাম। তবে নিজে খেলোয়াড় বলেই জানি মাঠে নামার আগে কত টেনশন থাকে। তাই বেশি বিরক্ত করিনি।” প্রায় একই সময়ে অন্য দিকে মহম্মদ আজহারউদ্দিন। প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের পছন্দ আবার রেড বুল। বলে দিলেন, “ভেটেলকে আজ কেউ হারাতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।” প্যাডক এরিয়া এর পর ভরতে থাকল ভিআইপি-তে। গুটিগুটি হেঁটে আসছেন ওমর আব্দুল্লা। পিট লেনে আগ্রহী দর্শক অরুণ জেটলির পাশে শ্রীদেবীকে পর্দায়ে ফেরানো ‘ইংলিশ-ভিংলিশ’-এর প্রয়োজক আর বালকি। প্যাডক অঞ্চলে ততক্ষণে পৌঁছে গিয়েছেন গগন নারং, সুশীল কুমার এবং বিজয় কুমার।
লন্ডন অলিম্পিকের তিন তারকা আয়োজক জে পি গোষ্ঠীর মুখ রক্ষা করলেন এক রকম। রেসের শেষে চেকারড ফ্লাগ কে নাড়াবেন, তা নিয়ে প্রতিদিন নতুন বিবৃতি দিতে হয়েছে জে পি কর্তাদের। প্রথমে ক্রীড়া মন্ত্রী অজয় মাকেনের নামটা উঠেছিল। কিন্তু দিল্লির রাজপাটে মন্ত্রীদের ঠাঁইনাড়া যে এ দিনই! তাই মাকেন গিয়ে ঋত্বিক রোশন ছিলেন গতকাল রাত পর্যন্ত। কিন্তু তিনিও আসেননি আজ। শেষ পর্যন্ত ফ্ল্যাগ অফ হল অলিম্পিকের ব্রোঞ্জ জয়ী শু্যটারের হাতেই। যিনি বললেন, “আমি দারুণ এক্সাইটেড। এটা বড় সম্মান। ফর্মুলা ওয়ানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভাল লাগছে। আর ভাল লাগছে ভারতে অন্য খেলাতেও মানুষের এই উৎসাহটা।” পিট লেনের ভিতরে অবশ্য ততক্ষণে ম্যাকলারেনকে সমর্থন করার জন্য হাজির নেহা ধুপিয়া। কিছুটা এগিয়ে সপরিবার সোনালি বেন্দ্রে, মন্দিরা বেদী, গুল পনাগদের পাশে ডিনো মোরিয়া। ছেলের হাত ধরে হাজির লকেট চট্টোপাধ্যায়ও। প্রত্যেকেই রেস শুরুর অপেক্ষায়। নেহার আশঙ্কা যদি হয় গাড়ির শব্দ, তো লকেট বললেন, “আরে ওটাই তো মজা।” এর মধ্যে হটাৎ কান ফাটা চিৎকার গ্যালারির। কী? না ফুলের ট্যাবলোয় ট্র্যাকে চালকেরা।
একটু পরেই পিট লেন অবশ্য ফাঁকা। কারণ, স্টার্ট লাইনে পৌঁছে গিয়েছে গাড়িরা। আর পরপর লাল আলো নিভে রেস শুরু হওয়ার পরেই দুরন্ত কয়েকটা স্টিয়ারিংয়ের মোচড়ে স্টাটিং লাইন আপের বিন্যাসটা পাল্টে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিটা চোখ সম্মোহিত হয়ে উঠল ট্রাকের লড়াইয়ে।
দিনের শেষে বুদ্ধ সার্কিটে রেসই হয়ে রইল রাজা।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.