নামেই সুপার মার্কেট। কিন্তু বেচাকেনা নেই। অধিকাংশ ব্যবসায়ীই দোকান খোলেন না। ফলে, সাধারণ ক্রেতাদেরও পা পড়ে না। ১৬ বছর আগে চালু হওয়া থেকেই ধুঁকছে উলুবেড়িয়ার হাটকালীগঞ্জের সুপার মার্কেট। তবে, মার্কেটটি নতুন ভাবে সাজিয়ে চালু করার চেষ্টা হচ্ছে বলে আশার কথা শুনিয়েছে তৃণমূল পরিচালিত উলুবেড়িয়া পুরসভা।
১৯৯৬ সালে তৎকালীন বামফ্রন্ট পরিচালিত পুরসভা নিজেদের খরচে তৈরি করেছিল ওই সুপার মার্কেট। একতলা মার্কেটে ২২টি দোকান করা হয়। পুর কর্তৃপক্ষ দোকানগুলি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ভাড়া দেন। কিন্তু মাত্র ৬টি স্টল নিয়মিত খোলা হয়। তা-ও সেগুলি যাঁরা ভাড়া নিয়েছেন, তাঁরা মূলত পাইকারি ব্যবসা করেন। ফলে, সাধারণ ক্রেতাদের যাতায়াত কম।
মার্কেটের কাছেই হুগলি নদীর আছিপুর খেয়াঘাট। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ ওই খেয়াঘাট হয়ে উলুবেড়িয়া শহরে যাতায়াত করেন। ফলে, মার্কেটটি সরগরম হওয়াই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তা হয়নি। এ জন্য পুরসভার পরিকল্পনার অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন ওই মার্কেটের এক ব্যবসায়ী। |
ওই ব্যবসায়ীর কথায়, “মার্কেটটি নিয়ে পুরসভার পক্ষ থেকে তেমন কোনও প্রচার হয়নি। শহরের বিভিন্ন এলাকায় হোর্ডিং বা সাইন বোর্ড দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। তা-ও করা হয়নি।” এ ছাড়াও পরিকাঠামোর অভাবকেও দায়ী করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব রয়েছে এখানে। শহর এলাকা থেকে এই সুপার মার্কেটে আসতে হলে রিকশা ছাড়া গতি নেই। মার্কেটে প্রথম থেকে কোনও শৌচাগার করা হয়নি। জলের সংযোগ ছিল না। এই সব কারণে অনেক ব্যবসায়ীই দোকান ভাড়া নিয়েও পরে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।” একই বক্তব্য আরও কয়েক জন ব্যবসায়ীরও।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সব ব্যবসায়ী দোকান ভাড়া নিয়েও চালু করেননি, তাঁদের একাংশ দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। পুরসভার পক্ষ থেকে দোকানগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু ওই ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুতের বিল মেটাননি। ফলে, রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিয়েছে। মুষ্টিমেয় যে সব ব্যবসায়ী দোকান খুলে ব্যবসা চালাচ্ছেন, তাঁরা নিজেদের উদ্যোগে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছেন।
সুপার মাকের্টটি যে দীর্ঘদিন ধরে ধুঁকছে, সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন তৎকালীন পুরসভার পূর্ত দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পারিষদ সিপিএমের বদরুদ্দোজা মল্লিক। তিনি বলেন, “প্রথম দিকে ব্যবসায়ীদের মধ্যে কিন্তু দোকান ভাড়া নেওয়ার বেশ আগ্রহ ছিল। রীতিমতো লটারি করে দোকান ভাড়া দেওয়া হয়। কিন্তু তার পর যাঁরা দোকান ফেলে রাখেন, তাঁদের আমরা দোকান খোলার জন্য একাধিকবার অনুরোধ করেছিলাম। না-হলে দোকান ছেড়ে দিতে বলেছিলাম।”
বর্তমানে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা নতুন করে মাকের্টটিতে প্রাণ ফেরানোর চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে মার্কেটে শৌচালয় করে দেওয়া হয়েছে। হয়েছে পানীয় জলের ব্যবস্থাও। মার্কেটটি পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের আব্বাস খান বলেন, “যে দোকানগুলি ভাড়া নিয়েও ব্যবসায়ীরা খোলেননি, তাঁদের কাছে চিঠি দিয়ে সমস্যার কথা জানতে চাওয়া হবে। দোকানগুলি নতুন করে সাজানো হবে। গঙ্গার ঘাট থেকে অটোরিকশা চালানো হবে। সব কিছু মিলিয়ে একটা ‘মাস্টার প্ল্যান’ তৈরি হচ্ছে। পুরসভার সাধারণ বৈঠকে ‘মাস্টার প্ল্যান’ অনুমোদিত হলে কাজ শুরু হবে।” |