সম্পাদকীয় ১...
মরিয়ার মার
ত কয়েক দিনে একটি প্রত্যাশা তৈয়ারি হইয়াছিল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় বড় পরিবর্তনের প্রত্যাশা। মনমোহন সিংহ এবং সনিয়া গাঁধী সেই প্রত্যাশা অপূর্ণ রাখিয়াছেন, এমন কথা বলিলে ভুল হইবে। মন্ত্রিসভার আয়তন সাতষট্টি হইতে আটাত্তর, আট মন্ত্রীর পদত্যাগ, বাইশ জনের শপথ, সতেরোটি নূতন মুখ সংখ্যার বিচারেই পরিবর্তনটি ছোট নহে। কিন্তু সংখ্যা সতত গৌণ। পরিবর্তনের মুখ্য তাৎপর্য কয়েকটি চরিত্রলক্ষণে। বিদেশমন্ত্রীর আসন হইতে এস এম কৃষ্ণের বিদায় অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল, কারণ তিনি এই পদে সম্পূর্ণ ব্যর্থ, তদুপরি প্রায়শ লজ্জার কারণ। অর্থ এবং স্বরাষ্ট্র, দুই মন্ত্রকে পরিবর্তন ইতিপূর্বেই ঘটিয়াছে। চারটি ‘বৃহৎ’ মন্ত্রকের মধ্যে কেবল প্রতিরক্ষায় এ কে অ্যান্টনি, তাঁহার প্রমাণিত অদক্ষতা লইয়াও, টিকিয়া গেলেন। তবে, মানিতেই হয়, রাজনীতি শেষ অবধি সম্ভাব্যতার শিল্প, এবং আপস সম্ভাব্যতার দোসর। রাজনীতির তাগিদেই মন্ত্রিসভায় পশ্চিমবঙ্গ বা অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্য বৃহত্তর ভূমিকা পাইয়াছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষার্থেও তাহার প্রয়োজন ছিল। প্রয়োজন ছিল একই মন্ত্রীর হাতে একাধিক মন্ত্রক রাখিবার অ-দক্ষ ব্যবস্থাটি প্রত্যাহারের, প্রয়োজন ছিল কপিল সিব্বলের হাত হইতে মানবসম্পদ উন্নয়নের দায়িত্ব সরাইয়া লইবার, কারণ এই মন্ত্রকটিকে তিনি রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার উপর আপন মর্জি চাপাইয়া দেওয়ার অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করিয়া চলিয়াছিলেন। মনমোহন সিংহ আরও বলিষ্ঠ হইতে পারিতেন কি না, তাহা নিষ্ফল জল্পনার বিষয়। তাঁহার নেত্রী তাঁহাকে অনেকখানি বলিষ্ঠ হইতে দিয়াছেন, ইহা অনস্বীকার্য।
বলিষ্ঠতার অন্য সঙ্কেতও মিলিয়াছে। প্রথমত, অধীর চৌধুরী বা দীপা দাশমুন্সির মন্ত্রিত্ব প্রাপ্তিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রীত হইবেন না, সৌগত রায়ের আশঙ্কা সত্য হইলে ‘উত্ত্যক্ত’ও হইতে পারেন। এবং পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস উজ্জীবিত হইবে, বিশেষত উত্তরবঙ্গের ঘাঁটিতে। প্রত্যয়ী রাজনীতি বইকী। দ্বিতীয়ত, সলমন খুরশিদকে বিদেশমন্ত্রীর পদে উন্নীত করিয়া কংগ্রেস নেতৃত্ব অরবিন্দ কেজরিওয়ালদের বাউন্সারকে সপাটে মাঠের বাহিরে পাঠাইয়া দিতে চাহিয়াছেন, শশী তারুরের প্রত্যাবর্তনেও সেই একই প্রতিস্পর্ধা। উভয়েই দক্ষ এবং যোগ্য। এক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আপাতত অভিযোগমাত্র, অন্য জনকে লইয়া সওয়াল-জবাব প্রায় সুদূর অতীত। সনিয়া-মনমোহন দৃশ্যত বলিতে চাহিয়াছেন, ‘দুর্নীতি’র রব উঠিলেই তাঁহারা ভয় পাইয়া দক্ষ এবং যোগ্য নায়কদের লুকাইয়া ফেলিবেন না, বাড়তি দায়িত্ব দিবেন। অর্থাৎ পা আগাইয়া খেলিবেন। ইহা প্রত্যয়ের লক্ষণ। সুলক্ষণ। লক্ষণ চরিতার্থ হইবে কি না, তাহা অন্য প্রশ্ন। ইউ পি এ’র দ্বিতীয় অবতার এ-যাবৎ ব্যর্থ। ব্যর্থতার দুইটি প্রধান কারণ: অদক্ষতা এবং দুর্বলচিত্ততা। প্রধানমন্ত্রী ‘তারুণ্য এবং অভিজ্ঞতা’র ভারসাম্যের কথা বলিয়াছেন। না বলিলেও চলিত। প্রশ্ন তারুণ্যের নয়, প্রশ্ন দক্ষতার। মন্ত্রিসভার এই রদবদলের ফলে দক্ষতার মাত্রা বাড়িবে। তরুণ মন্ত্রীরা যে অনেকেই আপাতত সহযোগীর ভূমিকায়, তাহারও যুক্তি রহিয়াছে সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে পারিলে ভবিষ্যতে তাঁহাদের পদোন্নতি সম্ভব। উন্নতির সেই পথই কাম্য। কিন্তু দক্ষতা বাড়িলেই কি দুবর্ল চিত্ত সবল হয়? দ্বিধা ঘুচিয়া যায়? প্রথম তিন বছরে এই সরকার বহু কাজ করে নাই, দৃঢ় পদক্ষেপে অগ্রসর হইতে পারে নাই, ক্রমাগত দ্বিধান্বিত চিত্তে পা ঘষিয়াছে, ফলে শাসনের লাগাম তাহার হাতছাড়া হইয়াছে। অবশেষে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে দেওয়ালে পিঠ ঠেকিতে তাহার সংবিৎ কিছুটা ফিরিয়াছে। মনমোহন সিংহ যে অপ্রিয় এবং জরুরি সিদ্ধান্ত লইতে পারেন, দেশবাসী সে কথা ভুলিয়া গিয়াছিল, তিনি আবার তাহা মনে করাইয়া দিয়াছেন। এখন, নূতন মন্ত্রিসভাকে সঙ্গে লইয়া তিনি যদি সেই উদ্যম ধরিয়া রাখিতে পারেন, মঙ্গল। কংগ্রেস নেতৃত্ব জানেন, তাঁহাদের হারাইবার আর কিছু নাই। ২০১৩ আসন্ন, ২০১৪-ও অদূরে। ঘুরিয়া দাঁড়াইবার ইহাই শেষ সুযোগ। প্রধানমন্ত্রী বলিয়াছেন, ইহাই সম্ভবত মন্ত্রিসভার শেষ রদবদল। তাঁহার কণ্ঠে কি মরিয়ার সুর? যদি তাহা হয়, তবে ভরসা আছে। ভরসার নাম: মরিয়ার মার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.