এখনও ভরসা পুরনো ছড়াই।
অপরাধী তো আছেই। পাশাপাশি ছড়ার সন্ধানেও এই মুহূর্তে মাথার ঘাম পায়ে ফেলছে কলকাতার পুলিশ। কিন্তু ছড়া কোথায়?
ট্র্যাফিক পুলিশের প্রচার অভিযানের জন্য যুতসই ছড়া (জিঙ্গল) হাতে না-পেয়ে ঘোর চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন শহরের উর্দিধারীরা। এক-আধ মাস নয়, ছড়ার আকাল চলছে দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে।
কলকাতা পুলিশের কর্তাদের দাবি: অবিতর্কিত, অরাজনৈতিক অথচ জনপ্রিয় এবং একই সঙ্গে পথে চলার শৃঙ্খলা-শিক্ষার সঙ্গে খাপ খায়, প্রচারের উপযোগী এমন বিষয় ইদানীং পাওয়া যায়নি। তাই ছড়া বানানো যায়নি।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে তৈরি, ট্র্যাফিক পুলিশের প্রচারাভিযানে ব্যবহৃত শেষ ‘জিঙ্গল’টি শহরের রাজপথে মুখ দেখিয়েছিল গত মে’র শেষ সপ্তাহে, কলকাতা নাইট রাইডার্স আইপিএল জেতার পরে। ‘নাইট নাইট/রাইডিং ব্রাইট/ড্রাইভ সেফ/ডে অ্যান্ড নাইট।’ সঙ্গে রঙিন কার্টুন হুডখোলা গাড়িতে ট্রফি হাতে শাহরুখ খান ও তাঁর সঙ্গে গৌতম গম্ভীর, মনোজ তিওয়ারি, ইউসুফ পাঠানেরা। ওখানেই ইতি। জুন থেকে অক্টোবর এই সময়ে একটাও নতুন জিঙ্গল বেরোয়নি কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের প্রচারে। ছড়ার সঙ্গে মানানসই কার্টুনগুলো আঁকে এক বিজ্ঞাপন সংস্থা, পুলিশের নির্দেশ অনুযায়ী। ছড়া লিখে দেয় পুলিশ নিজেই।
কিন্তু সেই ছড়ার জোগান পাঁচ মাস বন্ধ।
তাই শহরের ২২৫টি সিগন্যাল পোস্ট ও কিয়স্কের মাথায় বসানো হোর্ডিংয়ে পুরনো ছড়াগুলোই ম্যাড়ম্যাড় করছে রোদে-জলে পুড়ে বিবর্ণ কার্টুনের সঙ্গে। এমনকী, এ বার দুর্গাপুজোর আগেও নতুন জিঙ্গল নামাতে পারেনি কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ। |
অথচ গোড়ায় পুলিশ ঠিক করেছিল, প্রতি মাসে না-হোক, অন্তত দেড় মাস অন্তর নতুন একটা ছড়া বার করা হবে। কলকাতায় সম্প্রতি প্রতি বছর গড়ে অন্তত চারশো মানুষ পথ দুর্ঘটনায় মারা যান। এ বছর এ পর্যন্ত সংখ্যাটা প্রায় চারশো। পুলিশ-কর্তাদের মতে, জনপ্রিয় বিষয়ের ভিত্তিতে বানানো ছড়া-কার্টুনের মিশেলে ওই প্রচার পথচারী-গাড়িচালকদের আকর্ষণ করেছে, তাঁদের সচেতনতা বাড়াতে সহায়ক হয়েছে।
ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তার কথায়, “শাসন ও জরিমানায় অনেক সময়ে যে কাজ হয় না, সেটাই মজা করে কিংবা নরম কথায় সহজে হয়।” কী রকম?
উদাহরণও দিচ্ছেন তিনি। যেমন, হেলমেট ব্যবহারের জন্য কোলাভেরি ডি-র প্যারডি করে ট্র্যাফিক পুলিশের হোর্ডিংয়ে বলা হয়েছিল, ‘হোয়াই দিস হিরোগিরি হিরোগিরি ডি।’ কার্টুনে ছিল, মোটরসাইকেল আরোহী মহিলা ও তাঁর পুরুষ সঙ্গী চালক দু’জনেরই মাথা খালি। কিংবা বাবা-মার সঙ্গে দু’চাকায় সওয়ার খুদেটির মাথাও যাতে হেলমেটে ঢাকতে ভুল না হয়, সে জন্য জনপ্রিয় বাংলা ছবির গানের সঙ্গে মিলিয়ে লেখা হয়েছিল, ‘খোকাবাবু যায়, হেলমেট কোথায়?’ ওঁর দাবি, “সাধারণ মানুষের অনেকেই তাঁদের ভাল
লাগার কথা আমাদের জানিয়েছিলেন। অর্থাৎ তাঁরা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তবে ওই সময়ে দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দিয়ে এ জাতীয় প্রচারের প্রভাব বোঝা যাবে না।”
কিন্তু ছড়ার আকাল মিটবে কী করে?
কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (২) সৌমেন মিত্র বলেন, “ট্র্যাফিক পুলিশের প্রচারে ছড়ার ব্যবহার যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তা নয়। আসলে আমাদের মাপকাঠি মেনে ছড়া তৈরির মতো ঘটনা এর মধ্যে ঘটেনি। তবে শিগগিরই আমরা নতুন ছড়া আনব।”
উল্লেখ্য, মাখন প্রস্তুতকারী এক সংস্থার জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনের কথা মাথায় রেখেই ছড়া দিয়ে ট্র্যাফিক-সচেতনতা বৃদ্ধির অভিযানে নেমেছিল কলকাতা পুলিশ। “কিন্তু মাখনের বিজ্ঞাপনে ছড়া বা স্লোগান লেখায় যে স্বাধীনতা আছে, পুলিশের তা নেই। আমরা কোনও রাজনৈতিক বা সামাজিক ঘটনা কিংবা বিতর্কিত বিষয়ে ঢুকতে পারব না।” বলেন ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা। তাঁর মন্তব্য, “এই কারণেই জিঙ্গল লেখার ভার বিজ্ঞাপন সংস্থার হাতে ছাড়া হয়নি। পাছে সামান্য অসতর্কতার জেরে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে যায়।”এবং ওঁদের দাবি, নাইট রাইডার্স আইপিএল জেতার পরে আর কোনও ‘নিরাপদ’ অথচ তুমুল জনপ্রিয় বিষয় পুলিশ খুঁজে পায়নি। লালবাজার-সূত্রের খবর: লন্ডন অলিম্পিকে বাঙালি শু্টার
জয়দীপ কর্মকার ব্রোঞ্জ জিতলেও পুলিশ ‘জয় জয়দীপ’ গোছের কিছু আনার কথা ভেবেছিল। মেরি কম বা সাইনা নেহাল সোনা জিতলেও হয়তো নতুন ছড়া তৈরি হতো। অভিনব এই প্রচারের অন্যতম কাণ্ডারী, কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্র্যাফিক) সুপ্রতিম সরকার অবশ্য বলছেন, “নতুন ছড়া তৈরি না-হলেও পুরনো কয়েকটির প্রাসঙ্গিকতা এখনও হারায়নি। যেমন, খোকাবাবু যায় গানটা এখনও জনপ্রিয়।”
কিন্তু ফ্যাকাসে পোস্টারগুলো ঝকঝকে হচ্ছে না কেন? সুপ্রতিমবাবু বলেন, “এ ব্যাপারে যে আমাদের ত্রুটি রয়েছে, তা অস্বীকার করব না।” |