সূচক এখন ‘সংস্কারমুক্ত’। অর্থনৈতিক সংস্কারের সুফল দীর্ঘস্থায়ী হয়নি শেয়ার বাজারে। বাজার আবার ওঠানামা শুরু করেছে বিশ্ব বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। কিছুটা প্রভাব আছে ত্রৈমাসিক কোম্পানি ফলাফলেরও। সংস্কারের প্রস্তাবে বাজার যে শক্তি পেয়েছিল তা এখন অনেকটাই স্তিমিত। ফলে ১৯ হাজার ছুঁয়ে সেনসেক্স ফের নেমে এসেছে কমবেশি ৫০০ পয়েন্ট। হঠাৎ বেড়ে ওঠা বিদেশি লগ্নি প্রবাহও কমেছে খানিকটা। ফলে আবার গুটি গুটি বাড়ছে ডলারের দাম। সামনে মার্কিন নির্বাচন। দেশের রাজনৈতিক চিত্রটিও এখন স্পষ্ট নয়। এর পাশাপাশি মঙ্গলবার আছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতির পর্যালোচনা। এই অবস্থায় বড় মাপের লগ্নিকারীরা পরিস্থিতিটা একটু বুঝে নিতে চাইছেন।
পুজো-দশেরার মাস হলেও এরই মধ্যে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক তথা ২০১২-’১৩ বছরের প্রথম ষান্মাসিক ফলাফল প্রকাশ করেছে বেশ কিছু কোম্পানি। দেশ ও বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির নিরিখে এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত ফল মোটের উপর ভালই বলা যায়।
ইনফোসিসের ফলে বাজার কিছুটা হতাশ হলেও টিসিএস তা পুষিয়ে দিয়েছে। আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক এবং এনটিপিসি-র নিট লাভ বেড়েছে ৩০% করে। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে এই দুই সংস্থার লাভ পৌঁছেছে যথাক্রমে ১,৯৫৬ কোটি এবং ৩,১৪২ কোটি টাকায়। প্রথম সারির ভোগ্যপণ্য সংস্থা হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের মুনাফা বেড়েছে ১৭%। ১০% বেড়েছে গ্যাস অথরিটির লাভ। ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্কের লাভ বেড়েছে ২৪%। ডাবরের ১৬%। ৩০% লাভ বেড়েছে ইয়েস ব্যাঙ্কের। ২২% বেড়েছে এম অ্যান্ড এম-এর। আকর্ষণীয় ফল উপহার দিয়েছে এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক ও অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক। ১৬% লাভ বেড়েছে ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের। খারাপ ফলের তালিকায় এগিয়ে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক। তাদের লাভ কমায় শেয়ার দর অনেকটাই পড়েছে। বিপিও সংস্থা ফার্স্টসোর্স সলিউশন্স কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সিইএসসি শেয়ারের দরও ৩৩২ টাকা থেকে ১৫.৩২% কমে ২৮১ টাকায় নেমেছে।
মঙ্গলবার দিনটাও বাজারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এই দিন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বসবে ষাণ্মাসিক ঋণনীতি পর্যালোচনায়। পণ্য-মূল্য না কমায় সুদ কমার আশা করছেন না কেউ। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের আশা নগদের অনুপাত (সিআরআর) আরও এক ধাপ কমতে পারে। ঋণনীতি দেখে লগ্নির সিদ্ধান্ত নেবেন অনেকে। দিওয়ালির আগেই বেরোবে বেশির ভাগ কোম্পানি ফলাফল। এর পরেই দিক নির্ণয় করবে শেয়ার বাজার।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এখনও সরাসরি সুদ কমানোর পথে না হাঁটলেও স্টেট ব্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অল্প হলেও সুদ কমিয়েছে জমা এবং ঋণে। সুদ কমেছে বাড়ি ও গাড়ি ঋণেও। স্টেট ব্যাঙ্ক ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত গৃহঋণে এখন সুদ নিচ্ছে ১০%। কমানো হয়েছে প্রসেসিং ফি-ও। ব্যাঙ্কের গাড়ি ঋণে সুদ ১০.৫০%। ৭ বছর মেয়াদি ঋণে প্রতি লাখে ইএমআই ১,৬৮৬ টাকা। ‘বিশ্ব যাত্রা’ নাম দিয়ে এসবিআই বাজারে ছেড়েছে বিদেশ যাত্রা কার্ড। উপহার দিতে এনেছে গিফট কার্ড। ব্যাঙ্কের মাল্টি অপশন ডিপোজিট স্কিমে রাখা আমানত প্রয়োজনে তোলা যায় সম্পর্কযুক্ত সেভিংস অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। সেভিংস প্লাস অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম ব্যালেন্স ১৫,০০০ টাকা। এর উপর জমা ১০,০০০ টাকা ছাড়ালেই তা স্বয়ংক্রিয় ভাবে স্থানান্তরিত হয় মেয়াদি জমা অ্যাকাউন্টে। অর্থাৎ মাত্র ৪% সুদে তা পড়ে থাকবে না সেভিংস অ্যাকাউন্টে।
২০১২-’১৩ আর্থিক বছরের অর্ধেকেরও বেশি কেটে গিয়েছে। উৎসবের মরসুম শেষ হলেই কর সাশ্রয় নিয়ে ভাবতে বসতে হবে। ৮০ সি ধারা মাফিক ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নি করতে হবে এক বা একাধিক করসাশ্রয়কারী প্রকল্পে। ২০১১-’১২ অর্থবর্ষের আয়কর রিটার্ন যাঁদের এখনও দাখিল করা হয়নি, তা অবশ্যই সেরে ফেলতে হবে অতি দ্রুত। অনেকটা ওঠার পর সোনা এখন কিছুটা ম্লান। ফের চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে ধনতেরাসের মুখে। |