মোকাবিলার ব্যবস্থা নেই, জলের বিপদে অথৈ জলে কালনা
ভাগীরথী, বেহুলা, খড়ি, গুরজোয়ানির মতো বড় নদী রয়েছে মহকুমা জুড়ে। অতিবৃষ্টি হলেই ওই সব নদীর জল উপচে প্লাবিত হয় তীরবর্তী এলাকাগুলি। কিন্তু এই ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য কালনা মহকুমায় নেই মোটরচালিত স্পিড বোট, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডুবুরি-সহ কোনও আধুনিক সরঞ্জাম। উদ্ধারকাজে এখনও ভরসা মান্ধাতার আমলের নৌকাই।
দিন কয়েক আগেই পূর্বস্থলীর নারায়ণপুর গ্রামের ভকতপাড়ায় ভাগীরথীর ঘাটে স্নান করতে গিয়ে তলিয়ে যায় চার পড়ুয়া। পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক দাবি করেন, উদ্ধার কাজের জন্য প্রয়োজন ছিল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডুবুরি ও আধুনিক সরঞ্জামের। মহকুমায় এই ধরনের পরিকাঠামো নেই জানতে পেরে তিনি যোগাযোগ করেন কাটোয়া মহকুমার বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সঙ্গে। রাতে কাটোয়া থেকে আসে স্পিড বোট ও ডুবুরি। দুপুরে নিখোঁজ হওয়া পড়ুয়াদের খোঁজ শুরু করতে রাত হয়ে যায়। উদ্ধারকাজে যোগ দিতে কালনার মহকুমাশাসক শশাঙ্ক শেঠি পাঠান সদ্য ‘সিভিল ডিফেন্স’ প্রশিক্ষণ নেওয়া পাঁচ যুবককে। কিন্তু তাঁরা ভয়াল ভাগীরথীতে ঝুঁকি নিয়ে নামতে ভয় পান। ফলে ঘটনার দিন রাতে কাউকেই উদ্ধার করা যায়নি। পরের দিন তিনটি দেহ উদ্ধার হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ভেসে ওঠে আর একটি দেহ। বাসিন্দাদের দাবি, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডুবুরি ও উন্নত সরঞ্জাম থাকলে হয়তো ঘটনার দিন সকালেই দেহগুলি উদ্ধার করা সম্ভব হত।
প্রয়োজন এমন স্পিডবোটের। —নিজস্ব চিত্র।
অতিবৃষ্টিতে মাঝেমধ্যেই প্লাবিত হয় মহকুমার ৫০টিরও বেশি গ্রাম। ঘর ছেড়ে বাসিন্দারে আশ্রয় নিতে হয় ত্রাণশিবিরে। কালনা ১ ব্লকের নান্দাই পঞ্চায়েতের প্রধান ঈদের আলি মোল্লার দাবি, “অতিবৃষ্টি হলেই গুরজোয়ানি, খড়ি নদীর জল উপচে ঘুঘুডাঙা-সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। দুর্গতদের উদ্ধারকাজে ভরসা পুরনো নৌকাই। স্পিড বোট ও ডুবুরি থাকলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া অনেক সহজ হত।”
পূর্বস্থলীর বাসিন্দা আতাউর রহমানের কথায়, “বেশি বৃষ্টি হলেই ভয় হয়, এই বুঝি নদীর জল খেত বেয়ে রাস্তায় ঢুকে পড়ল। স্পিড বোটের ব্যবস্থা থাকলে হয়তো উদ্ধারকাজের গতি আরও বাড়ত।”
শুধু বন্যা পরিস্থতি মোকাবিলাই নয়, খেয়া পারাবারের পথে অঘটন রুখতেও প্রয়োজন উন্নত পরিকাঠামো। মহকুমার অন্তত ৪০টি গ্রাম যাতায়াতের জন্য নদীপথ ব্যবহার করেন। কালনা শহরে ভাগীরথীর খেয়াঘাটে ভিড় থাকেই। তবে তা বাড়ে মহিষমর্দিনী পুজো, সরস্বতী পুজো-সহ নানা উৎসব-অনুষ্ঠানে। বাড়ে বিপদের সম্ভাবনাও।
কালনা পুরসভার উপপুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, “নৌকা পারাপারের পথে যে কোনও সময়ই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু তা মোকাবিলা করার জন্য মহকুমায় নেই প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো। বিষয়টি প্রশাসনের গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।”
নদীপথে দুর্ঘটনা ও বন্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় যে উন্নত পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে, তা স্বীকার করেছে মহকুমা প্রশাসন। কালনার মহকুমাশাসক শশাঙ্ক শেঠি বলেন, “সমস্যা সমাধানের জন্য মোটরচালিত বোট আনার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি জলে উদ্ধারকাজে পারদর্শী করার জন্য ‘সিভিল ডিফেন্স’-র প্রশিক্ষণ নেওয়া পাঁচ যুবকের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.