...উৎসবের আলো: ধন্য পুজো
স্মৃতিতে শ্রীরামকৃষ্ণ
‘শ্রীযুক্ত অধরের বাড়িতে নবমী পূজার দিনে ঠাকুরদালানে শ্রীরামকৃষ্ণ দণ্ডায়মান। সন্ধ্যার পর শ্রীশ্রীদুর্গার আরতি দর্শন করিতেছেন। অধরের বাড়ি দুর্গাপূজা মহোৎসব, তাই তিনি ঠাকুরকে নিমন্ত্রণ করিয়া আনিয়াছেন।’
(শ্রীম-কথিত শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত, পঞ্চম ভাগ, দশম খণ্ড, প্রথম পরিচ্ছেদ)
সেই অধরলাল সেন-এর বাড়ির দুর্গাপুজো এ বার ১৫৪ বছরে পদার্পণ করছে। সেন পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা রামগোপাল সেন। পুজো শুরু করেন তিনি। ৯৭বি বেনিয়াটোলা লেন, কলকাতা ৫-এর অধর-আলয়ে পুজোর প্রস্তুতি জোর কদমেই চলছে, জানালেন সুনন্দা সেন ও চণ্ডীদাস সেন। ওঁরা অধরলাল সেনের ভাই হীরালাল সেনের নাতি ও নাতবৌ। মূলত এঁরাই পরিবারের সকলকে নিয়ে এই প্রাচীন পুজো টিকিয়ে রেখেছেন।
দেবীপক্ষের শুরুতে প্রতিপদেই পুজোর বোধন হয়। পুজো হয় গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে। মাটির একচালা মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তির আদলে দেবী দুর্গা। প্রতিমাশিল্পী হেমন্ত পাল ও চায়না পাল। বংশপরম্পরায় এঁরাই প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছেন। পুজো হয় বৈষ্ণব মতে, হয় কুমারী পুজো। ওই এলাকা থেকেই কুমারী (৫-১২ বছর) বাছাই করা হয়। পুজোয় ঢাক বাজে না, কাঁসরঘণ্টা, ঘড়ি বাজানো হয়। অন্নভোগ হয় না। লুচি, ভাজা, মিষ্টি। অষ্টমীর দিন ধুনো পোড়ানো হয়। শ্রীম লিখেছেন, ‘আজ বুধবার ১০ অক্টোবর ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে আশ্বিন। শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে আসিয়াছেন, তন্মধ্যে বলরামের পিতা ও অধরের বন্ধু অবসরপ্রাপ্ত স্কুল ইনস্পেক্টর সারদাবাবু আসিয়াছেন।...শ্রীরামকৃষ্ণ সন্ধ্যার পর আরতি দর্শন করিয়া ভাবাবিষ্ট হইয়া ঠাকুরদালানে দাঁড়াইয়া আছেন। ভাবাবিষ্ট হইয়া মাকে গান শুনাইতেছেন।’
শ্রীমতী সেন বলছিলেন, ‘‘পুজোর ক’দিন দু’বেলা সবাই মিলে খাওয়াদাওয়া হয়। ১০০ জনের পাত পড়ে। এ বড় আনন্দের জিনিস। জানি না কত দিন এটা থাকবে। গত বছর পুজোয় খরচ হয়েছিল দেড় লক্ষ টাকা। এ বার সব জিনিসের দাম বেড়েছে। স্বভাবত পুজোর খরচও বাড়বে। আপ্রাণ চেষ্টা করছি ঐতিহ্যপূর্ণ এবং শ্রীরামকৃষ্ণের পুণ্য স্মৃতিধন্য এই পুজো টিকিয়ে রাখার।’’
অধরলাল সেন
অধরলাল সেন এবং হীরালাল সেন দু’জনেই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। অধরলালের বিশেষ বন্ধু ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। এই বাড়িতেই বঙ্কিমচন্দ্রের সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণের সাক্ষাৎ এবং দীর্ঘ আলাপচারিতা হয়। আবার এই বাড়িতেই স্বামী বিবেকানন্দ এক দিনে ২৪টি গান গেয়েছিলেন।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.