কলামটা লিখতে বসার আগে ইন্টারনেটে গাংনাম ভিডিওটা দেখছিলাম। বোঝার চেষ্টা করছিলাম, কী এমন আছে নাচটায় যেটা নিয়ে গোটা বিশ্বে এত হইচই পড়ে গিয়েছে! একটা সত্যি কথা বলব? টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ক্রিস গেইলের গাংনাম নাচ দেখার আগে ব্যাপারটা নিয়ে আমি কিছুই জানতাম না। তখন ভেবেছিলাম, জামাইকায় হয়তো এখন এ রকম নাচ খুব জনপ্রিয়। তার পরে এক বন্ধুর কাছে পুরো ব্যাপারটা জানতে পারলাম। ও-ই আমাকে বলল, এই নাচের নাম গাংনাম। কোরিয়ায় যার মিউজিক ভিডিওটা প্রচণ্ড জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ইন্টারনেটে তো দেখছি গাংনামের ছড়াছড়ি! বুঝতে পারছি কেন। পুরো ভিডিওটা দারুণ কিছু না হলেও গানের সুরটা কিছু কিছু জায়গায় বেশ ভাল। নাচের স্টেপগুলো? দেখতে বেশ মজা লাগে ঠিকই। কিন্তু ওই ভাবে নাচা মোটেও সহজ নয়। আর সত্যি বলতে কী, অনেক অনুরোধ করেও আমাকে কেউ নাচাতে পারেনি। আমার কাছে গাংনাম মজার একটা ভিডিও। যা দেখে বোঝা যায় তার সৃষ্টিকর্তা পার্ক জে স্যাং বা সাই-এর দৃষ্টিভঙ্গি সাধারণ মানুষের চেয়ে কত আলাদা। নতুন ভাবনা আপনাকে শেষ পর্যন্ত কোথায় নিয়ে যাবে, কেউ জানে না!
ক্রিকেটেও কিন্তু তফাত গড়ে দেয় নতুন ধরনের ভাবনাচিন্তা। সাফল্য তখনই আসবে যখন তুমি নিজেকে আরও বড় চ্যালেঞ্জের সামনে ফেলবে। যখন আলাদা ভাবে ভাববে। যখন তুমি সৃষ্টিশীল হওয়ার চেষ্টা করবে। এমনিতে আমার ক্রিকেট দেখলে মনে হবে, এ কপিবুকের বাইরে বেশি বেরোয় না। কিন্তু আমি চেষ্টা করি নিজের মননে নতুনত্ব আনার। স্কিল ব্যবহার করে।
একটা উদাহরণ দিই। এ বারের আইপিএলে এক জন নির্দিষ্ট বোলারের বিরুদ্ধে আমি ধারাবাহিক ভাবে রান পাচ্ছিলাম। এই বোলারের সঙ্গেই অতীতে আমার অনেক বার কথা কাটাকাটি হয়েছে। ওর ওভার চলাকালীন বা তার মাঝখানের সময় ওর সামনাসামনি পড়লে আমি কখনও মৌখিক লড়াইয়ে পিছপা হতাম না। এ বার আইপিএলে কিন্তু আমি একদম চুপচাপ ছিলাম। যদিও সেই বোলার আমাকে সমানে গালাগালি দিয়ে গিয়েছে। বুঝতে পারছিলাম আমি পাল্টা গালাগালি না দিলে ও আরও মেজাজ হারাচ্ছে। তাই ইচ্ছে করে চুপ থাকছিলাম। মৌখি ক লড়াইটা না হলে ওর সেরা খেলাটা বেরোচ্ছিল না। আর আমি কিছুতেই সেই লড়াইয়ের রাস্তায় যাচ্ছিলাম না। বিশ্বাস করবেন না, এই স্ট্র্যাটেজিটা কী সুন্দর খেটে গিয়েছিল। গাংনামের মতো সৃষ্টিশীল নয় ঠিকই। কিন্তু বিপজ্জনক ওই বোলারকে কাবু করার জন্য এটাই ছিল আমার নতুন ধরনের ভাবনা।
এই মুহূর্তে দলগত ভাবে আমার কেকেআরের অবশ্য সৃষ্টিশীল হওয়ার কোনও দরকার নেই। ক্রিকেটের ছোটখাটো জিনিসগুলোই আমরা ঠিকঠাক করতে পারিনি। টুর্নামেন্টে আমাদের শেষ ম্যাচের প্রস্তুতি নিতে নিতে মনে হচ্ছে, আমাদের তিনটে জিনিস খুব দরকার। প্ল্যানিংয়ের ভিত, টেকনিক আর ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলার মতো শক্তিশালী মানসিকতা। এমন নয় যে এগুলো করার চেষ্টা আমরা করিনি। কিন্তু যথেষ্ট ভাল ভাবে করতে পারিনি। অন্তত একটা জয় দিয়ে যদি টুর্নামেন্টটা শেষ করতে পারি, সেটা তবু কিছুটা সান্ত্বনা হবে। যদিও কেপটাউনের আবহাওয়া দেখে রবিবারের টাইটান্স ম্যাচ নিয়ে খুব বেশি আশা করতে পারছি না।
তবু, বড় ব্যবধানে জয় আর তার পরে কেকেআরের নিজস্ব গাংনাম নাচদুইয়ে মিলে টুর্নামেন্ট শেষ হলে মন্দ হয় না। আমাদের টিমের বেশ কয়েক জন আছে যারা গাংনাম বেশ ভালই নেচে দিতে পারবে। ডান্সফ্লোরে এরা ক্রিস গেইলকে ভাল সঙ্গ দিতে পারে! একটু আগে শুনলাম, এল এ লেকার্স টিমের বাস্কেটবল তারকা ডোয়াইট হাওয়ার্ড নাকি বলেছে, গাংনাম নেচে ওর কোমর আর নীচের দিকের পেশিগুলো অনেক শক্তিশালী হয়েছে! আর কোথায় যেন পড়েছিলাম, কোন এক দেশের এক মন্ত্রী তাঁর স্বদেশীদের পরামর্শ দিয়েছেন, গাংনাম নাচের সৃষ্টিশীলতা অনুসরণ করতে! ভাবা যায়!
|
আজ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে
লায়ন্স-ইয়র্কশায়ার (বিকেল ৫টা)
চেন্নাই সুপার কিংস-মুম্বই ইন্ডিয়ান্স (রাত ৯টা) |