পুজোয় হাসি ফোটাতে ভরসা বৃদ্ধাশ্রমই
পুজো এলেই পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে ‘এঁদের’। সাত রঙে রঙিন ছিল জীবনটা। পুজোর সময় পরিবারের লোকেদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, রাতে আলোর রোশনাই দেখতে দেখতে এক মণ্ডপ থেকে অন্য মণ্ডপে ঘুরে বেড়ানো এখন শুধুই অতীত। বয়স বেড়েছে। সঙ্গে বেড়েছে জীবন যন্ত্রণাও। এখন ‘এঁরা’ পুজোর সময় স্মৃতির পাতা উল্টেই সময় কাটান। ‘এঁরা’ সকলেই মেদিনীপুর শহরের নজরগঞ্জে এক বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিক।
যৌথ পরিবারে থাকতে চেয়েছিলেন হাওড়ার নলপুরের বাসিন্দা বছর বিরাশির যুগল সর্দার। বেঁকে বসেছিল ছেলেরা। পরিবারে অশান্তিও হত। তাঁর বর্তমান ঠিকানা এই বৃদ্ধাশ্রম।
বছর সাতেক ধরে এই বৃদ্ধাশ্রমে রয়েছেন কলকাতার কেষ্টপুরের ভাস্করপ্রসাদ ভট্টাশালী। স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে ঘর ছেড়েছেন। বাড়ি বিক্রি করে এসেছেন মেদিনীপুরে। ভাস্করবাবুর কথায়, “সমঝোতা করে আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নিই। ছেলেমেয়ে নেই। বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছি। এখানে বেশ আছি।”
বৃদ্ধাশ্রমে আবাসিকেরা। —নিজস্ব চিত্র।
মেদিনীপুর শহরের নজরগঞ্জের এই বৃদ্ধাশ্রমেই এখন দিন কাটছে বয়সের ভারে ‘ক্লান্ত’ এই মানুষগুলোর। যাঁদের অধিকাংশই রয়েছেন পরিজনদের থেকে অনেক দূরে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও সংস্থার তরফ থেকে পুজো পরিক্রমার আয়োজন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে নতুন জামাকাপড়ও চলে এসেছে। চার বছর হল এখানে রয়েছেন অর্চনা ভট্টাচার্য। বাড়ি খড়্গপুরের ইন্দায়। তিনি বলেন, “পুজোর ক’টা দিন ঠাকুর দেখতে বেরোই। ভালো লাগে।” একই বক্তব্য আশি পেরোনো জেনাপদ বড়ুয়ার। স্ত্রী- ছেলে মারা গিয়েছেন। বাড়িও ‘দখল’ হয়ে গিয়েছে। অগত্যা ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম। জেনাপদবাবু বলেন, “পুজোর সময় বাড়িতে থাকার আনন্দই আলাদা।” তবে বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ এঁদের মুখে কিছুটা হাসি ফোটায়। ভাস্করপ্রসাদবাবুর কথায়, “ধরে নিতে পারেন, এখানেই আমাদের একটা পরিবার গড়ে উঠেছে। পুজোর সময়টা সেই পরিবারের সঙ্গেই কাটাই। আনন্দ করি।”
নব্বই ছুঁইছুঁই রমলা মণ্ডলের বাড়ি শহরেই। পারিবারিক সমস্যায় ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। রমলাদেবীর কথায়, “আগে বছর চারেক বৃদ্ধাশ্রমে ছিলাম। পরে ঘরে ফিরি। অশান্তি হওয়ায় মাস পাঁচেক আগে ফের এখানে চলে এসেছি। ছেলে খোঁজখবর নিতে আসে না। তবে মেয়েরা আসে।” রমলাদেবীর মেয়েদের মতোই উমাও মায়ের কাছে আসে, আবার চলেও যায়। পড়ে থাকে শূন্যতা। জীবন থেমে থাকে না। আবার নতুন পুজোর অপেক্ষা। তাই পুজো এলে নিজেদের মধ্যেই আনন্দ ভাগ করে বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে চান বৃদ্ধাশ্রমের এই আবাসিকেরা। কারণ তাঁরা মানেন জীবনের আর এক নাম গতি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.