|
|
|
|
রাজ্যের নাম বিহার |
জঙ্গির মিথ্যা তকমা, জেলবন্দি বহু নিরপরাধ
স্বপন সরকার • পটনা |
ওঁরা সাধারণ নাগরিক। কেউ চাকুরিজীবী, কেউ বা ব্যবসায়ী। কিন্তু পুলিশের চোখে এঁরা সকলেই নাকি মাওবাদী। এবং পুলিশের বদান্যতায় এঁরা সকলেই এখন জেলবন্দি। কাউকে কাউকে চার্জশিটও দেওয়া হয়নি। বছর খানেক আগে গয়া জেলার এই ঘটনা সম্প্রতি ডিজিপি অভয়ানন্দের নজরে এসেছে। তাঁর কাছে এই নিয়ে অভিযোগ আসার পরেই পুলিশ প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। অভিযোগ পেয়েই মগধ রেঞ্জের ডিআইজি এন এইচ খানকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন ডিজি। আর সেই তদন্তেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
গয়া জেলার শেরঘাটি মহকুমার ডুমারিয়া এবং বারাচাট্টি থানা এলাকাটি মাওবাদী প্রভাবিত। ডুমারিয়ার এক ব্যবসায়ীর পরিবার-সহ প্রায় ৫০ জনকে গত এক বছর আগে মাওবাদী সন্দেহে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট বলছে, এদের সঙ্গে কোনও দিনই মাওবাদীদের কোনও সর্ম্পক ছিল না। অভিযোগ শেরবাটির এসডিপিও মহেন্দ্র কুমার বাসন্ত্রীর বিরুদ্ধেই। রাজনৈতিক ভাবে তিনি প্রভাবশালীও। তাঁর ইচ্ছাতেই একাধিক নিরপরাধ মানুষকে মাওবাদী তকমা লাগিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে।
এই ঘটনা যে উদ্বেগজনক তা বোঝাতে গিয়ে ডিজিপি বলেন, “সাংঘাতিক ঘটনা। এমন ঘটনার ব্যাপারে যদি কেউ দোষী প্রমাণিত হন, তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ওই এসডিপিও এখন সিওয়ানের মহারাজগঞ্জ মহকুমার দায়িত্বে আছেন। এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলুন। আমি এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।” পুলিশের এক কর্তা বলেন, “যদি প্রমাণ হয় যে কোনও ব্যক্তি মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে কাউকে জেলে পাঠিয়েছে, তবে তাঁর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুলিশের সদর দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ডুমারিয়া এবং বারাচাট্টির এ রকম তিনটি মামলার তদন্ত ভার দেওয়া হয়েছিল মগধ রেঞ্জের ডিআইজিকে। যাঁদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে পুলিশ ইতিমধ্যে চার্জশিটও পেশ করেছে। ডিআইজি-র ওই তদন্তে দেখা গিয়েছে, প্রথম মামলায়, ডুমারিয়া থানা এলাকার এক ব্যবসায়ী-পরিবারের সাত জনকে মাওবাদী তকমা লাগিয়ে জেলে পোরা হয়েছে। ওই সাতজনের মধ্যে দু’জন বোকারোর বাসিন্দা। তাঁরা ওই ব্যবসায়ীর আত্মীয়। এক পারিবারিক শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে তাঁরা জেলবন্দি হন। ডিআইজি তদন্তে দেখেছেন, এদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। ডিআইজি-র তদন্ত রিপোর্টে ওই ব্যবসায়ী পরিবারের লোকজনকে নির্দোষ বলা হয়েছে। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, গয়া জেলার এই ঘটনা একটি নমুনা মাত্র। রাজ্যের অনেক জেলাতেই নিরপরাধদের ধরে মাওবাদী তকমা লাগিয়ে জেলে পাঠানো হচ্ছে। সম্প্রতি জানা গিয়েছে, জুলাই মাসে সাসারাম জেলে এরকম পাঁচজনকে মাওবাদী সন্দেহে মিথ্যে মামলায় বন্দি রাখা হয়েছে।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় মামলাটি যথাক্রমে ডুমারিয়া এবং বারাচাট্টি থানার। এই দু’টি মামলাও যে মিথ্যে তা ডিআইজি-র তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপরেই এই নিরপরাধদের মুক্তির ব্যাপারে আবেদন জানানোর জন্য ডিআইজি গয়া জেলার সিনিয়র পুলিশ সুপার বিনয় কুমারকে নির্দেশ দিয়েছেন। এই ব্যাপারে মগধ রেঞ্জের ডিআইজি বলেন, “তদন্তের রিপোর্ট এবং ওই এসডিপিও সর্ম্পকে যা জানানোর তা পুলিশের সদর দফতরে পাঠিয়েছি। এই নিয়ে আমি কিছু বলব না।” ডিজিপিও তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “রিপোর্টটি আগে দেখি।” |
|
|
|
|
|