|
|
|
|
নাটক তিরুঅনন্তপুরমে |
যাত্রীরা ককপিটে, ছিনতাইয়ের সঙ্কেত পাঠিয়ে দিলেন পাইলট
নিজস্ব সংবাদদাতা • তিরুঅনন্তপুরম |
বিমান ছিনতাইয়ের সঙ্কেত গিয়েছিল ককপিট থেকে।
ঘটনাস্থল তিরুঅনন্তপুরম বিমানবন্দর। ‘ছিনতাই’ হওয়া সেই বিমানটি তখন রানওয়েতেই দাঁড়িয়ে। ব্যস, সঙ্গে সঙ্গে হুলস্থুল বেধে যায় গোটা বিমানবন্দর চত্বরে। কাল বিলম্ব না করে খবর যায় পুলিশে। সজাগ হন বিমানবন্দরের নিরাপত্তারক্ষীরাও। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বিমানটিকে চারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলেন তাঁরা।
জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করে যা যা সতর্কতা নেওয়া সম্ভব, সবই নেওয়া হয়ে গিয়েছে তত ক্ষণে। কিন্তু শেষমেশ জানা যায়, কোনও সন্ত্রাসবাদীর কাণ্ড নয়। কয়েক জন উত্তেজিত যাত্রীর আচরণে ভয় পেয়ে ওই সঙ্কেতটি পাঠিয়েছিলেন স্বয়ং পাইলটই।
ঘটনার সূত্রপাত আজ সকালে। কাল রাত সাড়ে বারোটায় দু’শো জন যাত্রী নিয়ে আবু ধাবি থেকে রওনা হয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের ফ্লাইট নাইন-৪৪২২। গন্তব্য, কোচি। কিন্তু মাঝপথেই বাধে বিপত্তি। দৃশ্যমানতার অভাবের জন্য বিমানটিকে তিরুঅনন্তপুরমে আনা হয়। তখন সকাল সাড়ে ছ’টা। বেশ কয়েক ঘণ্টা সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে বিমানটি। অভিযোগ, তার পর যাত্রীদের একাংশ জোর করে ককপিটে ঢোকার চেষ্টা করেন। বিমানটির পাইলট কম্যান্ডার রূপালি ওয়াঘমারে তখন ছিনতাইয়ের সঙ্কেত পাঠান এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলকে। তাঁর অভিযোগ, ককপিটে ঢুকে কয়েক জন যাত্রী তাঁকে রীতিমতো হুমকি দিয়েছে। এর পর পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ছিনতাইয়ের সতর্কতা ওঠার পরে দুপুর দু’টো নাগাদ বিমানটি কোচির উদ্দেশে রওনা হয়। |
|
এই বিমান ঘিরেই যত বিপত্তি। ছবি: পিটিআই |
তবে জোর করে ককপিটে ঢোকার চেষ্টার কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন ওই বিমানের যাত্রীরা। “এটা মিথ্যে”, বলেছেন শিবান নামে এক যাত্রী। অপর এক যাত্রী তানিয়া জানালেন, তিরুঅনন্তপুরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁদের বিমানে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। একটা সময় বিমানের এসিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। না ছিল খাবার, না জল। এমনকী বিমানের শৌচাগারের অবস্থাও ছিল অত্যন্ত খারাপ। তাঁর কথায়, “মহিলা ও শিশুদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠেছিল। দেরি আর খাবার নিয়ে যাত্রীরা অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু কেউই ককপিটে ঢোকার চেষ্টা করেনি।” যাত্রীদের আরও অভিযোগ, বিমান সংস্থার চূড়ান্ত অব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাতে ইচ্ছাকৃত ভাবে তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে।
একটি সূত্র জানাচ্ছে, তিরুঅনন্তপুরমে দাঁড়িয়ে থাকার সময় ওই বিমানের কর্মীদের ডিউটি শেষ হয়। পাইলট ও অন্যান্য কর্মী বিমান থেকে নামতে গেলে, যাত্রীরা বাধা দেন। এক বিমান কর্মীকে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টি রাধাকৃষ্ণন জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি পুলিশ মিটমাট করে। তবে রূপালিদেবীর অভিযোগের ভিত্তিতে বিমানটি কোচি পৌঁছনোর পরে ছয় যাত্রীকে আটক করেছিল সিআইএসএফ। কিছু ক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পরে অবশ্য তাঁদের ছেড়েও দেওয়া হয়।
গোটা ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে ডিজিসিএ। বিমানের ব্ল্যাক বক্সের রেকর্ডিংও বিমান সংস্থার কাছে চেয়ে পাঠিয়েছে তারা। বিমানের পাইলটকে ডিজিসিএ-র কাছে গিয়ে তাঁর অভিযোগের প্রমাণ দিতে হবে। সেই সঙ্গে যে ক’জন যাত্রী ককপিটে ঢুকেছিলেন, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসকে তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে বলেছে ডিজিসিএ। একটি সূত্র জানাচ্ছে, ককপিটে চার যাত্রী ঢুকেছিলেন বলে জানতে পেরেছে ডিজিসিএ। যাত্রীদের অভিযোগ ও পাইলটের পাল্টা অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আলাদা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী ওমেন চান্ডিও।
তবে এর মধ্যে একটা প্রশ্ন উঠছেই। যাত্রী ক্ষোভকে সামাল দিতে না পেরে হঠাৎ কেন ছিনতাইয়ের সঙ্কেত পাঠাতে গেলেন পাইলট? উড়ান বিধি অনুযায়ী, কোনও রকম বিপদে পড়লে তিন ধরনের সঙ্কেত পাঠাতে পারেন চালক। এক, বিমান পরিচালনার ক্ষেত্রে অবৈধ ভাবে কেউ হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করলে। যেটি বিমান ছিনতাইয়েরই সমান ধরে নেওয়া হয়। দুই, মাঝ আকাশে বিমানটির সঙ্গে কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে। এবং তিন, বিমানের মধ্যে কোনও আপৎকালীন অবস্থার সৃষ্টি হলে।
আজ পাইলট প্রথম সঙ্কেতটি পাঠানোয় ছিনতাইয়ের এত বড়সড় একটি নাটকের সাক্ষী থাকল তিরুঅনন্তপুরম বিমানবন্দর। |
|
|
|
|
|