|
|
|
|
নাড়ু খাবে কি পল্টু, প্রোটোকল-ফাঁসে সংশয়ে দিদিও |
অর্ঘ্য ঘোষ • মিরাটি |
শান্ত-সবুজ-লাল মাটির গ্রামটা এত দিন জানতই না প্রোটোকল কী বস্তু! তা খায় না মাথায় দেয়। এখন জানছে। বলা ভাল, ঠেকে জানছে।
পল্টুর আসাতেও যে এত হ্যাপা, মিরাটি আগে যে কখনও দেখেনি। এ গ্রাম বিদেশমন্ত্রী পল্টুকে দেখেছে। দেখেছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকেও। গ্রামের ‘ভিভিআইপি’ ছেলের সঙ্গে পুজোর দিনগুলিতে খোলামেলা ভাবেই মিশতে পেরেছেন এলাকাবাসী। কিন্তু, আজ, মহাষষ্ঠীর দিন যে পল্টু গ্রামে আসছেন, তিনি যে নিছক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নন। তিনি দেশের প্রথম নাগরিক।
ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। |
|
ঢালাই রাস্তা, আলাদা করে ব্যারিকেড পর্দা। বদলে গিয়েছে মিরাটির বাড়ি। |
এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে ষষ্ঠী থেকে দশমী পুজোর এই পাঁচ দিন প্রণববাবু রাত্রিবাস করবেন তাঁর দিদি অন্নপূর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে (মিরাটি লাগোয়া পরোটা গ্রামে)। সেই দিদিও প্রোটোকলের কড়াকড়িতে কিছুটা সংশয়ে। সেই ছেলেবেলা থেকেই দুর্গাপুজোয় দিদির হাতের তৈরি আনন্দনাড়ু না খেলে পুজোটা ঠিক পুজো-পুজো লাগে না পল্টুর। তাই অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও বরাবরের মতো ভাইয়ের জন্য বানাতে শুরু করেছেন আনন্দনাড়ু। ওই বৃদ্ধার কথায়, “জানি না আমার তৈরি নাড়ু এ বার পল্টুর খাওয়া হবে কিনা। এখন তো ওঁকে সামান্য ওষুধও খেতে হচ্ছে প্রোটোকল মেনে!”
রাষ্ট্রপতি আসছেন ষষ্ঠীর বিকেলে। তার আগের দিন প্রণববাবুর হালকা কমলা রঙে সেজে ওঠা পৈতৃক বাড়ির চারপাশের দিকে তাকালে অন্য বারের আসার সঙ্গে এ বারের আসার পার্থক্যটা খুবই স্পষ্ট। বাড়ির বাইরে ও ভিতরে বিভিন্ন জায়গায় বসানো হয়েছে সিসিটিভি। বাড়ির ভিতরে নিষিদ্ধ মোবাইল ফোন ও ক্যামেরা। বাড়ির কেউ যদি প্রিয় ‘পল্টু’র কোনও বিশেষ মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করতে চান, আপত্তি থাকছে তাতেও! প্রথামতোই প্রণববাবু সপ্তমীতে ঘট ভরতে নামবেন বাড়ির সামান্য দূরের একটি কাঁদরের জলে। অন্য বার সেই ঘাটে একটি অস্থায়ী কাঠের ঘাট বানানো হলেও এ বার নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। তৈরি হয়েছে স্থায়ী বাঁধানো ঘাট। সেই ঘাট থেকে পিচ রাস্তা যুক্ত করা হয়েছে নতুন কংক্রিটের ঢালাই রাস্তা দিয়ে। কিন্তু, বাড়ি থেকে ঘাট পর্যন্ত কোথাও বাঁশের খুঁটি কোথাও বা তারজালি দিয়ে ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছে। এমনকী কাঁদরের জলেও বসানো হয়েছে বাঁশের খুঁটি। বাইরের জগৎ থেকে রাষ্ট্রপতির গতিবিধি আড়াল করার জন্য বাড়ির পাঁচিলের উপরে ও কাঁদরের দু’পাড় মোটা কাপড় দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে।
আর আছে নিরাপত্তা! |
|
চলছে নাড়ু তৈরির কাজ। |
তিনি আসছেন। আজই। মিরাটি তাই বাঁধা পড়েছে প্রোটোকলে।
ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা আধিকারিক ও রাজ্য পুলিশের কর্তাদের সঙ্গে একাধিক বার বৈঠক করেছে জেলা প্রশাসন। বীরভূমের পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা বলেন, “রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার জন্য প্রায় ৬০০ রাজ্য পুলিশকর্মী থাকবেন মিরাটি ও পরোটা গ্রামে (অন্নপূর্ণাদেবীর বাড়ি)। থাকছে বম্ব স্কোয়াড, দমকল, অ্যাম্বুলেন্স ও অন্য জরুরি পরিষেবার ব্যবস্থাও।”
প্রোটোকল ও নিরাপত্তার ফাঁস ভালই টের পাচ্ছেন মিরাটির মুখার্জী ভবনের লোকজন। ওই বাড়িতে দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে রান্নার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন ফড়িং মণ্ডল। প্রণববাবু দেশের বাড়িতে ফিরলেই তাঁর হাতের আলু-পোস্ত খাবেন।
সেই ফড়িংবাবু বলছেন, “এ বার রাঁধুনি, পরিচারিকা থেকে ঢাকি, এমনকী পুরোহিতেরও প্রশাসনের দেওয়া পরিচয়পত্র ছাড়া বাড়িতে ঢোকায় মানা। এর আগে এত কিছু ঝামেলা ছিল না।”
এক সময় প্রণববাবুর সঙ্গে মিরাটির অলিগলিতে খেলে বেরিয়েছেন ধনপতি চৌধুরী, কিরীটীমোহন ঘোষ, রমাপ্রসাদ ভট্টাচার্যরা। তাঁরাও সংশয়ে। বলছেন, “অল্প সময়ের জন্য হলেও দেখা করা কিংবা কথা বলার সময় মিলত। এ বারে নিরাপত্তার যা কড়াকড়ি দেখছি, তাতে ওঁর ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারব বলে মনে হচ্ছে না!”
সংশয়ের আর দোষ কী! প্রোটোকল যে বড় বালাই!
|
সোমনাথ মুস্তাফির তোলা ছবি। |
|
|
|
|
|