সারা বছর দু’বেলা নিরামিষ। তা বলে পুজোর ক’দিন কি বাড়ির মেয়েকে নিরামিষ খাওয়ানো যায়! বাড়ির লোকজন আনন্দ করবে, বাড়িতে ভাল-মন্দ রান্না হবে, আর ঘরের মেয়ে ঊমা শুকনো মুখে থাকবে, সেটাই বা কী করে হয়? তাই পুজোর ক’দিন মঙ্গলকোটের কুরুম্বা গ্রামের মুখোপাধ্যায়েরা তাঁদের ঊমার জন্য রান্না করেন জিরে দিয়ে বড় রুইয়ের ঝোল। সঙ্গে শুক্তো, ফুলকপির ডালনা, ভাজা আর পায়েস। এই দিয়েই সপ্তমী থেকে নবমী পঞ্চব্যঞ্জন খেতে দেন ঊমাকে।
কুরুম্বা গ্রামে প্রায় ৮ হাজার লোকের বাস। গ্রামে দু’টো বাড়ির পুজো ছাড়াও ৫টি সর্বজনীন পুজো হয়। তবে গ্রামের বাসিন্দা চণ্ডীচরণ চক্রবর্তী বলেন, “পাড়ায়-পাড়ায় পুজো হলেও মুখোপাধ্যায় বাড়ির দেবীকে দেখতে পুজোর ক’দিন গ্রামের মানুষের ঢল নামে।” জনশ্রুতি, প্রায় দু’শো বছর আগে বাবু কৃষ্ণধন ভট্টাচার্য বাড়ির আটচালায় এই পুজো শুরু করেন। খড়ের চাল ও বেত দিয়ে মুড়ে বড় ঘর তৈরি করেন তিনি। লোকে বলে, এক দুপুরে ভট্টাচার্য গৃহিণী ও তাঁর ননদ ওই ঘরে শুয়ে গল্প করছিলেন। তখন একটি ছোট মেয়ে এসে তাঁদের কাছে পয়সা চায়। মেয়েটির রাঙা হাত দেখে অবাক হয়ে যান তাঁরা। তাঁদের বিশ্বাস হয়, কোনও দেবী হয়তো ওই মেয়েটির রূপ ধরে এসেছিলেন। সেই রাতেই স্বপ্ন পান ভট্টাচার্য গৃহিণী। তার পর থেকেই শুরু হয় পুজো।
তবে ভট্টাচার্য পরিবারের এই আদি পুজো বর্তমানে চালু রেখেছেন মুখোপাধ্যায়েরা। কয়েক পুরুষ আগে নাতির সূত্রে পুজোর ভার পান বামনদাস মুখোপাধ্যায়। পরিবারের প্রবীণ সদস্য প্রসন্নকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের বাড়িতে দেবীকে ডাকের সাজে সাজানো হয়। তাই সবাই তাঁকে ‘ডাকেশ্বরী দুর্গা’ বলেন।” মুখোপাধ্যায় বাড়ির একাংশের দাবি, “বছরভর দু’বেলা দেবীকে নিরামিষ ভোগ দেওয়া হয়। পুজোর ক’দিন বাড়ির সকলে হইচই করেন। এই সময় তো ঘরের মেয়েকে নিরামিষ খাওয়ানো যায় না! তাই পুকুরের বড় মাছ রান্না করে দেওয়া হত। এখন পুকুরে বড় মাছ না পেলে বাজার থেকে কিনে আনা হয়।” গৃহবধূ অনিমা মুখোপাধ্যায় বলেন, “আদা-বাটা, জিরে গুড়ো দিয়ে পাতলা মাছের ঝোল রান্না হয়।” পুজোর ক’দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়। গ্রামবাসীরা তাতে যোগ দেন। প্রতিযোগিতায় জয়ীদের দেওয়া হয় ‘ডাকেশ্বরী পুরস্কার’। |