একটা সময়ে গ্রামটার পরিচিতি ছিল ঢাকির গ্রাম হিসেবে। পুজো আসলেই গ্রাম ফাঁকা করে চলে যেতেন ঢাকিরা। কিছু রোজগার করে গ্রামে ফিরতেন।
বর্ধমানের উপকণ্ঠে প্যামরায় এখন সে সব অতীত। নতুন প্রজন্ম আর এই পেশায় আসতে চায় না। এখন তারা কেউ কাজ নিয়ে চলে গিয়েছে অন্য কোনও জায়গায়। কেউ আবার ১০০ দিনের প্রকল্পে নাম লিখিয়েছে। ঢাকিদের দাবি, “পুজোর পাঁচ দিন ঢাক বাজিয়ে মেলে ২৫০০ টাকা। তার ভাগ দিতে হয় থেকে আসা ঢোলক বাদক, কাঁসি বাদকদের। শেষে ঢাকির হাতে থাকে ১০০০-১২০০ টাকা। পাঁচ দিনের সমস্ত খরচা মিটিয়ে ক’টাকা নিয়েই বা ফিরতে পারেন শিল্পীরা? এর চেয়ে ১০০ দিনের প্রকল্পে খেটে, রিকশা চালিয়ে, হাতুড়ি পিটিয়ে অনেক বেশি রোজগার হয়।” |
প্রতি বার গ্রামের দাসপাড়ার ঢোকার মুখে গাছতলায় কিছুক্ষণ বসে থাকলেই দেখা মিলত ঢাকিদের। এ বার কারও পাত্তা নেই। অনেক অপেক্ষা, ডাকাডাকির পরে সন্ধান মিলল দুই প্রতিনিধির। তাঁদের নাম লেবু দাস আর গনেশ দাস। বয়েস প্রায় পঞ্চাশ। তাঁরা বললেন, “গোটা গ্রামে আমরা ছাড়া আর একটাও ঢাকি মিলবে না।” তাঁদের কথায়, “এই গ্রামে এক সময়ে ১৬টি ঢাকির ঘর ছিল। উঠোনে বসে বুড়ো ঢাকি নবীনদের বোল তোলাচ্ছে। কাঁসি বাজছে। বাবার সঙ্গে কাঁসি ধরে লুচি-মণ্ডার লোভে মণ্ডপে যেত শিশুরাও। এখন আর সে দিন কোথায়?”
ষোলো ঘরের প্রায় ৫০-৬০জন ঢাকির মধ্যে এখন টিঁকে রয়েছে মাত্র ওই দু’জন। বাকিরা কোথায়? দু’জনেই বললেন, “কেউ মরে গিয়েছে, তার ছেলে আর ঢাক কাঁধে নেয়নি। কেউ কাজ করতে চলে গিয়েছে অন্য কোথাও। আর ফিরে আসেনি। অনেকে আর বায়না না পেয়ে ঢাকের চামড়াই পাল্টায়নি। এই ভাবে নামেই গ্রামটি ঢাকির গ্রাম হয়ে রয়ে গিয়েছে।” তাঁদের দাবি, “আমাদেরও অন্য সময়ে কাজ করতে ডেতে হয়। ১০০দিনের প্রকল্পের খাতায় নাম তোলাতে হয়েছে। তবু মায়ার টানে পুজোর ক’দিন ওই ঢাকখানা কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়াই। হাতগুণতি বরাত মেলে। যা পাই, তা দিয়ে পেট ভরে না।” তৃণমূলের সরকার আসার পরে ঠিক হয়েছিল, গ্রামে গ্রামে ঘুরে সরকারি ঘোষণার কথা ঢাক পিটিয়ে জানিয়ে দেবেন ঢাকিরা। সেই কাজে বেশ কিছু ঢাকিকে অস্থায়ী ভাবে বহালও করা হয়েছে। যদিও এমন ঘোষণার কথা জানেনই না লেবু-গণেশ। জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “ওই কাজের জন্য দরকারে ঢাকিদের নিয়োগ করা হয়। প্যামরায় ওঁরা কাজ পাননি কেন, খোঁজ নেব।” |