দেবীর মধ্যে মেয়ের স্মৃতি খুঁজতেই শুরু পুজো
পুরনো জৌলুস আর নেই। তা-ও সমারোহের সঙ্গেই টিকে রয়েছে খনি অঞ্চলের পারিবারিক পুজোগুলি। কোনওটি শুরু হয়েছে দু’শো বছর, কোনওটি বা তারও আগে। আর খনি ও শিল্পাঞ্চলের নানা জনপদে এই সব বাড়ির পুজো ঘিরেই আনন্দে মাতেন বাসিন্দারা।
প্রায় দু’শো বছর আগে শুরু হয়েছে জামুড়িয়ার পরিহারপুরে রায়বাড়ির পুজো। পাশাপাশি রয়েছে নন্ডি গ্রামের দশটিরও বেশি পারিবারিক পুজো। জনশ্রুতি, দু’শো বছর আগে কাশিপুরের রাজার গোমস্তা মানিক রায়ের দুই জামাই প্রথম শুরু করেন এই পুজো। ধাসনা গ্রামে মিশ্র পরিবারের পুজো এ বার পড়ল ২০৫ বছরে। পরিবারের সদস্য বাবলু মিশ্র জানান, বৈষ্ণব মতে হয় এই পুজো। নন্ডি গ্রামে নায়েক বাড়ির দুই পুজোয় এবং বন্দ্যোপাধ্যায়, চক্রবর্তী ও চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে পুজো হয় প্রতিমার। কিন্তু ভট্টাচার্য বাড়ির দু’টি পুজো, চট্টোপাধ্যায় বাড়ি, নায়েক বাড়ি, চক্রবর্তী বাড়ি ও গণক পরিবারে শুধু ঘট পুজো হয়। জামুড়িয়ারই কেন্দা গ্রামের ভট্টাচার্য পরিবারের পুজোও প্রায় তিনশো বছরের পুরনো। পরিবারের সদস্য সুকুমার ভট্টাচার্য বলেন, “মা দুর্গা এখানে বাংলার মা বলে পরিচিত।” এই গ্রামেরই চক্রবর্তী বাড়ির পুজোও প্রায় দুশো বছরের পুরনো। সাতগ্রামের অধিকারী বাড়ির পুজোও শতাব্দী প্রাচীন।
হান্ডাবাড়ির প্রতিমা।—নিজস্ব চিত্র।
জামুড়িয়ার সার্থকপুরের চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজো ৩০৪ বছরের পুরনো। পরিবারের সদস্য দীব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায় জানান, বীরভূমের রানিপাথর থেকে সার্থকপুরে চলে এসেছিল তাঁদের পরিবার। পরের বছর গ্রাম থেকে সিংহবাহিনীর মূর্তি এনে পুজো শুরু হয়। এই পুজো ছাড়া আর কোনও পুজো নেই গ্রামে। তাই এখানে অবাধ যাওয়া-আসা স্থানীয় বাসিন্দাদের।
অন্ডালের উখড়ার জমিদার পরিবারের হান্ডা বাড়ির পুজো পা দিল ১৬১ বছরে। ১২৪৮ বঙ্গাব্দে শম্ভুনাথলাল সিংহ হান্ডা শুরু করেন এই পুজো। পরিবারের সদস্য শোভনলাল সিংহ হান্ডা জানান, শম্ভুনাথের মেয়ে ঘুষুরানির অকালমৃত্যু হয়। শোকে মেয়ের মুখের আদলে প্রতিমা তৈরি করে পুজো শুরু করেন তিনি। এক বছর পরে ১২৪৯ বঙ্গাব্দে শুরু হয় মুখোপাধ্যায় বাড়ির পুজো। পরিবারের নবীন সদস্য বুম্বা মুখোপাধ্যায় জানান, এই পুজো এখন সর্বজনীন রূপ নিয়েছে। এখনও রীতি মেনে হান্ডার জমিদার বাড়ি থেকে অনুদান দেওয়া হয় ১ টাকা করে। এমনকী, ‘অনুমতি’ও দেওয়া হয়।
এই গ্রামেরই বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির ‘বীজখেকো দুর্গা’-র পুজো শুরু হয় ১২৩৫ বঙ্গাব্দে। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বীজ বা শস্যের অনুষঙ্গ। পরিবারের কর্তারা জানান, ফসল ফললেই দুর্গাপুজো হত। কথিত আছে, এক বার স্থানীয় ইছাপুরের এক মৃৎশিল্পী প্রতিমা গড়তে এসে শোনেন, ফসল হয়নি বলে পুজো হবে না। ফিরে যাওয়ার পথে একটি ছোট মেয়ে তাঁকে বাধা দেয়। তাকে জানায়, সিন্দুকে টাকা রাখা আছে। তাতেই পুজো হবে। ফিরে গিয়ে তিনি সে কথা ওই পরিবারকে জানালে দেখা যায়, সিন্দুকে সত্যিই কিছু টাকা ও বীজ রয়েছে। তা দিয়েই পুজো হয়। দেবীকে বীজ নিবেদন করা হয় বলে দেবীর নাম ‘বীজখেকো দুর্গা’। উখড়ার চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজো শুরু হয় ১৬০৭ শকাব্দে। স্বপ্ন পেয়ে পুজো শুরু করেন দর্পনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়। চক্রবর্তী পরিবারের পটে হয় বলে দুর্গার নাম ‘পাতি দুর্গা’। ছোরা গ্রামে মিত্রবাড়ির পুজোও সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো। বৈষ্ণব মতে হওয়া এই পুজোয় সপ্তমী ও অষ্টমীতে কুমড়ো ও নবমীতে আখ বলি দেওয়া হয়। পাণ্ডবেশ্বরের কুমারডিহি গ্রামের রায়চৌধুরী বাড়ির পুজো পা দিল ৩৬৯ বছরে। বাড়ির সদস্য দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী জানান, এই পুজো এলাকায় প্রাচীনতম।
রানিগঞ্জের হাজরা বাড়ির পুজো ৩০০ বছরের পুরনো। এটি ‘হাজরাবুড়ির পুজো’ বলে পরিচিত। রানিগঞ্জের নুপুর গ্রামের রায়বাড়িতে হয় ঘট পুজো। সিহারশোলের কাঞ্জিলাল পরিবারের ২৫০ বছরের পুরনো পুজোয় প্রতিমার কার্তিক ডান দিকে ও গণেশ বাঁ দিকে থাকে। এ ছাড়াও নায়েক, চট্টোপাধ্যায়, গঙ্গোপাধ্যায়, খাঁ, পাল-সহ ১১টি পরিবারের পুজো হয় বক্তারনগরে। সবই বেশ প্রাচীন।
উখড়ার ধীবর বাড়ির পুজো পা দিয়েছে সাতানব্বই বছরে। কর্মকার বাড়ির পুজো ১৫০ বছরের পুরনো। বাগদি বাড়ির পুজো শতবর্ষের। এই সব পরিবারের অনেকেরই দাবি, ব্রাহ্মণ বাড়ির পুজোয় যোগ দিতে পারতেন না তাঁরা। তাই নিজেরাই পুজো শুরু করেন। যদিও হান্ডাবাড়ির শোভনলাল সিংহ হান্ডার দাবি, “আমাদের পরিবারই প্রথম এই সব পুজোর অনুমতি দেয়।” গ্রামের মুখোপাধ্যায় ও মোদক বাড়ির পুজোও শতাব্দী প্রাচীন। জামুড়িয়ার বালানপুরের কুড়ি বছরের পুরনো বাউড়ি বাড়ির সদস্য গৌরাঙ্গ বাউড়িও বলেন, “উচ্চবর্ণের পুজোয় যোগ দেওয়া যেত না। তাই আমরাই শুরু করলাম, নিজেদের মতো করে।” নানা কাহিনিতে রঙিন এই সব বাড়ির পুজো ঘিরেই উৎসবে মাতবেন শিল্পাঞ্চলবাসী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.