|
|
|
|
টানাটানির মধ্যেও ঢালাও উন্নয়ন |
মানুষকে সঙ্গে নিয়েই চলার বার্তা মমতার |
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
অভাবের সংসারে নানা সমস্যা। কিন্তু তার মধ্যেই ঢালাও উন্নয়ন চলছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষকে ধৈর্য ধরতে হবে। সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদরে প্রশাসনিক জনসভায় এসে এমনই বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাম সরকারকে দুষে মমতার মন্তব্য, “কঙ্কাল-চুরি-দেনা সামলাতে সামলাতেই দিন চলে যাচ্ছে। তারই মধ্যে মানুষের জন্য উন্নয়নের কাজ চলছে। আগামীতেও গরিব সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়েই উন্নয়ন চলবে।” |
 |
নিমতৌড়িতে প্রশাসনিক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী। |
সোমবার জেলায় পা রেখেই কোলাঘাটে প্রশাসনিক বৈঠক সেরেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর তিনি জানিয়ে দেন, এই জেলায় উন্নয়নের কাজকর্মে তিনি খুশি। সেই সূত্র ধরেই মঙ্গলবার তমলুকের নিমতৌড়িতে প্রশাসনিক জনসভায় বক্তব্য শুরু করেন মমতা। জানিয়ে দেন, নন্দীগ্রামের জেলায় ঢালাও উন্নয়ন হচ্ছে। প্রচুর প্রাথমিক স্কুল হয়েছে, প্রচুর স্কুল জুনিয়র হাই এবং হাইস্কুলে উন্নীত হয়েছে। অনেকে শিক্ষক হিসেবে চাকরি পেয়েছেন। একশো দিনের প্রকল্পে কাজ পাওয়ার গড় ১৯ থেকে বেড়ে ৩৮ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনায় রাস্তা তৈরির কাজ হচ্ছে। দিঘা-শঙ্করপুর-জুনপুট-সহ জেলার সামগ্রিক উপকূল উন্নয়নে বিশেষ পরিকল্পনা, নন্দকুমার চৌ-রাস্তার কাছে ইকো-ট্যুরিজমের কথাও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেলেঘাই-কপালেশ্বরী প্রকল্প, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান দ্রুত রূপায়ণের মাধ্যমে দুই মেদিনীপুরে বন্যা নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নন্দীগ্রাম, পাঁশকুড়া ও এগরার মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, রামনগরে পান-মান্ডি, কাজুবাদাম শিল্পে ক্লাস্টার, সব ব্লকে আইটিআই-সহ নন্দীগ্রামের জেলার উন্নয়নে নানা পরিকল্পনার কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। তবে সেই অর্থে নন্দকুমারে ইকো-ট্যুরিজম, রামনগরে পান-মান্ডি এবং পাঁশকুড়া ও এগরার মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল ছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর এ বারের সফরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার জন্য আর কোনও নতুন ঘোষণা নেই। এ ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী পূর্বতন বাম সরকারকেই দুষেছেন। তমলুকের সভায় তিনি বলেন, “আগের সরকারের দেনা শুধতে শুধতেই দিন চলে যাচ্ছে। তারই মধ্যে কাজ হচ্ছে। পয়লা তারিখে মাইনে দেওয়া হচ্ছে।” |
|
এ দিন সকালে প্রথমে হলদিয়ায় বেশ কয়েকটি কারখানার উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, “শিল্পের জন্য দেশীয় শিল্পপতিদের আরও এগিয়ে আসতে হবে। বিদেশি শিল্পপতিদেরও স্বাগত।” হলদিয়া থেকে তমলুকে এসে প্রশাসনিক জনসভায় যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী। ছিলেন মুকুল রায়, শিশির ও শুভেন্দু অধিকারী, বিধায়ক ফিরোজা বিবি, শিউলি সাহা, অর্ধ্বেন্দু মাইতি, শ্রীকান্ত মাহাতো, শেখ সুফিয়ান, আবু তাহের প্রমুখ। মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র অবশ্য ছিলেন না। তমলুকের সভায় কৃষক, তাঁতশিল্পীদের ক্রেডিট কার্ড, সংখ্যালঘু-তফসিলি ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি, জমির পাট্টা বিলি করেন মুখ্যমন্ত্রী। কয়েকজন প্রাথমিক শিক্ষকের হাতে নিয়োগপত্রও তুলে দেন। বলেন, “একটু টাকাপয়সা হলেই চাকরির ব্যবস্থা করব।” সেই সঙ্গে তাঁর ঘোষণা, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ৬ লক্ষ মানুষ চাকরি পেয়েছেন। তার মধ্যে ৩ লক্ষ সরকারি চাকরি। ৪৩ হাজার শুধু শিক্ষকেরই পদ তৈরি হয়েছে। সরকারি চাকরির বয়স বাড়িয়ে ৪০ বছর করা হয়েছে। ‘আনন্দধারা’ প্রকল্পে স্বনির্ভর গোষ্ঠীরগুলির প্রাপ্য টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর সরকার যে আক্ষরিক অর্থেই মা-মাটি মানুষের সরকার, বারবার তা মনে করিয়ে দেন মমতা। নিরাশ্রয়ের মাথায় ছাদের বন্দোবস্ত করতে প্রয়োজনে সরকার জমি কিনে বিলি করবে বলেও জানান তিনি। সেখানে ছোট দোকান বা অন্য কিছু করে অন্নসংস্থান করবে গরিব মানুষ। নিজ ভূমি নিজ গৃহ প্রকল্পে সংখ্যালঘু ও উদ্বাস্তু কলোনির মানুষকে উৎখাত না করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। এতে কর্মসংস্থানও হবে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আমার কোনও সংসার নেই, পিছুটান নেই। আমি পদের মোহ করি না। কারও থেকে দেনা করি না। আপনারাই আমার সব।” তমলুকের সভা থেকে একগুচ্ছ প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করেন তিনি। |
 |
নিমতৌড়ির সভায় সপার্ষদ মুখ্যমন্ত্রী |
এফডিআই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের তুলোধনা করেন মমতা। বলেন, “সংস্কারের নামে লুঠ চলছে। মগের মুলুক চলছে। কেন্দ্র দেশকে বিক্রি করে দিতে চাইছে। আর আমরা টাকা চেয়ে চেয়ে পাচ্ছি না। জুতোর সুখতলা খুলে যাচ্ছে।” মমতা জানিয়ে দেন, কৃষকের স্বার্থ, সাধারণ মানুষের স্বার্থ বিঘ্নিত হলে তা সহ্য করা হবে না। গ্যাট চুক্তির তুলনাও টানেন। কেন কেন্দ্রের এই নীতির বিরোধিতা করা হচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষের কী বিপদ তা বোঝার আহ্বানও জানান মমতা। বলেন, “পশ্চিমবঙ্গকে ভাতে মারা যাবে না। কারণ, ভাত আমরা তৈরি করি।” প্রসঙ্গক্রমে উঠে আসে নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনের কথা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুরে জমি নেওয়ার চেষ্টা আমরা আটকিয়েছি। নন্দীগ্রাম, নেতাইয়ের শহিদ পরিবারগুলির পাশে দাঁড়িয়েছি। সিঙ্গুরে কারখানার জমি এখন সরকারের। মামলা মিটলেই জমি ফেরানো হবে।”
সভার শেষে বেশ কিছু অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, আশাকর্মী মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষোভের কথা বলেন। মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসককে বিষয়টি দেখে নেওয়ার পাশাপাশি জানান, ওগুলো কেন্দ্রীয় প্রকল্প। সমস্যা দেখে মানুষকে ভয় পেতে বারণও করেন মুখ্যমন্ত্রী। একেবারে শেষে আসন্ন শারদোৎসব ও ইদ উপলক্ষে জেলাবাসীকে শুভেচ্ছা জানান মমতা। তাঁর আশা, “স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে নন্দীগ্রাম আন্দোলন, বারবার এই জেলা পথ দেখিয়েছে। আগামী দিনেও শিক্ষা-সংস্কৃতির বিপ্লবে বাংলাকে পথ দেখাবে পূর্ব মেদিনীপুর।”
|
—নিজস্ব চিত্র। |
|
|
 |
|
|