|
|
|
|
উদ্ধার হাজার গুলি |
মাওবাদীদের অস্ত্র ভাণ্ডার লালগড়ে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ও মেদিনীপুর |
যৌথ বাহিনীর লাগাতার অভিযানের মুখে মাওবাদীরা জঙ্গলমহলে তাদের অধিকাংশ ডেরা গুটিয়ে ফেললেও অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদের বড় অংশ যে তারা জঙ্গলে লুকিয়ে রেখেছে, সে ব্যাপারে গোয়েন্দাদের সন্দেহ ছিলই। সেই সন্দেহ যে খুব অমূলক নয়, তারই প্রমাণ মিলল মঙ্গলবার।
এ দিন লালগড়ের বীরভানপুর ও ভেলাইডিহার জঙ্গলে মাওবাদীদের গোলাবারুদের তেমনই এক ভাণ্ডারের হদিস পেয়েছে যৌথ বাহিনী। মিলেছে হাজার রাউন্ডেরও বেশি গুলি। এর মধ্যে এসএলআরের মতো স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিই রয়েছে ১৫৮ রাউন্ড। মাওবাদীদের এত বেশি গুলি এক সঙ্গে এর আগে জঙ্গলমহল থেকে উদ্ধার হয়নি বলেই পুলিশের দাবি। এ ছাড়াও ৮৪টি ডিটোনেটর ও স্যুইচ-সহ সাতটি ফ্ল্যাশগান পেয়েছে যৌথ বাহিনী। ঝিটকার জঙ্গল থেকে উদ্ধার হয়েছে তিনটি ল্যান্ডমাইন।
২০০৯-এর জুন মাসে কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়া ইস্তক চলতি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাওবাদীদের মোট ১৫৮৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছিল। সেই জায়গায় শুধু এ দিনই উদ্ধার হয়েছে ১০১২ রাউন্ড গুলি। গত বছর ১৫ নভেম্বর মাওবাদীদের এক সময়কার ডেরা, শালবনির মথুরাপুর জঙ্গলে এসএলআরের ২২০ রাউন্ড-সহ মোট ৩৮০ রাউন্ড গুলি মিলেছিল। এত দিন পর্যন্ত সেটাই ছিল এক সঙ্গে সব চেয়ে বেশি গুলি উদ্ধারের ঘটনা। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “এত বিপুল পরিমাণ গুলি এবং আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) তৈরির সরঞ্জাম কী ভাবে ওই এলাকায় এল, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।” |
|
উদ্ধার হওয়া অস্ত্র।—নিজস্ব চিত্র |
কী ভাবে জানা গেল ওই অস্ত্রভাণ্ডারের অস্তিত্ব?
রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে প্রথম খবর পায় সিআরপি। সে জন্যই চার দিন ধরে বাহিনীর ডিআইজি পদমর্যাদার এক অফিসার লালগড়ে ঘাঁটি গেড়ে ছিলেন। প্রথমে স্থানীয় দুই যুবককে আটক করা হয়। মাওবাদীরা দু’টি জঙ্গলে গোলাবারুদ পুঁতে রাখার সময়ে ওই দু’জন সাক্ষী ছিল বলে গোয়েন্দাদের দাবি। তাঁদের নিয়েই অভিযানে যায় সিআরপি। প্রথমে রাজ্য পুলিশকে এই ব্যাপারে বিন্দুবিসর্গও জানানো হয়নি বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর।
এর পরে সোমবার রাতে বীরভানপুর ও ভেলাইডিহার জঙ্গলে যায় সিআরপি এবং রাজ্য পুলিশ। নির্দিষ্ট তথ্য অনুযায়ী, দু’টি জঙ্গলের দু’টি জায়গার মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে পড়ে গুলি, ডিটোনেটর ও ফ্ল্যাশগান। পুলিশ জানায়, সেগুলি প্লাস্টিকের প্যাকেটে মুড়ে ‘সিল’ করে রাখা ছিল। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, গত বছর ২৪ নভেম্বর যৌথ বাহিনীর হাতে মাওবাদীদের শীর্ষনেতা কিষেণজি জঙ্গলমহলে নিহত হওয়ার পরেই এই সব গোলাবারুদ জঙ্গলে পুঁতে রেখে লালগড়ের ওই সব এলাকা থেকে সরে পড়ে মাওবাদীরা। এটা বিকাশের স্কোয়াডের কাজ বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন গোয়েন্দারা।
এক গোয়েন্দা-কর্তার কথায়, “মাওবাদীদের অধিকাংশ স্কোয়াড সদস্য এখন ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে পড়েছে। ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আগ্নেয়াস্ত্র বহন করার ঝুঁকি তারা নিচ্ছে না। গুলি, বন্দুক ও বিস্ফোরক তারা জঙ্গলের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় পুঁতে রেখেছে। এত বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করার পরে এ বার কাছাকাছি অন্য কোনও জায়গা থেকে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্রও মিলতে পারে বলে আমাদের ধারণা।” |
|
|
|
|
|