হলদিয়ায় শিল্প টানতে দরাজ ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
দেড় দশক আগে লগ্নিকারীদের বার্তা দিতে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের হাতিয়ার ছিল হলদিয়া। মঙ্গলবার সেই হলদিয়াতেই দাঁড়িয়ে শিল্পমহলকে বরাভয় দিলেন রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী। আরও এক বার শিল্পকর্তাদের বললেন, কোনও সমস্যায় পড়লে সরাসরি তাঁকে জানাতে।
গত কয়েক বছরে শিল্পের গন্তব্য হিসেবে এ রাজ্যের ভাবমূর্তি কার্যত তলানিতে এসে ঠেকেছে। সম্প্রতি তাতে ইন্ধন জুগিয়েছে হলদিয়াও। সেখানকার বন্দর ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। হলদিয়া ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন অনেকেই। নাব্যতাজনিত সমস্যার পরে এই নতুন সমস্যা হলদিয়া বন্দরের ভবিষ্যতকে সংশয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা।
এই অবস্থায় হলদিয়া শিল্পাঞ্চলকে ঘিরে এক গুচ্ছ পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করে শিল্প মহলের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করলেন মুখ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রী। পাশাপাশি বন্দরের সমস্যার কথা উড়িয়ে দিয়ে দু’জনেই বলেন, হলদিয়া বন্দরে কাজ বন্ধ থাকার খবর মিথ্যা। রাজ্য সরকারের বদনাম করতেই এই কুৎসা রটানো হচ্ছে।
জমির পাট্টা বিলি করছেন মুখ্যমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন হলদিয়ায় তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। প্রথমটি, ধনশ্রী পেট্রোকেমের ‘পেট-রেজিন’ কারখানার সম্প্রসারিত প্রকল্প। যেখানে লগ্নির পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। দ্বিতীয়টি, এপিজে সুরেন্দ্র গোষ্ঠীর ‘লজিস্টিক হাব’। সেখানে সব মিলিয়ে লগ্নি হবে প্রায় ২২৫ কোটি টাকা। এর পর জেভিএল অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ-এর ভোজ্য তেল তৈরির কারখানা। সেখানে লগ্নির পরিমাণ ১৬৫ কোটি টাকা।
প্রথম দু’টি প্রকল্প একই মঞ্চ থেকে উদ্বোধন করেন মুখমন্ত্রী। সেখানে বন্দর বিতর্কের জবাব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হলদিয়া ও সংশ্লিষ্ট এলাকার জন্য তাঁরা কী করেছেন তার তালিকাও দেন। আর ভবিষ্যতে কী করবেন? মুখ্যমন্ত্রী জানান, স্বাস্থ্য দফতর একটি ৫০ শয্যার ট্রমা সেন্টার গড়বে, আইটি হাব ও শিল্পতালুক তৈরি হবে। হবে শিল্প সম্মেলনও। ভাষণ দিতে দিতেই শিল্পমন্ত্রীর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “শিল্প দফতরের শিল্প সম্মেলন এ বার হলদিয়ায় করুন। ডিসেম্বরে। এটা সব জেলায় ঘুরে ঘুরে করতে হবে।”
কেন্দ্রের বঞ্চনার জন্যই হলদিয়ায় শিল্পবিকাশ আটকে রয়েছে বলে অভিযোগ রাজ্যের। শিল্পমন্ত্রীর দাবি, দূষণের জন্য সেখানে নতুন করে প্রকল্প গড়ার উপর নিষেধাজ্ঞা বছর তিনেক আগে জারি করেছিল কেন্দ্র। তাঁর অভিযোগ, যে বিশেষজ্ঞ সংস্থার পরামর্শে কেন্দ্র ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তারাই এখন বলছে দূষণের সমস্যা মিটেছে। অথচ কেন্দ্র এ নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করছে না।
কেন্দ্র যে ভূমিকাই নিক, হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে রাজ্য সরকার যে কর্মসূচি নিয়েছে তা দ্রুত সারার জন্য এ দিন শিল্পমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে শিল্পমহলকেও যে দ্রুত পরিকল্পনা রূপায়ণ করতে হবে, সে কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। নয়াচরে যে এলাকা (পাঁচ হাজার একর) কেন্দ্রের অনুমোদনের জন্য আটকে রয়েছে, সেটা বাদ দিয়ে বাকি প্রায় ৩৫ হাজার একরে পরিবেশবান্ধব প্রকল্প গড়ার কাজ শুরু করার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “অনেক সময় চলে দিয়েছে। আর অপেক্ষা নয়। আমি দেখতে চাই সব প্রকল্পের দ্রুত রূপায়ণ।”
তবে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ যে ভাবে মাথাচাড়া দিচ্ছে, তাতে যে শিল্প টানার চেষ্টা গোড়াতেই মার খেতে পারে সেটা বুঝেই পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্য স্থানীয় সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
একই সঙ্গে লগ্নিকারীদের বলেন, “সমস্যা হলে পার্থবাবুকে ধরুন। শুভেন্দুকে ধরুন। না হলে আমার কাছে আসুন। আমাকে এসএমএস পাঠান। কোনও অসুবিধা নেই।” বস্তুত, সরাসরি তাঁর কাছে আসার কথা তৃণমূল সরকারের প্রথম শিল্প সম্মেলন থেকেই বলে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে শ্রমিক অসন্তোষের জন্য শুধু শ্রমিকের উপরই দায় চাপানো যে রাজ্য ভাল ভাবে নেবে না, সেটাও এ দিন মুখ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর কথা থেকে স্পষ্ট। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, শ্রমিকের আস্থা জিততে হবে। আর শিল্পমন্ত্রীর কথায়, “সকলকে নিয়েই চলতে চাই।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.