|
|
|
|
হুমকি চলছেই, বলল এবিজি |
কাজ বন্ধ, মমতার দাবি হলদিয়া স্বাভাবিক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া ও কলকাতা |
হলদিয়া বন্দরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে মঙ্গলবার একযোগে দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী এবং তমলুকের সাংসদ। অভিযোগ করলেন, রাজ্য সরকারের বদনাম করতে কুৎসা রটানো হচ্ছে। কিন্তু ঘটনা হল, এ দিনও হলদিয়া বন্দরের দু’টি বার্থে কাজ হয়নি। গত কয়েক দিন ধরে যে ডামাডোল চলছিল, তারও কোনও উন্নতি হয়নি বলে বন্দর সূত্রেই দাবি। এমতাবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের মন্তব্য সেই ডামাডোলকেই সমর্থন জোগাল বলে হলদিয়া বন্দরের সঙ্গে যুক্ত অনেকের অভিমত। মুখ্যমন্ত্রীর দাবির পরে বার্থ দু’টির দায়িত্বে থাকা উদ্বিগ্ন এবিজি-কর্তার প্রতিক্রিয়া, “এক দিকে আমাদের কর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, অন্য দিকে রাজনীতিকেরা রাজনীতির কথা বলছেন।”
এক গুচ্ছ শিল্প প্রকল্পের উদ্বোধন করতে হলদিয়া এসে এ দিন তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে পাশে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, হলদিয়া বন্দরে যে কাজ হচ্ছে, সেটা তিনি নিজে দেখে এসেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সুরে সুর মিলিয়ে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বন্দরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে দাবি করেন। আরও এক ধাপ এগিয়ে শুভেন্দু বলেন, বন্দরের প্রতিটি বার্থেই স্বাভাবিক ভাবে মাল ওঠানো-নামানো চলছে।
কিন্তু বন্দর সূত্রে খবর, গত ১৬ দিনের মতো এ দিনও ২ ও ৮ নম্বর বার্থে কাজ হয়নি। গত ২৫ সেপ্টেম্বর সেখানে কাজ বন্ধ করার নোটিস দেয় বার্থ দু’টির দায়িত্বে থাকা সংস্থা এবিজি। সংস্থাটির দাবি, শুভেন্দুর নেতৃত্বাধীন শ্রমিক সংগঠনের জঙ্গি আন্দোলনের জেরেই তারা কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। আগে যথেষ্ট পণ্য খালাস করতে না দেওয়ায় লোকসান হচ্ছে এই অভিযোগ তুলে হলদিয়া ছেড়ে যেতে চেয়েছিল এবিজি। হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে তারা আপাতত থেকে গেলেও সমস্যা মেটেনি। |
|
মঙ্গলবার হলদিয়ায়। —নিজস্ব চিত্র |
সমাধান সূত্রের খোঁজ করতে বৃহস্পতিবার একটি কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন বন্দরের চেয়ারম্যান। শনি ও রবিবার সেই কমিটির বৈঠকের পরে একটা আশার আলো দেখা গিয়েছিল। শর্তসাপেক্ষে হলদিয়ায় থেকে যেতে রাজি হয় এবিজি। মনে হচ্ছিল হলদিয়া বন্দরের পরিস্থিতি বোধহয় স্বাভাবিক হতে চলেছে। কিন্তু এ দিন মুখ্যমন্ত্রী কার্যত শুভেন্দুকেই সমর্থন করে যে মন্তব্য করেছেন, তাতে পরিস্থিতি ফের জটিল হয়ে গেল বলে সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকের অভিমত।
এ দিন হলদিয়ায় ধনশ্রী গোষ্ঠীর পেট্রো-রসায়ন কারখানার সম্প্রসারিত প্রকল্পের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এটা একটা স্ট্র্যাটেজি রাজ্য সরকারকে ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়ার। আমার তাতে কিছু যায় আসে না। আমি তো এসে দেখলাম হলদিয়া বন্দরে কাজ হচ্ছে। ক’দিন ধরে দেখছি একটা পক্ষের হয়ে শুধু মিথ্যে কথা বলা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের বদনাম করার একটা প্রক্রিয়া চলছে। বিশ্ব রাজ্যকে শংসাপত্র দিচ্ছে। বাংলাকে নষ্ট করার কোনও অধিকার কি কারও আছে? রাজ্য এগিয়ে যাবে।”
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ মূলত একটি সংবাদপত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। তাদের নাম না করে মমতা বলেন, “একটা গুজব রটছে। কিছু মিথ্যে কথা বলা হচ্ছে। নিজেদের স্বার্থে কুৎসা রটানোর চেষ্টা করছে একটা বড় গোষ্ঠী। যাদের হাতে দু’টি চ্যানেল আর তিনটি কাগজ রয়েছে। আমি আপনাদের বলব, এগুলো শুনে আশঙ্কায় ভুগবেন না।”
শিল্পমন্ত্রীও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যখন হলদিয়াকে কেন্দ্র করে শিল্পের বাতাবরণ সৃষ্টি হচ্ছে, তখন কিছু গণমাধ্যম কদর্য ভাবে সংবাদ প্রকাশিত করছে। একটি স্বার্থান্বেষী মহল বন্দরে যা ঘটেনি তার ভুল তথ্য প্রচার করে শিল্পের দরজা বন্ধ করার ব্যর্থ চেষ্টা করছে।” |
এটা একটা স্ট্র্যাটেজি রাজ্য সরকারকে ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়ার। আমি তো এসে দেখলাম হলদিয়া বন্দরে কাজ হচ্ছে। ক’দিন ধরে দেখছি একটা পক্ষের হয়ে
শুধু মিথ্যে কথা বলা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের বদনাম করার একটা প্রক্রিয়া চলছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্যমন্ত্রী |
|
আর শুভেন্দুর দাবি, “বন্দরে গেলেই দেখা যাবে সব ক’টি বার্থে কাজ হচ্ছে। আমি দায়িত্ব নিয়ে শিল্পপতিদের বলতে পারি, একটা নির্দিষ্ট সংবাদমাধ্যম কয়েক দিন ধরে যে প্রচার করছে তার কোনও বাস্তবতা নেই।”
কিন্তু এবিজি-র সিইও গুরপ্রীত মালহি এ দিন বলেন, “হলদিয়ায় এখনও কাজের পরিবেশ তৈরি হয়নি। প্রতিদিন আমাদের কর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় কাজ শুরু করা সম্ভব নয়। অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে এখানে থাকাও সম্ভব নয়। ৭ সেপ্টেম্বর নোটিস দিয়ে সেটাই বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছিলাম।”
তবে মুখ্যমন্ত্রী যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে দাবি করছেন? মালহির জবাব, “উনি রাজনীতির লোক। তাঁর রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকে কিছু বলে থাকতে পারেন। আমাদের সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য নিয়ে তাই কোনও মন্তব্য করতে চাই না।”
এবিজি-র তরফে বলা হয়েছে, বন্দর চেয়ারম্যানের গড়ে দেওয়া কমিটির বৈঠকে যে সমাধানসূত্র বেরিয়েছে, সেটি তাদের পরিচালন সমিতির বৈঠকে পেশ করা হবে। পরিচালন কমিটির অনুমতি পেলে তবেই কাজ শুরু করা হবে হলদিয়া বন্দরে। তার আগে নয়। পরিচালন সমিতি যদি শেষ পর্যন্ত কাজ শুরু করার অনুমতি না দেয়? বন্দরের একটি সূত্রের বক্তব্য, এবিজি দ্রুত কাজে যোগ না দিলে অছি পরিষদের বৈঠক ডেকে তাদের সঙ্গে চুক্তি খারিজ করে দেওয়া হতে পারে। যার উত্তরে এবিজি-র এক মুখপাত্র বলেন, “সে ক্ষেত্রে আমরাও ছাড়ব না। বন্দরকে ক্ষতিপূরণ মেটাতে বলব, নইলে আদালতে যাব।”
মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান এ দিন প্রতিক্রিয়া জানাননি। কিন্তু জাহাজি মহলের প্রশ্ন, সমস্যা না থাকলে চেয়ারম্যান রাজের হস্তক্ষেপ চেয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রসচিব এবং ২৮ সেপ্টেম্বর মুখ্যসচিবকে চিঠি দিলেন কেন। স্বরাষ্ট্রসচিবকে লেখা চিঠিতে তিনি ১৯ সেপ্টেম্বর হলদিয়া বন্দরে এবিজি-র সহযোগী সংস্থার অফিসে আইএনটিটিইউসি-র সমর্থক শ্রমিকদের জঙ্গি বিক্ষোভের প্রসঙ্গ তোলেন। তার পরেও যে পরিস্থিতির যে উন্নতি হয়নি, তা এ দিন বন্দর সূত্রেই স্বীকার করা হয়েছে। |
|
|
|
|
|