প্রচারের আড়ালে
স্রেফ নামেই প্রবীণদের জন্য রয়েছে বহির্বিভাগ
হির্বিভাগ আছে। অথচ রোগী নেই। কারণ, পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স, সহকারীর অভাব। অভিযোগ, নির্দিষ্ট ওই বিভাগ সম্পর্কে কোনও প্রচার নেই। অথচ, যাঁদের জন্য এই পরিষেবা তাঁরা তো দূর অস্ত্, চিকিৎসক মহলের অনেকের কাছেই পরিষ্কার নয় এর ধারণা। অভিযোগ উঠেছে, সরকারি প্রচেষ্টায় মেডিক্যাল কলেজ, এসএসকেএম ও ন্যাশনালে গত দশ বছরে চালু হয়েও এ ভাবেই থমকে আছে ‘জেরিয়্যাট্রিক ওপিডি’। শহরের একটি মাত্র বেসরকারি হাসপাতালে চালু এই বিভাগের ছবিটাও বেশ ম্লান।
কী এই ‘জেরিয়্যাট্রিক ওপিডি’?
বয়স্কদের জন্য চোখ, নাক, কান থেকে অস্থি, হৃদ্রোগ, স্নায়ু, মনোরোগ সমেত যাবতীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে একই ছাতার নীচে। নির্দিষ্ট কোনও সমস্যা নিয়ে গেলেও প্রয়োজনে তাঁর পুরো চেক-আপ হবে। বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত ‘বোর্ড মিটিং’-এ সিদ্ধান্ত হবে চিকিৎসার পদ্ধতি। ফলে, অযথা দৌড়ঝাঁপ না করেই মিলবে দ্রুত চিকিৎসা। ‘জেরিয়্যাট্রিক মেডিসিন’-এর এটাই মূল উদ্দেশ্য।
বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় ভাঙছে পরিবার। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বাড়ির প্রবীণ মানুষটি এখন যেন কার্যত বোঝা। বেশির ভাগের গন্তব্য কাশী না হলেও বৃদ্ধাশ্রম। নচেৎ ঘরের কোণের একাকীত্ম। তাই বার্ধক্যেও নিজেকেই নিজের সমস্যার সমাধান করতে হবে। অন্য দিকে, জীবনযাত্রার মানের উন্নতি আর স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে এ দেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষের গড় আয়ু। ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র (হু) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০১-এ দেশে ষাট বছরের বেশি বয়সের মানুষের সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৬০ লক্ষ, যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। ২০২১-এ সেই সংখ্যাটা দাঁড়াবে ১৩ কোটি ৭০ লক্ষে। ২০১১-র জনগণনা বলছে, ভারতে ষাট বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তির সংখ্যা ছাড়িয়েছে পাঁচ বছরের নীচের শিশুর মোট সংখ্যাকেও।
এই পরিসংখ্যানগুলিই ভাঁজ ফেলছে কপালে। এখনই না ভাবলে অদূর ভবিষ্যতে এর ফলাফলে আশঙ্কিত চিকিৎসক মহল। হৃদ্রোগ চিকিৎসক বিশ্বকেশ মজুমদার বলছেন, “বয়স্কদের মধ্যে হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, আর্থারাইটিস, পারকিনসনস, কার্ডিয়াক, ডিমনেশিয়া, অ্যালঝাইমারের মতো বিভিন্ন রোগ বাড়ছে। পাশাপাশি, মনোরোগের সমস্যা নিয়েও আসেন তাঁরা। প্রকৃত অর্থে ‘জেরিয়্যাট্রিক’ ওপিডি শুরু করলে অযথা হয়রানি বন্ধ হবে। দ্রুত চিকিৎসাও শুরু হবে। বহু বছর ধরেই ইংল্যান্ডে এর প্রচার ও প্রসার যথেষ্ট। ওই দেশে কম্যুনিটি মেডিসিন পর্যায়ে এর বিস্তার।” তাঁর মতে, সরকারি স্তরে শুধু নয়, জেরিয়্যাট্রিক মেডিসিনের প্রসারে এগিয়ে আসতে হবে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকেও।
সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলির চিকিৎসকেরাও মানছেন, শহরের হাসপাতালগুলিতে ‘জেরিয়্যাট্রিক ওপিডি’ আদতে সাধারণ বিভাগের মতোই। একই ছাদের নীচে সব বিভাগের সুবিধা পাওয়া যায় না। তাই বয়স্কদের এখান থেকে ওখানে ঘুরতেই হয়। ‘ওপিডি’ কোথাও চলছে সপ্তাহে এক দিন, কোথাও দু’দিন। তাও প্রচারের অভাবে রোগী তলানিতে। শহরের একমাত্র যে বেসরকারি হাসপাতালে ‘জেরিয়্যাট্রিক’ বিভাগ রয়েছে, তার সিইও রূপক বড়ুয়ার মতে, ‘‘তিন বছর আগে শুরু হয়েও দৈনিক রোগীর সংখ্যা এখন তিন থেকে পাঁচ। কী ভাবে একে ঢেলে সাজানো যায় সে ব্যাপারে নতুন করে ভাবনাচিন্তা চলছে।” এসএসকেএম-এর ডিরেক্টর প্রদীপ মিত্রও স্বীকার করছেন, সরকারি হাসপাতালের বেহাল ‘জেরিয়েট্রিক ওপিডি’র বিষয়টি।
কিন্তু কেন? ন্যাশনালের সুপার পার্থ প্রধান বলছেন, “দেড় হাজার নতুন ও সাড়ে চার হাজার পুরনো রোগী প্রতি দিন হাসপাতালে আসেন। তাঁদের ঠিকমতো পরিষেবা দেওয়ার মতো উপযুক্ত পরিকাঠামো আমাদের নেই। সেখানে কোথা থেকে ডাক্তার বা নার্স তুলে নিয়ে যাব ওই বিভাগের জন্য?” চিকিৎসক বিশ্বরূপ ঘোষদস্তিদারের মতে, “বয়স্কদের চিকিৎসার জন্য সরকারি উদ্যোগে জেরিয়্যাট্রিক বিভাগ শুরু করতে হবে। সেই সঙ্গে তাঁদের জন্য মোবাইল ভ্যান পরিষেবা শুরুর কথাও ভাবা হোক।” স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের আশ্বাস: “গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণে আগামী দিনের কথা ভেবেই সরকার ‘জেরিয়্যাট্রিক’ বিভাগ ঢেলে সাজার কথা ভাবছে। কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ও জেলা হাসপাতালে ধাপে ধাপে খুলবে এই বিভাগ। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি করেই শুরু হবে ওই বিভাগ।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.