ফের বৈঠক পরশু, হাত গুটিয়ে রাজ্য
অশান্তির হলদিয়া ছেড়ে জাহাজ বিশাখাপত্তনমে
ন্দর-কর্তৃপক্ষের আশঙ্কাই শেষ পর্যন্ত সত্যি হল!
অশান্তির জেরে হলদিয়া বন্দর অভিমুখী জাহাজ এ বার নোঙর করতে শুরু করল পূর্ব উপকূলের অন্য বন্দরে। কলকাতা বন্দর সূত্রের খবর, চলতি বিবাদের জেরে ২৫ হাজার টন কোকিং কোল-বাহী একটি জাহাজ শেষ পর্যন্ত হলদিয়ায় না-এসে বিশাখাপত্তনমে গিয়ে ভিড়েছে। শ্রম-সমস্যার দ্রুত সমাধান না-হলে আরও অনেক জাহাজ পারাদীপ, বিশাখাপত্তনমের মতো বন্দরে চলে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বন্দর-কর্তৃপক্ষ।
বন্দর সূত্রে রবিবার বলা হয়, হলদিয়া বন্দরের মোট ১৩টি বার্থের মধ্যে পণ্য খালাসকারী সংস্থা এবিজি-র জন্য বরাদ্দ দুই এবং আট নম্বর বার্থ ছাড়াও আরও অন্তত দু’টি বার্থে জাহাজ ভিড়ছে না। হলদিয়া বন্দরে এবিজি-কে নিয়ে বিবাদ শুরু হওয়ার পরে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকে চিঠি দিয়ে এমন আশঙ্কার কথাই জানিয়েছিলেন কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান (হলদিয়া বন্দরেরও ভারপ্রাপ্ত) মণীশ জৈন। সমস্যা না-মেটায় তিনি পরে মুখ্যসচিবকেও চিঠি দিয়ে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ চান। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। সরকার হস্তক্ষেপ করতে না-চাওয়ায় এখন বন্দর-কর্তৃপক্ষকেই বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে হবে।
জট কাটাতে বন্দর-কর্তৃপক্ষ ৩ অক্টোবর বিবদমান সব পক্ষকে নিয়ে হলদিয়ায় ফের বৈঠকে বসতে চলেছেন। কিন্তু সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য কোনও প্রস্তাব এখনও পেশ করতে পারেননি তাঁরা। ২৭ সেপ্টেম্বর এই ধরনের একটি বৈঠক হয়েছিল হলদিয়ায়। কিন্তু নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে এবিজি সেই বৈঠকে যায়নি। হলদিয়ায় বৈঠক হলে তারা সেখানে যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ওই সংস্থা। তাই ৩ অক্টোবরের বৈঠকের ভবিষ্যৎ নিয়েও ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। চেয়ারম্যানের ডাকা বৈঠকে যেতে চান না স্থানীয় তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীও। ফলে হলদিয়া বন্দরের অচলাবস্থা কাটার সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না।
চেয়ারম্যান অবশ্য বন্দর ব্যবহারকারীদের একজোট হয়ে ৩ অক্টোবরের বৈঠকে যোগ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। রবিবার তিনি বলেন, “সার্বিক ভাবেই বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা চলছে। তার থেকে হলদিয়া বন্দরও মুক্ত নয়। এই সারসত্যটি বুঝেই বন্দর ব্যবহারকারীদের বৈঠকে আসার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।” ৩ অক্টোবরেই পণ্য খালাস সমস্যার সমাধানসূত্র মিলবে বলে তাঁর আশা।
হলদিয়া বন্দরের দুই এবং আট নম্বর বার্থে পণ্য খালাসকারী সংস্থার বিরুদ্ধে বন্দর কি কোনও ব্যবস্থা নেবে?
বন্দরের চেয়ারম্যান বলেন, “ওই দু’টি বার্থে যারা কাজ করে, তারা নিছক ঠিকাদার সংস্থা। চুক্তি মেনেই তাদের কাজ করতে হবে। গত এক মাস ধরে ওই দু’টি বার্থে যা চলছে এবং তাতে ওই ঠিকাদার সংস্থার যে-ভূমিকা, সে-দিকে আমরা নজর রেখেছি। সময় হলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাজ্য সরকার কী করছে?
বন্দরে রাজ্যের হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন জৈন। প্রয়োজনে তমলুকে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসকের সভাপতিত্বে সকলকে নিয়ে বৈঠকে ডাকার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। তবে সমস্যা মেটাতে হবে বন্দর-কর্তৃপক্ষকেই।” পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পারভেজ সিদ্দিকি বলেন, “হস্তক্ষেপ চেয়ে বন্দর-কর্তৃপক্ষের কোনও চিঠি আমার কাছে আসেনি। শীর্ষ স্তর থেকেও কোনও নির্দেশ পাইনি। তবে পরিস্থিতির উপরে আমাদের নজর আছে।”
হলদিয়া বন্দরে এ দিনও শ্রমিক-বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। তবে এবিজি-র কাজ হারানো শ্রমিকেরা জঙ্গি আন্দোলনের পথ ছেড়ে অহিংস পথ নিয়েছেন। এ দিন হলদিয়া টাউনশিপে বন্দর আধিকারিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে থালা-বাটি হাতে কাজের দাবিতে ভিক্ষা চাইলেন তাঁরা। মৌনী মিছিলও হয়। কর্মসূচির নেতৃত্বে থাকা তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের নেতা সমীরণ বেতাল বলেন, “যত দিন কাজ ফিরে না-পাচ্ছি, তত দিন খাওয়াদাওয়া এবং ছেলেমেয়েদের পোশাকেরও দাবি জানিয়েছি।”
এর মধ্যেই পুলিশ ওই বন্দর থেকে সদ্য বদলি হওয়া আধিকারিক রমাকান্ত বর্মনের বিরুদ্ধে তোলা আদায়ের অভিযোগ আনায় অফিসার মহলে নতুন করে অশান্তি দানা বাঁধছে। বন্দরের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন রমাকান্তবাবু। কিন্তু পুলিশ বলছে, ২৩ সেপ্টেম্বর যখন তাঁকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে রমাকান্তবাবুর অভিযোগ, সেই সময় তিনি এবিজি-র এক প্রতিযোগী সংস্থার অফিসে টাকা চাইতে গিয়েছিলেন। প্রতিযোগী সংস্থাটিই তাদের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিল বলে পুলিশের দাবি। হলদিয়ার এসডিপিও অমিতাভ মাইতি বলেন, “বর্মনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে টাকা চাওয়ার অভিযোগের হদিস পেয়েছি।” অভিযোগ অস্বীকার করে রমাকান্ত বলেছেন, “আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.