ময়নাতদন্তে নিহত এক গন্ডারের দেহ থেকে মিলল একে-৪৭ রাইফেলের কার্তুজ! এবং এই কার্তুজটিই ধন্দে ফেলে দিয়েছে প্রশাসনকে। প্রশাসনিক কর্তাদের ধারণা, গন্ডার হত্যায় জঙ্গিদের হাত রয়েছে। একে-৪৭ রাইফেলের ব্যবহার সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আজ থেকেই কাজিরাঙা লাগোয়া কার্বি পাহাড়ে সেনা-অভিযান শুরু হয়েছে। পাশাপাশি চলছে লাগাতার গন্ডার হত্যার সিবিআই তদন্তও।
গত ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর, কাজিরাঙার বাইরে কার্বি আংলং-এর পার্কু পাহাড় ও জখলাবান্ধার জগদম্বা চা-বাগানে দু’টি গন্ডারের রক্তাক্ত দেহ মেলে। জীবিত অবস্থাতেই তাদের খড়্গ কেটে নেওয়া হয়। বনরক্ষী ও চিকিৎসকরা চেষ্টা করেও গন্ডার দু’টিকে বাঁচাতে পারেনি। গত কাল, দুটি গন্ডারের ময়না তদন্ত হয়। ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার পশু চিকিৎসক ভাস্কর চৌধুরী জানান, “কার্বি পাহাড়ে গুলিবিদ্ধ গন্ডারটির শরীরে তিনটি গুলি ঢুকেছিল। সেগুলি ৩০৩ রাইফেলের বুলেট। একটি গুলি কাঁধের হাড় ভেঙে দেয়। তাই গন্ডারটি উঠে দাঁড়াতেও পারেনি। তবে, জগদম্বা চা-বাগানের গন্ডারটির শরীর থেকে মিলেছে একে-৪৭ রাইফেলের গুলি। সাধারণত, চোরাশিকারিরা এই ধরণের অ্যাসল্ট রাইফেল ব্যবহার করে না। এই রাইফেল গন্ডার মারার পক্ষে উপযুক্তও নয়। জীবন্ত অবস্থায় যে ভাবে দু’টি গন্ডারের খড়্গ কাটা হয়েছে, তাতে বোঝা যায় শিকারি বা জঙ্গিরা কতটা বেপরোয়া ছিল।
বনকর্তাদের মতে, বানভাসি কাজিরাঙা ছেড়ে বের হওয়া গন্ডার-সহ বহু প্রাণী উঁচু ডাঙ্গার সন্ধানে কার্বি পাহাড়েই আশ্রয় নেয়। সে ক্ষেত্রে, জঙ্গিদের সহজ শিকার হয়েছে তারা। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ আজ বলেন, “কাজিরাঙার ভিতরে প্রাণীদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও চিন্তা নেই। কিন্তু কাজিরাঙা থেকে বের হয়ে প্রাণীরা কার্বি আংলং-এ ঢুকে পড়লেই সমস্যা সেখানে অসম বনবিভাগ বা প্রশাসন নয়, কার্বি আংলং স্বশাসিত পরিষদের শাসন। পশু বাঁচাতে বিষয়টি নিয়ে কার্বি স্বশাসিত পরিষদের সঙ্গে কথা বলা হবে।” কার্বি পাহাড়ে শিকার আটকাবার জন্য অবিলম্বে বন শিবির গড়াও আবশ্যক বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার ওয়াইল্ডলাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরো গড়ার কথাও বিবেচনা করছে। এ ছাড়াও অন্যান্য দেশ গন্ডার সংরক্ষণ নিয়ে কী ভাবে এগোচ্ছে, তা জানতে সেই সব দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনাও করা হবে।”
এ দিকে, আজ থেকেই গন্ডার হত্যায় জড়িতদের সন্ধানে কার্বি আংলং-এর পাহাড়ে সেনা অভিযান শুরু হয়েছে। কাজিরাঙার নতুন অধিকর্তা এন কে ভাসু জানান, “স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাছেই শিকারিরা গন্ডারের গতিবিধির সন্ধান ও গা-ঢাকা দেওয়ার আশ্রয় পান। তাই গ্রামবাসীদের পাশে না পেলে আমরাও অসহায়।” এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে বনকর্মীদের সম্পর্ক উন্নত করতে ও গ্রামবাসীদের বক্তব্য শোনার জন্য আগামী কয়েকদিনে বেশ কিছু আলোচনাসভারও ব্যবস্থা করছে কাজিরাঙা কর্তৃপক্ষ। |