যন্তর-মন্তরের প্রতিবাদ সভাকে কেন্দ্র করেই সর্বভারতীয় স্তরে একটি রাজনৈতিক মঞ্চ গড়ার কাজ শুরু করতে চলেছেন তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এর আগেও একাধিক বার রাজ্যের বিভিন্ন বিষয়ে যন্তর-মন্তরের ধর্নামঞ্চে দেখা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু সোমবারের প্রতিবাদ সভার চরিত্র সম্পূর্ণ পৃথক। কেন্দ্রে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং জনবিরোধী নীতি প্রণয়নের অভিযোগ তুলে জাতীয় স্তরে নিজেদের শক্তিবৃদ্ধি করা এবং সম-মনোভাবাপন্ন দলগুলিকে নিয়ে জোট তৈরিই এখন মমতার প্রধান লক্ষ্য। এবং দিল্লির সভা থেকেই সে কাজ শুরু করতে চান তিনি। এর মধ্যেই আজ প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী মমতার কড়া সমালোচনা করেছেন। চেন্নাইয়ে এ দিন তিনি বলেন, “মমতা ক্ষমতায় আসার পর তাঁর রাজ্যে কোনও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়নি। শিল্পায়নও হয়নি।” নারায়ণস্বামীর এই মন্তব্যের ফলে মমতা-কেন্দ্র সংঘাতের সুর আরও চড়া হয়েছে। |
রাত পোহালেই সভা। তার আগে আজ সন্ধ্যার মধ্যেই যন্তর-মন্তর সংলগ্ন গোটা এলাকা ছেয়ে গিয়েছে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, পোস্টারে। এবং প্রতিটিই হিন্দিতে লেখা। দিল্লি এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে আসা জনতা আজই ক্যামেরার সামনে স্লোগান তুলছেন, “মমতাজি তুম আগে বাড়ো, হাম তুমহারা সাথ হ্যায়।” রয়েছে মমতার ছবি দেওয়া কাট আউটও।
প্রতিবাদ সভার প্রস্তুতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে এ দিন বিকেলে গিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায়। তিনি বলেন, “সরকারের আম-আদমি বিরোধী নীতি নিয়ে গোটা দেশে একটা উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। দেশের রাজধানীও তার ব্যতিক্রম নয়। আমরা চাইছি, আগামিকালের ধর্নামঞ্চে দিল্লি এবং তার আশেপাশের মানুষ এসে যোগ দিন।”
বার্তা স্পষ্ট। আগামিকাল প্রবল ভিড় তৈরি করাটা তৃণমূলের উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য, সাউথ ব্লকের ঘাড়ের কাছে বসে মূলত হিন্দি বলয়ের মানুষদের সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রের উপর চাপ তৈরি করা। শুধু দিল্লি নয়, তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, গোটা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে দল। শুধু জনসভা নয়, বিভিন্ন অ-কংগ্রেসি দলের সঙ্গেও যোগ রেখে চলছেন মমতা। তবে মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে বিজেপি-সঙ্গ স্বাভাবিক ভাবেই এড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি। বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন মমতা। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে তাঁর। ওড়িশায় গিয়ে বিজেডি নেতা নবীন পট্টনায়কের সঙ্গেও দেখা করার ইচ্ছা রয়েছে মমতার। ভবিষ্যৎ জোটের বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়ে মমতা আগেই বলেছিলেন, পরবর্তী সময়ে আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে জোট হলে তিনি যোগ দিতে রাজি। সম-মনোভাবাপন্ন জোটকে কেন্দ্রে সরকারে গড়ার প্রশ্নে সমর্থন করতেও তাঁর আপত্তি নেই। তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, আঞ্চলিক দলগুলিকে এ বার ভেবে দেখতে হবে, কে কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করার পর এই প্রথম রাজধানীতে মমতা। সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে আগামিকাল হিন্দিতেই বক্তৃতা দেবেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের কোনও মুখ্যমন্ত্রী দিল্লিতে এসে হিন্দিতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাস্তায় বক্তৃতা করছেন এই দৃশ্য যথেষ্ট বিরল। প্রতিবাদ সভায় কত লোক আসবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। দশ বছর আগে নীতীশ কুমারের রেল জোন বিভাজন নীতিতে বাংলার বঞ্চনার প্রতিবাদে মমতার সঙ্গে সারা দিন ধর্না দিয়েছিলেন তৃণমূলের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ তিনি বললেন, “এর আগে দিল্লিতে মমতা যখন প্রতিবাদ আন্দোলন করেছেন, তা মূলত রাজ্যভিত্তিক বিষয়ের উপরেই সীমিত থেকেছে। কিন্তু এই প্রথম জাতীয় বিষয়ের উপর সভা করা হচ্ছে তৃণমূলের পক্ষ থেকে।” |