নিজস্ব সংবাদদাতা • বহরমপুর |
মুর্শিদাবাদ জেলা হাসপাতালের ‘মাতৃসদন’ আপাদমস্তক ‘নরক’।
হ্যাঁ সাধারনের কাছে এটাই প্রচলিত নাম বহরমপুর মাতৃসদনের।
তিনটি বিছানা পাশাপাশি। সেখানে শুয়ে রয়েছেন পাঁচ প্রসূতি। কিন্তু ডাক্তারবাবু এসে দেখবেন কী করে? তেমন পরিসরই নেই।
দুর্গন্ধ, যন্ত্রণায় ছটফট করছেন কেউ। পাশের জন হয়তো তার মধ্যেই খোশ গল্প করছেন পরিবারের সঙ্গেসাদা এবং কালো, হাসি ও কান্না নিয়ে এ ভাবেই আপাদমস্তক ‘অবাস্তব’ একটা চেহারা নিয়ে পড়ে রয়েছে মাতৃসদন।
এ বার বাইরে আসুন--সিঁড়ি থেকে চত্বর, গিজগিজ করছে বহিরাগতের ভিড়। কে তাঁরা? কেনই বা এখানে? উত্তর মেলা ভার। চত্বর জুড়ে পাউরুটি, বিস্কুট ও পানীয় জলের দোকান, রয়েছে হোটেলও। ঝাঁকায় বসেছে পেয়ারা, ঝালমুড়ি, বাঁশি-এমনকী শিশু ভোলানো ঝুনঝুনি নিয়ে হকারও। আর রয়েছে, বেসরকারি গাড়ির ভিড়।
স্বাস্থ্যকর্মীদের দায়সারা চিকিৎসায় শরীর পু্ড়ে গিয়েছিল লালগোলা হাসপাতালে। |
মাতৃসদন চত্বরেই গজিয়ে উঠেছে দোকানপাট। —নিজস্ব চিত্র। |
সন্তান প্রসবের পর লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের লেবার রুমে জীবানুনাশকের বদলে অ্যাসিড দিয়ে তাঁর শরীর সাফ সুতরো করা চলছিল। এমন ভুল প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক অজয়কুমার চক্রবর্তী সাফাই, “বছরে ২০ হাজার প্রসূতি সন্তান প্রসব করে যে মাতৃসদনে সেখানে চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র ৫ জন। এই অতিরিক্ত চাপ সামাল দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে।” এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এমন ‘অবহেলা’র শিকার বহু নবজাতই।
জেলা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি সুব্রত সাহা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। তিনি বলেন, “সরকারি হাসপাতালের শয্যা ও চিকিৎসক-সহ পরিকাঠামোর কোনও দিকের উন্নতি না করে ৩৪ বছরে ধরে মানুষকে নাসির্ং হোমের দিকে ঠেলে দিয়েছে। সেই অভিশাপ দুর করতে আমাদের কয়েকটা বছর সময় দিন। তারপর দেখবেন মানুষ আবার সরকারি হাসপাতালের দিকেই মুখ ফিরিয়েছে।” বস্তুত গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কিন্তু সরকারি হাসপাতালের দিকেই তাকিয়ে থাকেন। প্রথমত মফসসল শহর ছাড়া নার্সিংহোমও এ জেলায় তেমন নেই। দ্বিতীয়ত, পিছিয়ে থাকা মুর্শিদাবাদের অধিকাংশেরই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর সামর্থ নেই। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। |