বাম শিবিরের চার বিধায়ক ধরে আছেন মশারির চার কোণ। সেই সবুজ মশারির ভিতরে ঢুকে শুয়ে পড়লেন প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রী তথা ক্যানিং (পূর্ব)-এর বিধায়ক আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। কিছু পরে মশারির ভিতরে থেকেই দলের অন্য বিধায়কদের সঙ্গে মিছিল করে হাঁটলেন তিনি। দিলেন স্লোগানও।
রাস্তায় নয়। ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার খাস বিধানসভায় এমনই অভিনব পন্থায় বিক্ষোভ দেখালেন বাম বিধায়কেরা। তার জেরে অধিবেশনের প্রথমার্ধে তুমুল গোলমাল হয়। বাম বিধায়কেরা ওয়েলে নেমে প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দিতে থাকেন। তার পরেই মশারি-পর্ব। সভাকক্ষ ঘুরে মশারি-বন্দি রেজ্জাককে নিয়েই মিছিল বেরিয়ে আসে লবিতে। বিক্ষোভ-স্লোগান চলে সেখানেও। বিধানসভায় কক্ষত্যাগেও এই ভাবে অভিনবত্বের ছোঁয়া দিয়ে যায় বাম শিবিরের মশারি।
ডেঙ্গি নিয়ে এ দিন আলাদা ভাবে দু’টি মুলতুবি প্রস্তাব আনতে চান বিধায়কেরা। একটি প্রস্তাব ছিল বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, প্রাক্তন মন্ত্রী আনিসুর রহমান-সহ বাম বিধায়কদের এবং অন্যটি কংগ্রেস বিধায়ক অজয় দে-র। ডেঙ্গি দমনে রাজ্য সরকার ব্যর্থ বলে অভিযোগ করা হয় দু’টি প্রস্তাবেই। আলাদা ভাবে প্রসঙ্গটি তুললেও বাম ও কংগ্রেসের সুর মিলিয়ে দেয় ডেঙ্গিই।
প্রথমে বামেদের তরফে প্রস্তাবটি পড়েন বিরোধী দলনেতা। সূর্যবাবু বলেন, “ডেঙ্গিতে ৪৯ জন মারা গিয়েছেন। আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজারেরও বেশি। ডেঙ্গি নিরাময়ে সরকারের ভূমিকা আশানুরূপ নয়।” আর অজয়বাবু বলেন, “সরকারি পরীক্ষাগার থেকে সাত দিনের আগে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না। তাই অনেকেই আড়াই-তিন হাজার টাকা দিয়ে বেসরকারি পরীক্ষাগারে রক্ত পরীক্ষা করাচ্ছেন। রাজভবন, বিধায়ক আবাস-সহ সর্বত্র ডেঙ্গি হচ্ছে।” স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় দু’টি মুলতুবি প্রস্তাবই খারিজ করে দেন। তার পরেই গোলমাল শুরু করেন বামেরা। |
মশারি জড়িয়ে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তের প্রতিবাদ রেজ্জাক মোল্লার। —নিজস্ব চিত্র |
পরে, সভাকক্ষের বাইরে প্রেস কর্নারে বিরোধী দলনেতা বলেন, কোনও কোনও বিধায়কের ছেলেমেয়েও আক্রান্ত হয়েছেন ডেঙ্গিতে। তাঁর কথায়, “আসলে ডেঙ্গির মশা তো সরকার বা বিরোধী চিনতে পারে না!” এর পরেই রাজ্য সরকারকে সরাসরি আক্রমণ করেন সূর্যবাবু। তিনি বলেন, “আপনারা ইতিমধ্যেই শুনেছেন যে, ডেঙ্গির সংক্রমণ নাকি উদ্বেগের কোনও বিষয় নয়। সরকার সব কিছুই করছে গায়ের জোরে। ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা হয়তো গায়ের জোরে ৪৯ থেকে ৭-৮-এ নামিয়ে আনবে!” রক্তপরীক্ষা নিয়ে অজয়বাবুর বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে সূর্যবাবু জানান, সরকারি পরীক্ষাগার থেকে রক্তপরীক্ষার রিপোর্ট পেতে ৬-৭ দিন লাগছে। এত দিনে ডেঙ্গি-আক্রান্ত কোনও মানুষ মারাও যেতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ওই চিকিৎসক-বিধায়ক।
আর মুলতুবি প্রস্তাব এনে এবং পঞ্চায়েত সংক্রান্ত একটি বিলের উপরে পৃথক ভাবে (বামেদের আনা সংশোধনীতে নয়) ভোটাভুটি চেয়ে বিধানসভার অন্দরে এ দিন থেকেই প্রথাগত ভাবে বিরোধী ভূমিকা পালন শুরু করে দিল কংগ্রেস। সেই সঙ্গে এফডিআই বা খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের প্রশ্নে তৃণমূলের ধর্নার পাল্টা মিছিলে নামছে তারা। আগামী ১ অক্টোবর দিল্লির যন্তর-মন্তরে যখন ধর্নায় হাজির থাকবেন স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী, তখনই কলকাতায় গাঁধী-মূর্তির পাদদেশ থেকে মমতার খাসতালুক হাজরা মোড় পর্যন্ত পর্যন্ত মিছিল করবেন প্রদেশ কংগ্রেসের সাংসদ-বিধায়ক-নেতারা। ওই মিছিল থেকে কংগ্রেস নেতারা মানুষকে বোঝাতে চান, এফডিআই-কে রুখলে এ রাজ্যে আর্থিক সঙ্কট তৈরি হবে। ওই মিছিলের দু’দিন আগে, ২৯ সেপ্টেম্বর মৌলালি যুব কেন্দ্রে দলের নেতা-কর্মীদের সহজ ভাবে এফডিআই বোঝানোর জন্য আলোচনাসভার আয়োজন করছেন প্রদেশ নেতৃত্ব। সে-দিন এফডিআই নিয়ে কংগ্রেসকর্মীদের বোঝানোর দায়িত্ব দুই অর্থনীতিবিদকে দেওয়া হয়েছে। এই দুই কর্মসূচির পরে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ প্রমুখকে এনে জেলায় জেলায় সভা করার ভাবনাও রয়েছে কংগ্রেসের। |