অন্য সংস্থায় ভাল কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হোটেলে নিয়ে গিয়ে এক মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ওই মহিলার নগ্ন ছবি এমএমএস-এর মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগরের চৌবেড়িয়া এলাকায় ওই ঘটনায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর মহিলা গোপালনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত দুই ব্যক্তি জ্যোতির্ময় মজুমদার ও গৌতম ঠাকুর পলাতক। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে মহিলার মেডিক্যাল পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “ওই মহিলা যাতে সামাজিক সম্মান নিয়ে এলাকায় থাকতে পারেন, সে জন্য প্রশাসনের তরফে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশকেও দ্রুত অভিযুক্তদের ধরতে বলা হয়েছে।”
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, এমএমএস-এর ছবির সূত্র ধরে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের ধরতে জোর তল্লাশি চলছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চৌবেড়িয়া এলাকার বাসিন্দা ওই মহিলা একটি চিট ফান্ড সংস্থায় এজেন্ট হিসাবে কাজ করেন। তাঁর স্বামী ভিন রাজ্যে ঠিকাশ্রমিকের কাজ করেন। তিন-চার মাসের ব্যবধানে বাড়ি আসেন।
দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে বড় মেয়ে বিবাহিত। ছোটটি মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ও ছেলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অভাবের সংসারে স্বামীর আয় যথেষ্ট না হওয়ায় ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ সামলাতে মহিলা ওই সংস্থার এজেন্ট হিসাবে কাজ শুরু করেন। কিন্তু এখানে উপার্জন তেমন ভাল না হওয়ায় অন্য কাজের খোঁজে ছিলেন তিনি। কাজের সূত্রেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় নিমতলা মাঠ এলাকার বাসিন্দা জ্যোতির্ময় ওরফে বাপির সঙ্গে। দিন কয়েক আগে বাপি তাঁকে একটি ভাল সংস্থায় কাজের সুযোগ করে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।
মহিলার অভিযোগ, গত ২ অগস্ট বাপি তাঁকে জানায়, যে সংস্থায় সে তাঁর চাকরির ব্যবস্থা করে দেবে নবদ্বীপে সেই সংস্থার মিটিং রয়েছে। সেখানে গেলে ওই দিনই তাঁর চাকরির বিষয়টি ‘ফাইনাল’ হয়ে যাবে। মহিলার কথায়, “ছেলেমেয়ের পড়ার খরচ আর সংসারের কথা চিন্তা করে বাপির সঙ্গে নবদ্বীপে যেতে রাজি হই। ১০ অগস্ট আমরা ট্রেনে রওনা হই।’’
পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে মহিলা জানিয়েছেন, নবদ্বীপে পৌঁছনোর পরে তাঁদের সঙ্গে গৌতমের দেখা হয়। গৌতমের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেয় বাপি। এর পরে তারা তাঁকে একটা হোটেলে নিয়ে যায়। হোটেলে কেন জিজ্ঞাসা করায় তারা তাঁকে বলে যে, হোটেলে ওই সংস্থার নামে ঘর বুক করা আছে। সংস্থার কর্তারা সেখানেই আসবেন। এর পরে ঘরে নিয়ে যাওয়ার পরে তাঁকে প্রথমে চা ও পরে ঠান্ডা পানীয় খেতে দেওয়া হয়। ওই সব খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁর মাথা ঘুরতে থাকে। তিনি বেহুঁশ হয়ে পড়েন। প্রায় দু’ঘণ্টা পরে তাঁর জ্ঞান ফেরে। তিনি বিছানায় নিজেকে বিবস্ত্র অবস্থায় দেখেন।
মহিলার কথায়, “বুঝতে পারি আমাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এর পরে ওরা আমাকে আমার বাড়িতে পৌঁছে দেয়। সেইসঙ্গে হুমকি দেয়, ঘটনার কথা কাউকে জানালে আমাকে ও ছেলেমেয়েদের মেরে ফেলবে।”
পুলিশ জানিয়েছে, এর কিছুদিন পরে মহিলা জানতে পারেন তাঁর নগ্ন ছবি তোলা হয়েছে এবং তা বিক্রি করা হচ্ছে। মোবাইলে ও কম্পিউটারেও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
মহিলা জানান, ইতিমধ্যে বাপি তাঁকে এসএমএস করে বিষয়টি ‘মিটমাট’ করার জন্য বলে। কিন্তু তিনি রাজি হননি। বদলে থানায় দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর কথায়, “এই ঘটনায় আমার সামাজিক সম্মান নষ্ট হয়েছে। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেছে। লজ্জায় এক সময় আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম। অভিযুক্তরা এই জঘন্য অপরাধের জন্য যাতে শাস্তি পায় সেই আশাটুকু নিয়ে বেঁচে আছি।” তাঁর অভিযোগ, বাপি ও গৌতম রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে রয়েছে বলে পুলিশ তাদের ধরতে পারছে না।
মহিলার আইনজীবী প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিচারক আগামী ১ অক্টোবর মহিলাকে আদালতে হাজির হতে বলেছেন। ওই দিন তাঁর গোপন জবানবন্দি নেওয়া হবে। ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকা গোপালনগর থানার ওসিকেও ওই দিন আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। |