বাহাত্তরেও স্লেটে স্বপ্ন আঁকেন বংশীধারী
ছেলেবেলা থেকেই আগ্রহ ছিল আঁকার বিষয়ে। কিন্তু অভাবের সংসারে সে সুযোগ আর হয়নি। কিন্তু ইচ্ছেটা ছিলই। তাই প্রবীণ বয়সে শিক্ষকতার জীবন থেকে অবসরের পর সেই ইচ্ছেই ফুটে উঠল স্লেটে, কাপড়ে। এই জীবনচর্যা বাহাত্তর বছরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বংশীধারী কুঁতির, যিনি রঙিন সুতো আর সূচের একের পর এক শিল্পকর্ম নিয়ে মেতে রয়েছেন তাঁর সৃষ্টিসুখে।
ঘাটালের গম্ভীরনগরের কামারপাড়ার বাসিন্দা বংশীবাবু জানান, এক বছর বয়সে বাবা বিজয়কৃষ্ণ কুঁতি মারা যান। নিত্য অভাবের সংসারে পড়ার খরচ জোগাতেই হিমসিম খেতেন মা রাধারানিদেবী। তাই তখন ইচ্ছা থাকলেও কোনও গুরুর কাছে আঁকা শেখা হয়ে ওঠেনি। ১৯৫৩ সালে ঘাটালের গম্ভীরনগর গাঁধী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের চাকরি পান বংশীবাবু। তাই আঁকার নেশায় স্কুলে অবসর সময়ে বা ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের ছবি আঁকাতেন তিনি। বংশীবাবুর কথায়, “সেই সময়ই মনে হয়েছিল, স্লেটে আঁকা ছবি খোদাই করা গেলে ভারি ভাল হয়। এরপরই পরীক্ষামূলকভাবে বাড়িতে স্লেটের উপর পেন্সিলে আঁকা বিদ্যাসাগরের ছবি পেরেক দিয়ে খোদাই করি। সেই শুরু।” স্কুলের শিক্ষক তথা স্থানীয় বাসিন্দা চণ্ডীচরণ সামন্ত বলেন, “প্রায় ষাটের দশকের কথা। তখন স্লেট-পেন্সিলই ছিল একমাত্র সম্বল। তাতেই রোজ নিয়ম করে ছাত্রছাত্রীদের ছবি আঁকার ক্লাস নিতেন।”
নিজের ‘আর্ট গ্যালারি’তে বংশীবাবু। —নিজস্ব চিত্র।
১৯৯৯ সালে স্কুল থেকে অবসর নেওয়ার পর ছাত্রছাত্রীদের আঁকা শেখানোর কর্তব্যই হয়ে দাঁড়িয়েছে নেশা। বাড়িতে আর্থিক স্বচ্ছলতা তেমন নেই। পেনসনের টাকায় সংসার চালিয়ে মাসে ছবি আঁকার জন্য গড়ে দেড় থেকে দু’হাজার টাকা খরচ করেন বংশীবাবু। স্লেটে খোদাই করে ও সাদা কাপড়ের উপর রঙিন সুতো দিয়ে শ’তিনেক ছবি এঁকে ফেলেছেন। সংবাদপত্রের কোনও ছবি দেখে বা নিজের ভাবনার রূপ অনায়াসে ফুটিয়ে তোলেন কাপড়ে, স্লেটে। শখ করে নিজের ছবি ভর্তি ঘরের নাম দিয়েছেন ‘আর্ট গ্যালারি’। সেখানে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ থেকে বিদ্যাসাগর, উত্তম কুমার থেকে সুচিত্রা সেন, শিশু দিবস, তিলোত্তমা কলকাতা এমনই নানা ছবি। রয়েছে কার্গিল যুদ্ধ থেকে গাইসালের ট্রেন দুর্ঘটনার মতো সাম্প্রতিক নানা ঘটনা। এই কাজে পাশে পেয়েছেন স্ত্রী কল্পনা, ছেলে দিব্যেন্দু ও দেবাংশুবিকাশকে।
বয়স হয়েছে, কমেছে দেখার ক্ষমতাও। কিন্তু মনের দেখা কখনও ফুরোয় না। বংশীবাবুও তাই বয়সের তোয়াক্কা না করে আজও মনের রঙ ফুটিয়ে তোলেন কাপড়ে, স্লেটে। অবসরের পর মেতে রয়েছেন নিজের ছবি ভর্তি ঘর ‘আর্ট গ্যালারি’ নিয়ে। সব শেষে বংশীবাবু বলেন, “যতদিন পারব ততদিন আঁকব। আমার আঁকা ছবি সরকারি ভাবে যদি সংরক্ষণের জন্য নেওয়া হয়, কোনও আপত্তি নেই।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.