হলদিয়া বন্দরে কাজ বন্ধ করল এবিজি
ঙ্গলবার থেকে ফের কাজ বন্ধ হয়ে গেল হলদিয়া বন্দরের দুই এবং আট নম্বর বার্থে। তবে এ বার তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামীদের বিক্ষোভের কারণে নয়। ওই দু’টি বার্থে মাল ওঠানো-নামানোর কাজে নিযুক্ত সংস্থা এবিজি কাজ বন্ধ করে দেওয়ায়। এবিজি সোমবারই ২৭৫ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করার নোটিশ দিয়েছিল। তার পর মঙ্গলবার সকালে পুরোপুরি কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সে সিদ্ধান্তের জেরে এ দিন বিক্ষোভ দেখান সংস্থায় কর্মরত শ্রমিকেরা। কাজ হারানো শ্রমিকেরাও যোগ দেন তাঁদের সঙ্গে।
তাদের বার্থে কম জাহাজ আসার ফলে লোকসান হচ্ছে, এই যুক্তিতে হলদিয়া ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল এবিজি। হাইকোর্টের নির্দেশে তারা মত বদলায়। তার পরেও কেন কাজ বন্ধ করার এই সিদ্ধান্ত?
সংস্থার সিইও গুরপ্রীত মালহির বক্তব্য, তাঁরা নিজে থেকে কাজ বন্ধ করেননি। বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, “গত সপ্তাহে ২ নম্বর বার্থে একটি জাহাজ আসার সময়ে কিছু বহিরাগত তাতে উঠে পড়ে। সোমবার শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পরে ফের বহিরাগতরা ঢুকে পড়ে বার্থে। বেশ কিছু জিনিস চুরি হয়ে গিয়েছে।”
এক দিকে শ্রমিক ছাঁটাই, অন্য দিকে এবিজি-র কাজ বন্ধ করার জেরে হলদিয়া বন্দরের পরিস্থিতিই জটিল হয়ে উঠল বলে সংশ্লিষ্ট মহলের মত। তাদের বক্তব্য, এই জটিলতা এমনিতেই ধুঁকতে থাকা বন্দরের ভবিষ্যৎকে আরও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেবে। দু’টি বার্থে কাজ বন্ধ হওয়ায় হলদিয়া বন্দরের সঙ্কট যে বাড়ল সেই আশঙ্কা গোপন করেননি বন্দর-কর্তারাও।
ছাঁটাই কর্মীদের বিক্ষোভ। - নিজস্ব চিত্র
মঙ্গলবার বন্দরের গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখান কাজ হারানো শ্রমিকরা। দুপুরে হলদিয়া থানায় যান তাঁরা। বিনা নোটিসে ছাঁটাই করা হয়েছে বলে আলাদা অভিযোগপত্র জমা দেন ২৩০ জন শ্রমিক।
হলদিয়ার এসডিপিও অমিতাভ মাইতি বলেন, “বেশ কিছু শ্রমিক এবিজি-র বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে ছাঁটাইয়ের অভিযোগ এনেছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। যে হেতু শ্রমিকদের বিষয়, তাই সহ-শ্রম আধিকারিককেও সব জানানো হবে।” তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী ‘‘কোনও মন্তব্য করব না” বলে প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান। যদিও তৃণমূল সূত্রে খবর, যে ভাবে বিনা নোটিসে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বকেয়া পাওনাগন্ডা জমা দিয়ে শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হয়েছে, সেটা মানা হবে না।
হলদিয়া বন্দরের ডেপুটি ম্যানেজার অভয়কুমার মহাপাত্র বলেন, “আমরা এবিজি-কে শ্রমিক ছাঁটাই করতে নিষেধ করেছিলাম। এখনও আমাদের কাছে ছাঁটাই সংক্রান্ত কোনও চিঠি আসেনি।” তবে এবিজি-র সিইও-র মন্তব্য, “ছাঁটাই শ্রমিকদের কেউ পুলিশের কাছে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন কী না, তা জানা নেই। তবে এ নিয়ে চিন্তিত নই। কারণ, আইনকানুন মেনেই সব করেছি।”
বাড়তি শ্রমিক নিয়ে কাজ করার জন্য তাঁদের লোকসানের বহর বাড়ছে এবং সে জন্যই এই ছাঁটাই বলে সোমবারই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান এবিজি কর্তৃপক্ষ। কাজ হারানো শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, সোমবার রাত থেকেই মোবাইলে এসএমএস করে ছাঁটাইয়ের কথা জানানো হয়। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেওয়ার কথাও এসএমএস মারফৎই জানতে পারেন তাঁরা। তা সত্ত্বেও এ দিন সকালে তাঁরা কাজে এসেছিলেন। কিন্তু দেখেন, ২ এবং ৮ নম্বর বার্থে পণ্য খালাসের কাজই হচ্ছে না। সংস্থার অফিস ঘরটিও বন্ধ। এর পরই ছাঁটাই শ্রমিকেরা বিক্ষোভ দেখান। রাজীব মান্না, অমর জানাদের কথায়, “আগে থেকে নোটিস না দিয়ে আমাদের ছাঁটাই করেছে। ১০ বছরের চুক্তি থাকলেও মাত্র আড়াই মাসের বেতন দিয়ে আমাদের পথে বসানো হয়েছে।” শ্রমিকদের দাবি, ছাঁটাই যদি করতেই হয় তবে ১০ বছরের যাবতীয় প্রাপ্য তাঁদের দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইনের সাহায্য নেওয়া ছাড়া প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে যাবেন বলেও তাঁরা জানান। ২০১০ সাল থেকে হলদিয়া বন্দরের ২ এবং ৮ নম্বর বার্থে পণ্য খালাসের কাজ করছে এবিজি। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পণ্য খালাসের কাজ করে এই সংস্থা। এবিজি’র দাবি, কাজের জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৪৫০ জন শ্রমিক। কিন্তু শ্রমিক ইউনিয়নগুলির চাপে পড়ে তারা ৬৫০ জন বেতনভুক শ্রমিক নিয়োগে বাধ্য হন। তা ছাড়াও ৩৫০ জন ঠিকা শ্রমিক ওই দু’টি বার্থে কাজ করতেন। এবিজি-র দাবি, বাড়তি শ্রমিক নিয়ে কাজ করায় একেই বিস্তর লোকসান হয়েছে। উপরন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রুতিমতো জাহাজ তাদের বার্থে দিতে পারেনি। ফলে, দু’বছরে ৩৪ কোটি টাকা লোকসান হয়। বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল। সম্প্রতি হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, ২ এবং ৮ নম্বর বার্থে বেশি জাহাজ নোঙর করাতে হবে। এবিজির অভিযোগ, এর পর থেকেই শ্রমিক সরবরাহকারী এক প্রতিযোগী সংস্থার দু’শো শ্রমিক কাজে বাধা দিচ্ছে। এই অবস্থায় কাজ চালানো মুশকিল।
তৃণমূল সূত্রের খবর, এবিজি যে সব শ্রমিককে ছাঁটাই করেছে তাঁরা তৃণমূল ইউনিয়নেরই সদস্য। আবার এবিজি-কে কাজ দেওয়ার প্রতিবাদে যাঁরা আন্দোলন করছেন তাঁরাও তৃণমূলের অন্য ইউনিয়নের সদস্য। যাঁরা কাজ হারিয়েছেন তাঁরা দুর্গতির জন্য শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামীদের জঙ্গি আন্দোলনকেই দায়ী করেছেন। তৃণমূলের দুই ইউনিয়নের লড়াই কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই দেখার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.