ক্যানসারকে পরাস্ত করে যুবরাজ সিংহের মাঠে ফিরে আসার ঘটনা এখন ভারতীয় খেলাধুলোর ইতিহাসে রূপকথায়! গত কয়েক মাসে যা বিশ্ব ক্রীড়া জগতেই আলোড়ন তুলেছে।
সে রকমই আর এক ‘রূপকথা’ লিখতে চান আর্জেন্তিনীয় ফুটবলার লুসিয়ানো গাইয়েত্তি। ফুটবল-প্রধান দেশের বাসিন্দা হওয়ায় যুবরাজ সিংহের নামই হয়তো শোনেননি তিনি। তবে প্রেরণা তিনি নিতে পারেন ইভান ক্লাসনিক, এরিক আবিদাল, শন ইলিয়টের মতো তারকাদের জীবন থেকে। যাঁরা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পর সফল প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছেন নিজের নিজের খেলায়।
গাইয়েত্তির সমস্যা ক্যানসার নয়, কিডনি-র। তাঁর দু’টি কিডনিই অকেজো হয়ে যায় বছর দুই আগে। ফুটবলকে চিরবিদায়ও জানিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু ফুটবলের প্রতি ভালবাসা ও আবেগ বাধ সাধল তাঁর অবসর জীবনে। ফুটবল খেলার ইচ্ছে এতটাই অদম্য হয়ে পড়ে যে গাইয়েত্তি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করাবেন। মাঠে তাঁকে ফিরতেই হবে! তাই আগামী ২ অক্টোবর তাঁর শরীরে প্রতিস্থাপিত হবে আর্জেন্তিনীয় এই রাইট উইঙ্গারের বাবার একটি কিডনি। ৩২ বছরের গাইয়েত্তির কথায়, “আমার বাবা নিজে খেলাধুলো করতেন। তাই বাবার কিডনি একশো শতাংশ সুস্থ। সব কিছু ঠিকঠাক চললে আমি অস্ত্রোপচারের একমাসের মধ্যে ট্রেনিং শুরু করতে চাই। ফিরতে চাই দাপটের সঙ্গে।” |
লুসিয়ানো গাইয়েত্তি: ফিরতে চান দাপটের সঙ্গে। |
এ ভাবেও ফিরে আসা যায়
• এরিক আবিদাল (বার্সেলোনা ও ফ্রান্স) লিভার প্রতিস্থাপন
• ইভান ক্লাসনিক (মেইনজ ও ক্রোয়েশিয়া) কিডনি প্রতিস্থাপন
• শন ইলিয়ট (এনবিএ তারকা) কিডনি প্রতিস্থাপন |
|
২০১০-এর ফেব্রুয়ারিতে ডাক্তাররা গাইয়েত্তিকে জানিয়ে দেন তাঁর দু’টো কিডনিই আর কাজ করছে না। সে বছর সেপ্টেম্বরেই জীবন থেকে সরিয়ে ফেলেন ফুটবল। অথচ তাঁর কেরিয়ারের শুরুটা হয়েছিল গাব্রিয়েল বাতিস্তুতা, এর্নান ক্রেসপোদের পাশে খেলে। জাতীয় দলের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলার আগেই অবশ্য ১৯৯৯-এ তাঁর শরীরে বাসা বাঁধে এক রকম ভাইরাস। ক্রমশ ক্ষতি হতে থাকে তাঁর কিডনির। সে বছরই লাতিন আমেরিকার যুব দলের প্রতিযোগিতায় আট ম্যাচে ন’গোল করে টেক্কা দিয়েছিলেন রোনাল্ডিনহোর মতো ভবিষ্যতের তারকাকে। আর্জেন্তিনার হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ১৩টি। কিন্তু ইতালি থেকে স্পেন, ক্লাব ফুটবলে দাপিয়ে খেলেছেন। পার্মা, নাপোলি, জারাগোজা, আতলেতিকো মাদ্রিদ এবং গ্রিসের অলিম্পিয়াকোসে। খেলা ছাড়ার সময় তিনি ছিলেন গ্রিসের ক্লাবটিতেই।
গাইয়েত্তির সামনে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পর ফুটবল মাঠে ফেরার দু’টো জ্বলন্ত উদাহরণ মজুত। একজন ফ্রান্স ও বার্সেলোনার এরিক আবিদাল। আর একজন ক্রোয়েশিয়ার ইভান ক্লাসনিক। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, আবিদাল যকৃত প্রতিস্থাপনের পর ফের ফুটবল খেলতে পারেন। তবে ক্রোট স্ট্রাইকার ক্লাসনিক এ ব্যাপারে গাইয়েত্তির আদর্শ অনুপ্রেরণা হতে পারেন। কিডনি-প্রতিস্থাপনের পর শুধু মাঠে ফেরাই নয় দাপটের সঙ্গে খেলেছেন ক্লাবের হয়ে। এমনকী দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেও।
২০০৭ জানুয়ারিতে প্রথমে মায়ের একটি কিডনি তাঁর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। যা ‘ম্যাচ’ না করায় ফের অস্ত্রোপচার করতে হয় ওই বছরেরই মার্চে। এ বার কিডনি দেন তাঁর বাবা। ছ’মাস পর সেপ্টেম্বরেই অনুশীলন শুরু করে দেন ক্লাসনিক। পরের বছর ইউরো ২০০৮-এ দু’টি গোলও করেছিলেন। জার্মানির ওয়ের্ডার ব্রেমেন, ফ্রান্সের নান্তেস এবং ইপিএলের বোল্টন ওয়ান্ডারার্সে খেলার পর এ বছর চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন বুন্দেশলিগার মেইনজ-এর সঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্রের বাস্কেটবল তারকা শন ইলিয়টও ফিরে এসেছিলেন কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টের পর। যা ছিল এনবিএ-র ইতিহাসে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পর প্রথম ‘কাম ব্যাক’।
যুবরাজ বা ক্লাসনিকের মতো সফল প্রত্যাবর্তন করবেন কি না সেটা সময় বলবে। কিন্তু ফিরে আসার অদম্য ইচ্ছায় গাইয়েত্তি ইতিমধ্যেই হারিয়ে দিয়েছেন কিডনির অসুখ। |